নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জে সড়ক-মহাসড়কে চলছে ৭ হাজার ৯০৭টি ফিটনেস বিহীন গাড়ি। এই তালিকায় বাস-মিনি বাস ছাড়াও রয়েছে ব্যক্তি মালিকানা জিপ, প্রাইভেটকার ও মাইক্রো বাস। রয়েছে ট্রাক, লেগুনা ও পিকআপ ভ্যান সহ বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের মালবাহী গাড়িও। ফিটনেস নবায়ন না করা এই বাহনগুলো সড়কে চলাচলের উপযোগি না হলেও তা দাপিয়ে বেড়ায় শহর থেকে শহরতলী।
বিআরটিএ নারায়ণগঞ্জ সার্কেল অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে চলাচল করা ৭ হাজার ৮শ ৯৭টি ফিটনেস বিহীন গাড়ির মধ্যে অটো বা থ্রি হুইলার (সিএনজি) রয়েছে ৫ হাজার ১৭১টি, বিভিন্ন পরিবহনের বাস রয়েছে ১৩০টি, মিনি বাস ১৬৪টি, প্রাইভেটকার ১৪৬টি, লেগুনা ২৬০টি, কাভার্ড ভ্যান ৭২টি, ডেলিভারি ভ্যান ১৩৪টি, জিপ গাড়ি ২৮টি, মাইক্রো বাস ৩৫টি, পিকআপ ১৪৩টি, স্পেশাল পারপাস কার ৯৩টি, ট্রাক ৯২৮টি, ট্যাংকার ১৪৯টি, ট্রাক্টর ৩৪৮টি, কারগো ভ্যান ৯টি এবং অন্যান্য ফিটনেস বিহীন আরো ৮৭টি গাড়ি রয়েছে নারায়ণগঞ্জে। এগুলোর বেশির ভাগই অবকাঠামোগত দিক থেকে একেবারেই জরাজীর্ণ।
বিআরটিএ নারায়ণগঞ্জ সার্কেল অফিস সূত্র বলছে, এসব অবৈধ যানবাহন চলাচল প্রতিরোধে প্রতি মাসেই ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করছেন তারা। অথচ, এরপরও উল্লেখ যোগ্য সংখ্যক ফিটনেস বিহীন গাড়ি সড়ক দাপিয়ে বেড়ানোয় সরকারী এই প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠছে সচেতন মহলে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জে চলাচল করা বন্ধু, আনন্দ, বোরাক ও বাঁধন পরিবহনের অধিকাংশ গাড়ির বাহ্যিক ফিটনেস একেবারেই ভঙ্গুর। বিশেষ করে দুই যুগ ধরে নারায়ণগঞ্জ টু সোনারগাঁ রুটে চলাচল করা বাঁধন পরিবহনের সিংহ ভাগ বাসই যাত্রী বহনে উপযুক্ত নয়।
বাসগুলোর ভেতর বাহির সর্বত্র মরিচায় পরিপূর্ন। চলন্ত অবস্থায় ভেঙ্গে পড়ে জানালার গ্লাস। সামান্য ঝাকুনিতেই যেন ককিয়ে উঠে বাসের সর্বত্র। সিটগুলোর অবস্থা আরো বেগতিক। বেশির ভাগ বাসের সিট ভাঙ্গা। কোনো কোনো বাসের সিট ভালো হলেও সিটের কভারগুলো ব্যবহার যোগ্য নয়। জানালার গ্লাস কোনটার ভাঙা আবার কিছু জানালায় দেখা যায় না গ্লাসও।
বন্ধু, আনন্দ ও বোরাকসহ আল্লাহ ভরসা নামক পরিবহনের বেশ কিছু বাসের অবস্থা একই। এছাড়াও নামে-বেনামে ফিটনেস বিহীন বিভিন্ন লোকাল পরিবহনের দেখাও মেলে নারায়ণগঞ্জের শহুরে সড়কে।
তাছাড়া লোকাল বাহন হিসেবে ব্যবহার হওয়া নারায়ণগঞ্জের ক্ষুদ্র যানবাহন যথা লেগুনা, সিএনজি ও টেম্পুগুলোর বডির অবস্থাও বেগতিক। এই ক্ষুদ্র বাহনগুলো যাত্রী চলাচলে শতভাগ উপযুক্ত না হলেও কেবল ইঞ্জিনের জোরেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সড়কের এ মাথা থেকে ও মাথা। সচেতন যাত্রীরা বলছেন, ফিটনেসের ঘাটতি নিয়ে চলাচল করায় যেকোন সময়ে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ নারায়ণগঞ্জ সার্কেল এর সহকারী পরিচালক (প্রকৌশলী) শামসুল কবির বলেন, নারায়ণগঞ্জে যতগুলো বাস গাড়ি চলছে সেগুলোকে সফটওয়্যারের আওতায় আনা হবে। তা নিয়ে আগামী ৩০ আগস্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মিটিং হবে। সেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে যে, বৈধ গাড়িগুলোতে বিআরটিএর স্টিকার থাকবে, অবৈধ গাড়িতে স্টিকার থাকবে না। স্টিকারের আওতায় নিয়ে আসা হলেই বৈধ-অবৈধ সহজেই নির্ণয় করা যাবে। অবৈধ গাড়িগুলো সড়কে চলতে দেয়া হবে না।
এদিকে, অবৈধ গাড়ি চলাচল বন্ধে অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে আরটিএর এই কর্মকর্তা বলেন, ডিসি অফিস থেকে অভিযানের সিডিউল এবং ম্যাজিস্ট্রেট দেয়া হয়। সেই অনুযায়ী আমরা অভিযান চালিয়ে থাকি। গত জুন মাসে ১০টি মোবাইল কোর্ট, ২০টি মামলা এবং ৪০ হাজার ২শ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। যেকোন অবৈধ গাড়ি চলাচল রোধে ট্রাফিক বিভাগেরও অভিযান চালানোর এখতিয়ার রয়েছে।
জানা গেছে, গত কিছুদিন ধরেই নারায়ণগঞ্জের ট্রাফিক বিভাগকে মোটর সাইকেলের উপর বিশেষ অভিযান চালাতে দেখা যাচ্ছে । ওই অভিযান প্রশংসা কুড়ালেও ফিটনেস বিহীন অবৈধ যানবাহনগুলোর বিষয়ে খুব একটা তাদের নজর দিতে দেখা যায় না।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জাহেদ পারভেজ চৌধুরী বলেন, কেবল মোটর সাইকেলই নয় ফিটনেস বিহীন অবৈধ পরিবহনেও আমাদের অভিযান চলছে। গত মাসে ২৭টি বাসের উপর মামলা করেছি। প্রত্যেক কোম্পানীর বাসের উপর মামলা করা হয়েছে। তবে আমাদের অভিযানে ফিটনেস বিহীন কোন গাড়ি পাওয়া যায়নি। আমরা ড্রাইভিং লাইসেন্সের ঘাটতি পেয়েছি। কোন গাড়ির লাইট ভাঙ্গা ছিলো, কোনটার ছিলই না। একেবারে ফিটনেস বিহীন গাড়ি আমাদের চোখে পড়েনি। হয়তো অভিযানের খবর পেয়ে ওই গাড়িগুলো চালকরা সরিয়ে নেয়। এরপরও আমরা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। বৈধ গাড়িতে স্টিকার দেয়ার একটি আলোচনা চলছে। সেটা বাস্তবায়ন হলে অবৈধ গাড়ি সনাক্ত করা সহজ হবে।
সুত্র : অধিকার ডট নিউজ।