নারায়ণগঞ্জে বাইকারদের কুকুর আতংক

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত লিংকন ) : সড়ক থেকে মহল্লা সর্বত্রই এখন বৃদ্ধি পেয়েছে বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব। সকল স্থানেই রয়েছে এদের অবাধ বিচরণ ও দল বেধে মহড়া। আর তাদের মহড়ায় সড়কে চলাচল অবস্থায় বড় দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন মোটর সাইকেল আরোহী (বাইকাররা)। এতে করে নগরজুড়ে বাইকারদের মাঝেও বিরাজ করছে কুকুর আতংক।

সম্প্রতি এসব কুকুরে মহড়ার মাঝে পড়ে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন এক সাংবাদিক। চলন্ত মোটর সাইকেলের সামনে আসা কুকুরের জন্য সড়কে ছিটকে পড়ে গিয়ে ভেঙ্গে গেছে হাতের হাড়। যা জোড়া লাগানোর জন্য করতে হবে সার্জারী অপারেশন। যা নিয়ে এখন চিকিৎসাসেবা নিতে ভোগান্তি পোহাচ্ছে পরিবারটিও। এছাড়াও শহরের আল্লামা ইকবাল রোডে কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায় এক দল বেওয়ারিশ কুকুর। যাদের আচড়ে আহত হয় দুই জন। এরা সকলেই বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত।

এদিকে, সড়কে বের হলেই দেখা মেলে বেওয়ারিশ কুকুর দল বেধে হাঁটছে। যার কারণে বিশেষ করে ছোট যান হিসেবে সাইকেল ও মোটর সাইকেলে থাকা আরোহীরা বিপদগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। যেকোন মুহুর্তেই তারা আক্রমন চালাচ্ছে। নতুবা দৌড়ে যেতে গিয়ে তাদের যানের চাকার সামনে পড়ে নিজে আহত হচ্ছে এবং ছোটযানে থাকা আরোহীদের মারাত্মক আহত করছে।

অন্যদিকে, এসব কুকুরের উপদ্রবের কারণে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। পথচারি, শিশু, নারী, বৃদ্ধসহ কাউকেই ছাড় দিচ্ছে না এসব পশু। বিশেষ করে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের কাছে সবচেয়ে ভয়ংকর বেওয়ারিশ কুকুর। দিন কিংবা রাত সব সময়ই সড়ক বা বাড়ির সামনে দেখা মিলে এসব কুকুরের।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে কুকুরের কামড় খেয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যাটা বেড়েছে। সকাল বিকাল রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসছেন হাসপাতালে। আর এ চিকিৎসার জন্য বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল ১শ’ শয্যা (ভিক্টোরিয়া) হাসপতাল কর্তৃপক্ষও হিমশিম খাচ্ছে। শুধুমাত্র নারায়ণগঞ্জ ১৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালেই (ভিক্টোরিয়া) কুকুরের কামড় ও জলাতঙ্ক রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চলে ভ্যাকসিন কার্যক্রম। এ সময়ের মধ্যে হাসপাতালে গেলে সরকারি ভ্যাকসিন বিনামূল্যে পেয়ে থাকেন রোগীরা। তবে দুপুর আড়াইটার পর কিংবা রাতে চিকিৎসা নিতে গেলে রোগীদের বাইরের ফার্মেসি থেকে ভ্যাকসিন কিনে নিতে হচ্ছে।

তাছাড়া, জখমের ধরণ অনুযায়ী রোগীদের দুটি টিকা প্রদান করা হয়। সামান্য ক্ষত হলে, সেখান থেকে রক্ত পড়লে র‌্যাবিস ভ্যাকসিন। যেটি হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমানে আছে। অন্যদিকে ক্ষত বেশি হলে, একই সাথে বেশি রক্ত পড়লে ইআরআইজি ভ্যাকসিন। তবে অনেক সময়ই এসব

ভ্যাকসিন নিয়েও শংকায় থাকতে হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছে, আক্রান্তদের তিনভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়।
ক্যাটাগরি-১ : যাদের কুকুর কেটেছে কিংবা শরীরের সাথে কুকুরের লেজের বাড়ি লেগেছে বা কুকুরের শরীরের কোনো লোমশ অংশ আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের সংস্পর্শে এসেছে অথবা কুকুরকে খাওয়ানোর সময় শরীরে কুকুরের লালা লেগেছে কিন্তু কোনো ক্ষত এবং রক্তপাত হয়নি, কেবল তারাই

ক্যাটাগরি-১ এর অর্ন্তভুক্ত। এ ধরনের রোগীর জলাতঙ্কের টিকা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। আক্রান্ত স্থান শুধু সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেললে কিংবা এন্টিসেপটিক দ্রবণ দিয়ে পরিষ্কার করলেই হবে।

ক্যাটাগরি-২: যদি ক্ষতস্থানে কুকুরের আঁচড় বা কামড়ের দাগ দেখা যায় কিন্তু ক্ষতস্থান থেকে কোনো রক্তপাত না হয়, তাহলে তারা ক্যাটাগরি-২ এর অন্তর্গত। এসব আক্রান্ত ব্যক্তিকে ক্ষতস্থান পরিষ্কারের পাশাপাশি অবশ্যই জলাতঙ্কের টিকা নিতে হবে। জলাতঙ্কের এ টিকা চামড়ার নিচে কিংবা মাংসে দেওয়া যায়। কুকুর আঁচড় বা কামড় দেওয়ার ৫ দিনের মধ্যে এ টিকা নিলে সবচেয়ে ভালো হয়। কুকুর দ্বারা আক্রান্ত গর্ভবতী নারীকেও এটি দেওয়া যাবে।

ক্যাটাগরি-৩: কুকুরের আঁচড় বা কামড়ে যদি রক্ত বের হয়, দাঁত বসিয়ে দেয় কিংবা মাংস কেটে নিয়ে গেলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ক্যাটাগরি-৩ এর আওতায় নিয়ে আসা হয়। আবার ক্ষত যদি মাথা, গলা, বুক বা কাঁধে হয়; তবে সেটিও ক্যাটগরি-৩ এর অর্ন্তগত হবে। ক্যাটাগরি-৩ এর ক্ষেত্রে ক্ষতস্থান যথাযথভাবে পরিষ্কার এবং জলাতঙ্কের টিকার পাশাপাশি হিউম্যান র‌্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিউলিন ইনজেকশনও অবশ্যই দিতে হবে ।
উল্লেখ্য, বেওয়ারিশ কুকুরের কামড়ে আহত হয়ে প্রায় হাজারের বেশী রোগী হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে নারী-পুরুষের পাশাপাশি শিশুরাও রয়েছেন। যেখানে বাইক রাইডারদেরও অনেকেই সড়কে পড়ে গিয়ে হাসপাতালে এসে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। আবার কেউ কেউ বেসরকারী সাস্থ্যকেন্দ্র থেকে সেবা নিয়েছেন।

এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান জানান, নারায়ণগঞ্জ ১শ’ শয্যা হাসপাতাল কুকুরে কামড়ে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তত রয়েছে। ভ্যাকসিনেরও কোন সংকট নাই। তাছাড়া সাপের কামড়েও যদি আক্রান্ত থাকে তাদের জন্যও চিকিৎসা দিয়ে থাকি। বরং সাপের কামড়ে আক্রান্ত রোগী তেমন না পাওয়ায় অনেক সময় ঔষধের বা ভ্যাকসিনের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তারপরেও আমরা মজুদ রাখি।

add-content

আরও খবর

পঠিত