এবার বিএনপি রিজভির মামলায় ডিবির কনক, এসপিসহ ১৫০জন অভিযুক্ত

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ভ্রাম্যমান প্রতিবেদক) : নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে শাওন রাজা নামের যুবক নিহতের ঘটনায় আদালতে মামলার আবেদন করা হয়েছে। রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান মোল্লার আদালতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বাদী হয়ে এ মামলার আবেদন করেন।  এতে অভিযুক্তের তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জের এস.পি, এ.এস.পি, ও.সি, এস.আই ও কন্সটেবলসহ অজ্ঞাতনামা ১৫০জন।।

মামলার আর্জিতে ডিবির এস আই মাহফুজুর রহমান কনককে প্রধান আসামী করা হয়েছে।ক্রমান্বয়ে অপর বিবাদীরা হলেন  সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম মোস্তফা রাসেল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক অঞ্চল) নাজমুল হাসান, সদর মডেল থানার উপ পরিদর্শক কামরুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) তারিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আমীর খসরু, পুলিশের কনস্টেবল শাহরুল আলম, সোহাগ, আরিফ দেওয়ান, ফেরদৌস দেওয়ান, সেলিম, রিপন, যুগল, মামুন, রিয়াজ, হাফিজ, সহকারী উপ পরিদর্শক ইকবাল হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, পুলিশের কনস্টেবল জাকির হোসেন, নাঈম, রাকিব, আনিস, সাইদুল, এএসআই সোহরাব, পুলিশ সদস্য ইনজামামুল, রাসেল, খলিলুর রহমান, মোহসিন, মোস্তাকিম, শাহাদাৎ, ফখরুল, আরিফ দেওয়ান, দীপক সাহা, শাহীন, ফরিদ উদ্দিন, মুরাদুজ্জামান, শাহীন, কবির হোসেন, মান্নান, রুবেল, সোহাগসহ ১৫০জন অজ্ঞাতনামা।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আসার পথে আসামিরা সরকারি দলের ইন্ধনে উদ্দেশ চারিতার্থ করার লক্ষে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। এক পর্যায়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী জড়ো হতে শুরু করলে তারা নিজেদের আইনগত দায়িত্ব ভুলে আগ্নেয়াস্ত ও লাঠিসোটা নিয়ে নেতাকর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। এসময় নেতাকর্মীরা তাদের বিরত থাকার অনুরোধ করলে তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে গুলি, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেন।

মামলার বাদী রুহুল কবির রিজভী বলেন, সভা সমাবেশ করা আমাদের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার। নারায়ণগঞ্জে আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ বিনা উস্কানিতে গুলি করে শাওনকে হত্যা করেছে। সে আমাদের যুবদলের একজন সক্রিয় কর্মী। গণমাধ্যমে ছবি বেরিয়েছে ডিবির এস আই মাহফুজুর রহমান কনক চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করেছে। সেই গুলিতেই শাওন নিহত হয়েছে। আমাদের উপর যে হামলা হলো গুলি হলো সে ঘটনায় আমরা আদালতে মামলার আবেদন করে বিচার চেয়েছি বিজ্ঞ আদালতের কাছে।

বিএনপির আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ উদ্দিন তালুকদার জানান, নারায়ণগঞ্জের পুলিশের হামলায় পুলিশের গুলিতে শাওন সেখানে মারা যায়। এ ঘটনায় আমরা আদালতকে জানিয়ে গুলির ঘটনায় জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশে উপ পরিদর্শক (এসআই) মাহফুজুর রহমান কনকসহ ৪২ জনের নামে মামলা করেছি। আদালতকে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা অনুরোধ করেছি।

নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান জানান, মামলার আর্জি গ্রহণ করা হয়েছে। আদালত তাৎক্ষনিক কোন আদেশ দেননি।

উল্লেখ্য, গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে নারায়ণগঞ্জ শহরের ২নং রেলগেট এলাকায় র‌্যালি বের করার সময়ে  বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় শাওন নামের এক যুবক মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

১০০ শয্যা বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শেখ ফরহাদ জানান, শাওনের বুকের বা পাশে এবং পিঠের নিচের অংশে দুটি ক্ষত চিহ্ন পাওয়া গেছে। গভীর ক্ষত দুটি। তবে শরীরে কোনো গুলি পাওয়া যায়নি। বুকের বা পাশে একটি এবং পিঠের নিচের অংশে আরেকটি ক্ষত চিহ্ন পাওয়া গেছে।

ঘটনার পর ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী জানান, নিহত শাওন তার চাচাতো ভাইয়ের ছেলে। সে হিসেবে ভাতিজা। সে সরাসরি কোন রাজনীতির সাথে জড়িত নেই।

তবে পরদিন ২ সেপ্টেম্বর ফতুল্লা থানার নবীনগর বাজারে শাওনের বাড়িতে যান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তখন তিনি জানান, শাওন যুবদলের রাজনীতি করতো এবং যুবদলের কর্মী ছিল সেটাও প্রমাণিত হয়েছে। যদি সে রাজনীতি নাও করে তাও একজনকে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে মেরে ফেলার কোনো অধিকার পুলিশের নেই। পুলিশ মিথ্যাচার করছে। পুলিশের গুলিতেই যে শাওনের মৃত্যু হয়েছে, এটা প্রমাণিত। শাওনকে হত্যার দায় তারা কোনোভাবেই অস্বীকার করতে পারে না।

ঘটনার পর রাতেই শাওনের বড় ভাই মিলন প্রধান বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, শাওন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার নবীনগর এলাকার একটি ওয়ার্কশপে মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন। ১ সেপ্টেম্বর দুপুর পৌনে ১২টায় শাওন নারায়ণগঞ্জ শহরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় পাকা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। ওই সময়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ৫ হাজারের বেশি নেতা-কর্মী ইটপাটকেল ও লোহার রড, হকিস্টিকসহ অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দফায় দফায় মিছিল করে এবং পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছোড়ে এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। পুলিশের ওপর আক্রমণ করতে থাকলে ওই ইটপাটকেল ও অবৈধ অস্ত্রের গুলিতে শাওন মাথায় ও বুকে গুরুতর জখম হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। পরে রাস্তায় থাকা লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা শাওনকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের মামলায় ৭১ জনের নাম উল্লেখ সহ আরো ৫ হাজার জনকে আসামী করা হয়েছে। পুলিশের এস আই কামরুজ্জামান বাদী হয়ে ২ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় ওই মামলাটি দায়ের করেন।

add-content

আরও খবর

পঠিত