নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নাসিম ওসমান সেতু হিসেবে নামকরণকৃত নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর উপজেলাকে সংযোগকারি তৃতীয় শীতলক্ষা সেতু এখন দৃশ্যমান। সেপ্টেম্বরেই অন্যান্য কাজ শেষ হচ্ছে, অক্টোবরেই উন্মুক্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন সেতুর প্রকল্প পরিচালক। শুধু অপেক্ষা উদ্বোধনের। এরপরেই ব্রীজের উপর দিয়ে যানচলাচল শুরু হবে। সেতুটি উদ্বোধন হলে দক্ষিনবঙ্গ থেকে চট্রগ্রামের দিকে যাওয়া যানবাহনকে ঢাকা বা নারায়ণগঞ্জ শহরে ঢুকতে হবেনা। সেতুটি পদ্মা এক্সটেনশন সেতু হিসেবে কাজ করবে।
শীতলক্ষা নদীর পূর্ব পারের বন্দর উপজেলার মদনগঞ্জ আর পশ্চিম পাড়ের নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সৈয়দপুরের মধ্যে নির্মিত হয়েছে নাসিম ওসমান সেতু। বর্তমানে শীতলক্ষা নদীর বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত খেয়াঘাটের খেয়া নৌকাগুলি মানুষের পারাপারের প্রধান উপায়।
সেতুর অদূরের সৈয়দপুর খেয়াঘাটে কথা হলো গার্মেন্ট শ্রমিক তানিয়া, ফারজানা ও মরিয়মের সাথে। তারা তিনজনই মদনগঞ্জের লক্ষার চরে থাকেন। প্রতিদিন সকালে পায়ে হেঁটে গুদারাঘাট আসেন। এরপর নদী পার হয়ে এপারের একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতে যান। তানিয়া, ফারজানা ও মরিয়ম জানান, নদীতে এখন জাহাজের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে, প্রায়ই দূর্ঘটনা ঘটে। এ বছরের গত ২০ মার্চ কার্গো জাহাজের ধাক্কায় নদীতে একটি লঞ্চ ডুবে যায়। একই সময় কাছাকাছি তাদের নৌকাটিও ছিলো। অল্পের জন্য তাদের নৌকা জাহাজের ধাক্কা থেকে রক্ষা পায়। নদীতে দূর্ঘটনার কারনে নদী পারপারের সময় তারা আতঙ্কে থাকেন। বিশেষ করে ঝড় বৃষ্টির দিনে যেনো প্রাণ হাতে নিয়ে নদী পার হন। ব্রীজ চালু হলে তারা ব্রীজের উপর দিয়ে যাতায়াত করতে পারবেন। তখন আর এই দূর্ঘটনার আশংকা থাকবেনা।
তবে সেতুটি স্থানীয় প্রেক্ষিতের চাইতে জাতীয় প্রেক্ষিতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বন্দরের নাট্যকর্মী ইউসুফ আতিক মানিক। তিনি জানান, আগে মাওয়া হয়ে দক্ষিন বঙ্গ থেকে অনেক যানবাহন হয় ঢাকার পোস্তগোলা ব্রিজ হয়ে যাত্রাবাড়ি হয়ে চট্রগ্রামের দিকে যেতো। অথবা নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া, সাইনবোর্ড হয়ে চট্রগ্রামের দিকে যেতো। এখন পদ্মা সেতু দিয়ে আসা যানবাহনকে আর পঞ্চবটির বিসিক শিল্প নগরী, পঞ্চবটি মোড়, চাষাড়া মোড়, সাইনবোর্ড, চিটাগাং রোডের মোড়ের জ্যাম কিংবা পোস্তগোলা, শনির আখড়ার জ্যাম পার হতে হবেনা। এদের ঢাকা বা নারায়ণগঞ্জ শহরেই ঢুকতে হবেনা। এগুলি নাসিম ওসমান ব্রীজ হয়ে মদনপুর দিয়ে চট্রগ্রামের দিকে চলে যেতে পারবে। এতে এসব যানবাহন কম সময়ে গন্তব্যে পৌছুতে পারবে। অন্যদিকে এসব যানবাহনের কারনে নারায়ণগঞ্জ শহরের উপর যে চাপ পরতো সেটা কমে যাবে।
প্রকল্পটি একনেকে ২০১০ সালের নভেম্বরে অনুমোদিত হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি সেতু নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন। এবছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ করার নির্ধারিত সময়। তবে নির্ধারিত সময়ের তিন মাস আগেই সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করে এটি চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে বলে জানান সেতুর প্রজেক্ট ডিরেক্টর (পিডি) শোয়ায়েব আহমেদ। তিনি জানান, সেতুর ৯৭ ভাগ নির্মাণ কাজ শেষ। শুধু সেতুর টোল প্লাজা ও নদীর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের শেষ দিকের কাজ বাকি রয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার ও সৌদি উন্নয়ন তহবিল (এসএফডি) এর অর্থায়নে এ সেতু নির্মিত হয়েছে। সেতুটি নির্মাণে ৬০৮.৫৬ কোটি টাকা ব্যায় হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের তহবিল ২৬৩.৩৬ কোটি টাকা, সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট এর ৩৪৫.২০ কোটি টাকা। সেতুটি ১ হাজার দুইশত চৌত্রিশ দশমিক পঞ্চাশ মিটার দীর্ঘ। সেতুতে মোট স্প্যান রয়েছে আটত্রিশটি। এর মধ্যে মূল নদীর উপর স্প্যান পাঁচটি এবং নদীর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে তেত্রিশটি স্প্যান রয়েছে। চার লেনের মূল ট্রাফিক লেন এবং অটোরিক্সা, রিকশা, ভ্যানগাড়িসহ ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য দুই লেনসহ সেতুটি মোট ছয়লেন বিশিষ্ট। ফুটপাতসহ সেতুটির প্রশস্থতা বাইশ দশমিক পনের মিটার। এছাড়াও সেতু এলাকায় ছয় লেন বিশিষ্ট টোলপ্লাজা এবং দেড় কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।