নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ (বিশেষ প্রতিবেদক) : শহরের খানপুরে অবৈধ ঘোষিত ইমন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গর্ভবতীর রক্ত পরীক্ষায় ভুল রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবাদে ওই সেন্টারে বিক্ষোভ দেখালেন রোগী ও তার স্বজনরা। রবিবার (২১ মে) দুপুরে বার একাডেমী স্কুলের উল্টো দিকে অনুমোদনহীন ওই প্রতিষ্ঠানটিতে এ ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনা ছাড়াও এরআগে ভ্রাম্যমান আদালতে প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা করে নিষেধ করলেও অনিয়মেই বহাল রয়েছে ইমন ডায়াগনস্টিক।
ভুক্তভোগী সে গর্ভবতী ক্ষুব্দ হয়ে জানান, আমরা মরে গেলেও এতে কার কি আসে যায়। উনাদের তো কিছু হয় না। আজ যদি আমি আমার রক্তের গ্রুপ না জানতাম অথবা ভুল রিপোর্টটি আমার চোখে না ধরা পড়তো, তাহলে এভাবেই প্রতিটা কাগজে ব্লাড গ্রুপ দেয়া থাকতো। সবশেষে হয়তো এ রিপোর্টের ভরসায় আমাকে রক্ত পুশ করা হলেও আমাকে মৃত্যুবরণ করতে হতো।
তিনি জানান, আমার রক্তের গ্রুপ ও’ পজেটিভ, কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা করে পেয়েছে এবি’ পজেটিভ। এ ঘটনার কালে সাংবাদিকরা উপস্থিত হলে পূণরায় রক্ত পরীক্ষা করা হলে ও’ পজেটিভ পাওয়া যায়। এমতাবস্থায় হতভম্ব হয়ে পড়ে আশে পাশে থাকা রোগীরাও।
নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নতুন আইলপাড়া এলাকার বসিন্দা ওই রোগী বলেন, আমাদের মত গরীবদের সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসকরা বাধ্য করে এসব জায়গায় রিপোর্ট করাতে। তা না হলেও তো আমরা সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার জন্যই আসি। সরকারী হাসপাতালের কাছাকাছি হওয়ায় এসব ঠিকানায় তারা পাঠায়।
জানা গেছে, স্থানীয় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে একসময় কর্মরত ছিলেন খানপুর এলাকার বাসিন্দা রবিন। র্দীঘদিন কাজ করার পর এখন তিনি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। ছোট ভাইয়ের নামে মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানের নাম দেয়া হয়েছে ইমন ডায়াগনস্টিক সেন্টার। নারায়ণগঞ্জের ৩শ’ শয্যা সরকারী হাসপাতালের নিকটে বার একাডেমী স্কুলের উল্টো দিকেই ছোট ছোট কক্ষেই চলছে বিভিন্ন টেস্ট ও রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা।
সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, নীচতলার ভাড়া বাসায় চলছে এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। বসার জায়গা খালি না থাকায় বাহিরে দাঁড়িয়েই বেশ কয়েকজন রোগী বিভিন্ন টেস্ট ও চিকিৎসকের সাথে সাক্ষাতের জন্য অপেক্ষা করছে। ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখ উল্টে যাওয়ার মত অবস্থা ! মাত্র ৮ থেকে ১০ ফুটের কক্ষে রিসিপশন ও আগত রোগীদের বসার স্থান। একটু সামনেই ৪ থেকে ৬ ফুটের মধ্যে চিকিৎসকের বসার স্থান এবং রোগীর চিকিৎসার জন্য একটি বেড। তার পাশেই রয়েছে কম্পিউটার ও প্রিন্টার। নুন্যমানের যে প্রিন্টার দিয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোকদের বের করতে দেখা যায় আল্ট্রাসনোগ্রামসহ বিভিন্ন রিপোর্টের কাগজ! আরকেটু সামনে এগুলেই ছোট অপর কক্ষে দেখা মিলবে অপরিচ্ছন্ন ল্যাব। যেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রক্ত পরীক্ষার নানা উপকরণ। এছাড়াও চিকিৎসকের স্বাক্ষরিত প্যাডে প্্িরন্ট হচ্ছে রিপোট ও চিকিৎসকের পরীক্ষা করার পরার্মশের কাগজ!
এ নিয়ে রক্ত পরীক্ষার র্নিনয়ক ব্যক্তি জানান, আমি যে সেম্পলটা পেয়েছি সেটা এবি পজেটিভ। হয়তো কালেকশনে ভুল করেছে। তাই ও পজেটিভের জায়গায় আমার পরীক্ষায় এবি পজেটিভ আসছে। তারা উলট পালট করায় এমন হয়েছে। তবে আসলে সাবধান হওয়া দরকার। তিনি জানান, ডিপ্লোমা করে তিনি এ পেশায় আছেন। এই প্রতিষ্ঠান ছাড়াও তিনি পার্শ্ববর্তী ইউনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে আরো একটি প্রতিষ্ঠানেও পরীক্ষা নিরিক্ষার কাজেই নিয়োজিত রয়েছেন।
এ বিষয়ে কথা হলে ইমন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক রবিন বলেন, ভুল হবেই। মানুষ মাত্রই ভুল। আজই প্রথম হয়েছে। এমন হয় না। এখন যেহেতু হয়েই গেছে, ভুল তো আমার শিকার করতেই হবে।
উল্লেখ্য, এরআগেও প্রশাসনের পক্ষে এ প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। কাগজপত্র না দেখাতে পারায় সর্বনি¤œ ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে সতর্ক করা হয়েছিল। এবং কাগজবিহীন সেখানে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা না করার জন্য নিষেধ করা হয়েছিল। তারপরেও কোন ভ্রুক্ষেপ নেই তাদের।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান বলেন, ইমন ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে আগেও নিষেধ করা হয়েছে। এমনকি জরিমানাও হয়েছিল। আমি এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে দ্রুতই ব্যবস্থা নিবো। তাছাড়া অবৈধ প্রতিষ্ঠানের তালিকা আমরা বিভিন্ন সংস্থ্যায় পাঠিয়েছি।