অপরাধ জগতে টার্গেট কিশোর !

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বিশেষ প্রতিবেদক ) : রাজনৈতিক ছত্রছায়াসহ নানা কারণে বাড়ছে কিশোর অপরাধ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে তাদের অপরাধের ধরনও। গ্যাং তৈরীতে কিংবা মাদক বিক্রিতে, সকল অপরাধেই রয়েছে তাদের বিস্তার প্রভাব। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে খুনাখুনিসহ নানা অপরাধেই এখন টার্গেট কিশোর !

সম্প্রতি কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুনের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় বড় ভাইরা। শহরের হোসয়িারী শ্রমিক সুব্রত খুনের ঘটনায়ও কিশোর ও তরুণদের ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়দেরও অভিযোগ, নানা অপরাধে জড়িয়ে কিশোররা ক্রমেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। অধিকাংশ কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠার পেছনে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা মদদ দিচ্ছে। এ কিশোরদের ব্যবহার করে কেউ কেউ মাদক কারবারি করাচ্ছে। আধিপত্য বিস্তারসহ যেকোন দ্বন্দ্বে প্রথমেই কিশোরদের লেলিয়ে দেয় কোন একটি পক্ষ।

সূত্রে জানা গেছে, গেল কয়েক মাসে আধিপত্য বিস্তার, মাদক সহ হানাহানিতে খুন হয়েছে ডজন খানেক। নানা অপরাধের কারণে বিভিন্ন মামলায় শতাধিক কিশোরকে আসামী করা হয়েছে। ওইসব গ্রেপ্তার হওয়া কিশোরদেরকে দেশের তিনটি কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে রাখা হয়। যেখানে অধিকাংশ কিশোরই হত্যা, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক, অস্ত্র ও বিস্ফোরক, নারী ও শিশু নির্যাতন, পর্নোগ্রাফি, তথ্য প্রযুক্তি মামলার আসামী।

এ বিষয়ে ক্রিড়াবিদ ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা বলছেন, কিশোরদের অপরাধে জড়ানোর পেছনে মূল কারণ খেলাধূলা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া। আর সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ কমে যাওয়া। এখন এলাকা ভিত্তিক সামাজিক কার্যকলাপ নেই বললেই চলে। যা আছে তাতে কিশোরদের অংশগ্রহণ করার সুযোগ খুব কম। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে না, খেলার মাঠ কমে এসেছে। সামাজিকভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন না থাকায় কিশোররা সাইবার জগতে বুঁদ হয়ে আছে। তারা সেখান থেকেই যা শিখছে তা প্রয়োগ করতে গিয়ে বিপথগামী হচ্ছে। এই প্রযুক্তি শুভ ব্যবহার আমরা তাদের শেখাচ্ছি না। ফলে অপরাধ বেড়ে চলছে। অপরদিকে নানা অপরাধে আইনের ফাঁক ফুকর দিয়ে কিশোর বের হতে পারে বলে। সকল অপরাধে কিশোরদের টার্গেট করা হয়।
সচেতন মহল বলছেন, কিশোর অপরাধের ভয়াবহ পরিণতি উপলব্ধি করে আমাদের সকলের উচিত কিশোরদের অন্ধকার থেকে আলোর জগতে ফিরিয়ে আনা। কিশোর অপরাধ সৃষ্টিতে শুধু কিশোররাই দায়ী নয়। এজন্য দায় আমাদের পরিবর্তনশীল সমাজ ব্যবস্থা, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা। তাই সরকারি প্রচেষ্টা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

উল্লেখ্য, বয়সের দিক থেকে সাধারণ ৭ থেকে ১৬ বছর বয়সী কিশোর কিশোরী দ্বারা সংঘটিত অপরাধই কিশোর অপরাধ। তবে বিভিন্ন দেশে বয়সের তারতম্য রয়েছে। কোনো কোনো দেশে ১৩ থেকে ২২ বছর আবার কোনো দেশে ১৬ থেকে ২১ বছর বয়সী কেউ অপরাধ করলে কিশোর অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হয়। জাপানে ১৪ বছরের, ফিলিপাইনে ৯ বছরের এবং ভারত, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারে ৭ বছরের কম বয়সী শিশুদের অপরাধ শাস্তিযোগ্য নয়। বাংলাদেশে ১৮ বছরের কেউ অপরাধ করলে কিশোর অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হবে। কিশোর অপরাধীদের আচরণ ও কাজকে কম অপরাধমূলক ভাবা হয় ও অপরাধের কারণকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। কৃত অপরাধের জন্য শাস্তি প্রদান না করে সংশোধনের ব্যবস্থা করা হয়।

add-content

আরও খবর

পঠিত