লাশ রাখা হয় খাটের নীচে, পরে ঝোপে ফেলে দেয় : এএসপি চাইলাউ
নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ (নিজস্ব প্রতিবেদক) : বন্দরে সৎ ভাই, ভাবী ও সৎ ভাইয়ের শাশুড়ীর হাতে খুনের শিকার হলো শিশু সৌরভ। এ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকায় তিনজনকেই গ্রেপ্তার করেছে জেলা পুলিশ। গতকাল দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাই লাউ মারমা। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো : শিশু সৌরভের সৎ ভাই সানি (১৯), সৎ ভাইয়ের স্ত্রী আয়শা আক্তার (১৮), শাশুড়ি শিল্পী বেগম (৩৫)।
তিনি জানায়, শিশু সৌরভ এরআগে নিখোঁজ থাকলেও পরিবার কোন জিডি না করায় সন্দেহ তৈরী হয়। নিখোঁজের ৪৮ ঘন্টা পর উপজেলার কুড়িপাড়া এলাকার ভাড়াটিয়া বাসার বাথরুমের পাশে কচুর জঙ্গলে তার লাশ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে খুনের ঘটনায় বন্দর থানায় মামলা রজু হলে তাদের এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা হত্যার পরিকল্পনা, হত্যা ও লাশ গুমের কথা স্বীকার করেছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, নিহতের সৎ ভাই সানি, ভাবি আয়েশা আক্তার ও সৎ ভাইয়ের শাশুড়ি শিল্পী বেগম মিলে পরিকল্পনা অনুযায়ী শ্বাসরোধে এই হত্যাকান্ড সংঘটিত করে। পরে লাশ গুম করার উদ্দেশে শিল্পী বেগমের খাটের নিচে লুকিয়ে রাখে। রাতের আঁধারে বাড়ির পাশে কচু ক্ষেতের একটি ঝোপে লাশটি ফেলে দেয়া হয়।
হত্যাকান্ডের কারণ উল্লেখ করে অপরাধীদের ভাষ্য অনুযায়ী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, সাত মাস আগে সানি প্রেম করে আয়েশা আক্তারকে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকে তারা একই ভাড়া বাড়িতে বসবাস করে আসছিল। শিশু সৌরভ দিনে রাতে বিভিন্ন সময় ভাই ও ভাবিকে বিরক্ত করতো ও তাদের সাথে দুষ্টামি করতো। এ কারণে তারা বিরক্ত ছিল। এই বিরক্তের বিষয়টি তারা শাশুড়িকে জানায়। তখন শাশুড়ি তাদের বলে, এভাবে চলতে থাকলে তো তোমরা সংসার করতো পারবে না। ফলে তারা সৌরভকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
পরে মঙ্গলবার ৪ এপ্রিল সকাল ৯টায় সৌরভ তার মায়ের সঙ্গে কর্মস্থলে দেখা করে বাড়িতে চলে আসে। এ সময় বাড়ির অন্য ভাড়াাটিয়ারা কাজের জন্য বাড়ির বাইরে ছিল। এই সুযোগে ফাঁকা পেয়ে সৎ ভাই সানি সৌরভকে শাশুড়ি শিল্পী বেগমের ঘরে ডেকে নেয়। সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে সেখানে শিল্পী বেগম তার ঘরে সৌরভকে গলা চেপে ধরে ও সানি পা চেপে ধরে। এ সময় ঘরের বাইরে পাহারা দেয় সৎ ভাইয়ের স্ত্রী আয়েশা। পরে শাশুড়ির ঘরের খাটের নিচে লাশ লুকিয়ে রাখে। ৫ এপ্রিল দিবাগত রাত ১টার দিকে বাড়ির অদূরে কচু ক্ষেতে ঝোপে লাশটি ফেলে দেয়। পরের দিন দুপুরে দুর্গন্ধ পেয়ে লাশের সন্ধান মেলে।
উল্লেখ্য, এরআগে নিখোঁজের তিনদিন পর সাত বছরের শিশু সৌরভের লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার কুঁড়িপাড়া এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। তখনই নিহত সৌরভের মা গার্মেন্টস কর্মী কুলসুম জানিয়েছিলেন, পারিবারিক বিষয়ে সৌরভের সৎ ভাই সানি ও তার স্ত্রীর মধ্যে প্রায় সময় ঝগড়া বিবাদ হতো। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। গত মঙ্গলবার সকাল নয়টায় কুলসুম কাজে চলে যান। ওইদিনের পর থেকে শিশু সৌরভের আর কোন হদিস পাচ্ছিল না।