★ হার মেনেছে শেষে ★ ( কবিতা )

হার মেনেছে শেষে ( কবিতা )

আসাদউজ্জামান খান

নারায়ণগঞ্জ বার্তা :           জন্ম আমার হয়েছিল নানা-নানির বাড়ি

নানা ভায়ের পাইনি দেখা গেছেন জগৎ ছাড়ি !

নানা ছিলো নামি দামি সকল মানুষ বলে-

মৃত্যুর পরে জেলার মানুষ ভেজছে চোখের জলে।

ধন-মান নানার কম ছিলো না ছিলো না তাঁর ছেলে,

পূর্ণ হতো ঝিদের সাথে একটি ছেলে পেলে।

মরলো যে দিন নানা আমার নানির হলো ছেলে

দু:খের কথা পায়নি দেখা নানার সাধের ছেলে !

সম্পদ কড়ি রেখে গেছে  বৌ মেয়েদের জন্য,

নানা আমার পরকালে থাকে যেন  ধন্য।

শোক কাটিয়ে আমার নানির জীবন যুদ্ধ শুরু,

পিছু টানে একটুকো তাঁর কাঁপেনি বুক  ধুরু।

ছেলে-ঝিদের লেখাপড়া চলছে খুবই ভালো,

আমার নানি আশা করে জ্বলবে ঘরে আলো।

এস.এস.সি.পাশ করার পরে বড়ো মেয়ের বিয়ে,

সুখে-দু:খে সংসার করে স্বামীর বাড়ি গিয়ে।

বছর খানেক পড়ে আসলাম পৃথিবীতে আমি,

বড়ো মেয়ের বড়ো ছেলে সবার কাছে দামি।

এক পলকে হইনি আড়াল রাখছে সবাই কোলে,

দুধ মাখা ভাত  খাওয়াইছে যে আমার মুখে তুলে।

মেঝো সেঝো মেয়েদেরও বিয়ে দিলো নানি,

ছেলেটাও হইছে বড়ো দেয় যে তাঁরে বাণী।

মেঝো মেয়ে ঢাকায় থাকে স্বামীর সংসার করে,

নাতনি একটি হইছে নানির  তাঁরে মনে পড়ে।

দাখিল শেষে চাকরি করতে ছেলে যাবে ঢাকা,

কষ্টে যেনো আমার নানির বুকটা আগেই ফাঁকা।

মামা আমার গেল ঢাকায় আমি নানি বাড়ি,

আমার নানি চিন্তা করে ঢাকায় অনেক গাড়ি!

কামাই করে মামায় আমার নানিকে দেয় টাকা,

সংসার নানির ভালো চলে মনটা নানির ফাঁকা।

ঢাকায় বসে মামায় আমার করলো নিজের বিয়ে,

মাকে কিছু বলেনায় সে বলছে বোনদের গিয়ে।

শোনলো যখন নানি আমার মামায় করছে বিয়া,

সকল আশা ধ্বংসো করে ভাঙলো নানির হিয়া।

সকল কথা  ভুলে গিয়ে আনলো পুত্র বধূ,

নানির ঠোটে ফুটবে হাসি উঠবে মুখে মধু!

কিছু দিন থাকার পরে মামি এলো ঢাকা,

মামার কাছে থাকবে মামি করছে কথা পাকা।

অভাগিনী নানির আমার কষ্টে বুকটা ফাটে,

পিছের কথা মনেকরে কষ্টে সময় কাটে।

এস এস সি পাশ শেষে আমি  উচ্চ শিক্ষার  আশায়,

নানির বাড়ি ছাড়লাম আমি করুণ রসের ভাষায়।

নানির বাড়ি আসলাম ছেড়ে  নানি থাকে একা,

মনটা আমার টেকে নাতো  পাইনা নানির দেখা।

ফোনে ফোনে বলতাম কথা আমার নানির সাথে,

নানির জন্য কষ্ট হতো আমার দিনে রাতে।

বছর দেড়েক যাওয়ার পরে নানি হলো অচল,

সবাই তাঁরে সান্ত্বনা দেয় হবে তুমি সচল।

স্বামীর ভিটা ছেড়ে নানি রয়নি কোথায় বেশি,

বলতো নানি থাকলে কোথায় কমে শক্তি পেশি।

ভয়ানো রোগ নানির আমার চলতে ফেরতে অক্ষম,

আশা করি হয় যেন সে চলতে ফেরতে সক্ষম।

চিকিৎসাতে উন্নতি নেই ঢাকায় রাখছে তাঁকে,

যত্ন করে বৌ মেয়েরা পর্যায়ক্রমে  মাকে,

অসুস্থতায় কেটে গেলো পাঁচটি বছর তাহার,

নামাজ পড়ে বিছনায় বসে কমে গেল আহার।

খাওয়া দাওয়া নেই যে নানির নেই তো ঘুম তাঁর চোখে,

খানিক বাদে দেয় যে পানি নিযেই নিযের মুখে।

হঠাৎ করে সকাল বেলা আট-ই ফেব্রুয়ারি,

কাঁদো চোখে আম্মু আমার ছুটছে মামার বাড়ি।

বুঝে আমি আম্মুর পিছে ছুটলাম মামার বাড়ি,

গিয়ে দেখি নানি আমার গেছে ভুবন ছাড়ি।

কত কষ্ট করে নানি হারমানিলো শেষে,

এবার নানি চলে গেল পরকালের দেশে।

ছুটলাম এবার সব কে নিয়ে সেই গ্রামের বাড়ি,

সবার হাতে তসবি ছিল চলছে শবের গাড়ি।

আল্লাহ আল্লাহ জিকির ছিলো সবার কাঁদো মুখে,

বুকটা আমার ভেতর থেকে ফাটে করুণ দু:খে।

বাড়ির সবাই প্রহর গোনে শবটি আসবে নিয়া,

ফোনে তাঁদের হইছে বলা গোসল দিবে গিয়া।

সন্ধ্যার পড়ে ফিরলাম বাড়ি করাইল শেষ গোসল,

সবাই বলে তাড়াতাড়ি দাফন দেয়াই আসল।

তাঁরই হয়ে ক্ষমা চেয়ে জানাজাটা শেষে,

খাটে করে কাঁধে নিয়ে রাখছি কবর দেশে।

পায়ের দিকটা ধরছি আমি রাখছি কবর ঘরে,

আল্লাহ যেন পরকালে বেহেস্ত নসিব করে।

add-content

আরও খবর

পঠিত