নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নিজস্ব প্রতিনিধি ) : নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। রোগীদের অধিকাংশই কাঙ্খিত সেবা নিতে আসলেও পাঠানো হচ্ছে রাজধানী ঢাকায়। এর কারণ হিসেবে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা বলছেন রোগীর অবস্থার অবনতির কারণেই তাদের ঢাকায় সরকারী হাসপাতালগুলোতে রেফার্ড করা হয়ে থাকে।
তবে ভুক্তভোগী অনেকেরই অভিযোগ পাওয়া গেছে, প্রস্রাব আটকে থাকার কারণে পেট ফুলে-ফেঁপে যাওয়া কিংবা উচ্চ রক্তচাপ থাকার কারণে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া রোগীকেও ঢাকা স্যার সলিমুল্লাহ ম্যাডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল সহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পরবর্তিতে রোগীর স্বজনরা নারায়ণগঞ্জেই বেসরকারী হসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসা সেবা পেয়ে রোগীকে বাড়িতে নিতে সক্ষম হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ শহরের আল্লামা ইকবাল রোডে বসবাসকারী এমনই ভুক্তভোগী রোগীর এক স্বজন জানায়, রাতে হঠাৎ করেই পেট ব্যাথায় ভোগে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধ রোগী। সে সময় পেট ফুলে থাকতে দেখা যায়। রোগী জানিয়েছিল প্রস্রাব হচ্ছিল না। তারপর রাত দেড়টায় নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে নিয়ে গেলে টিকিট কেটে দায়িত্বরত চিকিৎসকের সাথে কথা বলতে গেলে সেখানে ইনর্টানী চিকিৎসকদের দেখা যায়। তারা জানায়, দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ভিতরে একটু বিশ্রাম নিচ্ছে। পরে অনেক অনুরোধ করলে ইনর্টানী চিকিৎসক টিকিট নিয়ে দায়িত্বরত চিকিৎসকের কাছে গেলে সেখান থেকে টিকিটে লিখে দেয়া হয়, রের্ফাড মিটফোর্ট। স্বজনরা প্রস্রাব আটকে আছে, ক্যাথেটার দিয়ে অন্তত প্রস্রাব বের করার ব্যবস্থা করা যায় কিনা জিজ্ঞাসা করলেও উত্তেজিত হয়ে উঠে। তারা বলেন, এতো রাতে ওয়ার্ড বয় নেই, কে পড়াবে ? পরে শহরের একটি বেসরকারীতে ক্যাথেটার পড়িয়ে দিলে রোগীর প্রস্রাব হয়। আর রাতেই বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ইউরোলজী চিকিৎসককে দেখানো হলে তারা জানায় প্রস্রাব এর রাস্তাটি চেপে রয়েছে বিধায় এমনটা হয়েছে। চিকিৎসা নিলে ঠিক হয়ে যাবে।
এদিকে, বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা আরেক রাগীর স্বজন জানায়, বাড়িতে পারিবারিক ঝগড়ায় চিৎকার চেচামী করার এক পর্যায়ে হঠাৎ করেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে ৫৫ বছরের একজন। পরে তাকে নিয়ে আসা হয় ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে। সেখানে টিকিট কেটে ভিতরে প্রবেশ করলে চিকিৎসক ইনজেকশন পুশ করে তাকেও ঢাকায় নিয়ে যেতে পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই কিছুটা কথা বলতে পারায় তাকে আর ঢাকায় নেননি স্বজনরা। স্থানীয় একটা বেসরকারী হাসপাতালে নিলে স্যালাইন দিয়ে ৩ ঘন্টা বিশ্রামের পর তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় ওইখানকার চিকিৎসক। যিনি এখনো সুস্থভাবেই চলাচল করছেন।
এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালটির চিকিৎসাসেবা দালালের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। রোগী ও তাঁদের স্বজনদের কাছে নিজেদের হাসপাতালের কর্মী পরিচয় দিয়ে ভর্তি, শয্যা পেতে এবং রোগ পরীক্ষাসহ নানা কাজে সহযোগিতার কথা বলে হাতিয়ে নেন টাকা। অনেক সময় বকশিস নিয়ে রোগী ও তাঁদের স্বজনদের হয়রানিও করেন দালাল চক্র। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও তাঁর স্বজনেরা দালালদের হাতে নানাভাবে নাজেহাল হচ্ছেন। এ নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে অবগত নয় বলেই জানিয়েছেন।
আর তাই তাদের বিরুদ্ধে কোন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় হ্রাস পাচ্ছে না তাদের দৌরাত্ম। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৪শে এপ্রিল এই হাসপাতালের দালাল চক্রের ১৯ সদস্যের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল আদালত।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান জানান, এ রকম আমিও শুনেছি। তবে এ বিষয় আমি এখন থেকে নজর রাখবো। সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা যেন কোনভাবেই ব্যাহত না হয়। সেটাই আমাদের দায়িত্ব। চিকিৎসক গুরুতর কোন রোগীকে পাঠাতে পারে। তবে এমন যদি করা হয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর ওয়ার্ড বয় নেই বলে রোগী সেবা থেকে বঞ্চিত হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কখনোই না। প্রয়োজনে অন্যান্য সেবীকারা ক্যাথেটার লাগিয়ে দিবে। তা না হলে তো দালালরা সুযোগ নিবেই।