নারায়নগঞ্জ বার্তা ২৪ : আড়াইহাজারে হঠাৎ করেই শিশু হত্যা বেড়ে যাওয়ায় অভিভাবক মহল সহ সর্ব মহলে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। গত অক্টোবর মাস থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ৪ শিক্ষার্থী প্রথমে অপহরণ এবং পরে হত্যার শিকার হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় মামলা দায়ের হলেও এবং হত্যাকারীরা ধরা পড়লেও যেন কমছেনা শিশু হত্যার ঘটনা। গত ৩ মাসের জরিপ অনুযায়ী উপজেলার প্রভাকরদী গ্রামের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র সোহাগ, কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের পুর্বকান্দি গ্রামের মাদ্রাসার দশম শ্রেণীর ছাত্রী শারমীন, দুপ্তারা ইউনিয়নের গির্দা গ্রামের শিশু শ্রেণীর ছাত্রী হাফছা আক্তার রূপা এবং ইদবারদী গ্রামের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র রিয়াদ প্রথমে অপহরণ এবং পরে হত্যার শিকার হয়। এর মধ্যে শারমীনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। এদের কারো কারো ক্ষেত্রে অপহরণকারীরা মুক্তিপণ ও দাবী করে।
উল্লেখ্য যে, ৫ অক্টোবর ( সোমবার ) সকাল থেকে উপজেলার প্রভাকরদী গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে সোহাগকে খূঁজে পাওয়া যাচ্ছিলানা। ৬ অক্টোবর সকালে সোহাগের স্কুলের কাছাকাছি একটি নির্জন পুকুর পাড়ে সোহাগের ক্ষত বিক্ষত লাশ দেখতে পেয়ে লোকজন পুলিশে সংবাদ দিলে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। শুরু থেকেই সন্দেহ ছিল যে, এটি একটি হত্যাকান্ড আর এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে সোহাগের সৎমাতা আছিয়া (২৫) জড়িত। কিন্তু এ ব্যাপারে কেউ বাদী না হওয়ায় পুলিশ প্রথমে একটি ইউডি মামলা রুজু করে। পরে ময়না তদন্তের রিপোর্টে সোহাগকে শারিরীক নির্যাতন করে হত্যার বিষয়টি উঠে আসলে সোহাগের পিতা রফিক আর নিজেকে স্থির রাখতে পারেননি। তিনি তার সন্দেহ অক্ষরে অক্ষরে সঠিক মনে করে স্ত্রী আছিয়া, তার বোন শামসুন্নাহার ও বোনের স্বামী সফরআলী Ñএ তিনজনকে আসামী করে ঘটনার ২৫ দিন পর আড়াইহাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন এবং ওই দিন রাতেই পুলিশ আছিয়াকে গ্রেফতার করে। এদিকে, কালাপাহাড়িয়া গ্রামের বখাটে যুবক কামরুলের দেয়া বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ১৯ অক্টোবর দিবাগত রাতে কামরুল পার্শ্ববর্তী পুর্বকান্দি গ্রামের মাদ্রাসা ছাত্রী শারমীনকে (১৬) মোবাইলে ডেকে নিয়ে আরও দুই সহযোগিকে সাথে নিয়ে ধর্ষণের পর শ^াসরোধে হত্যা করে তার লাশ বাড়ির পাশে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পর দিন পুলিশ লাশ বিবস্ত্র ও গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।এ ঘটনায় তিন জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫ থেকে ৬ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়নের গিরদা গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী হযরত আলীর শিশু কন্যা স্থানীয় নজরুল ইসলাম বাবু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণীর ছাত্রী হাফছা আক্তার রূপা (৫) গত ২৬ নভেম্বর সকালে স্কুলে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। ইতি মধ্যে রাতে একই গ্রামের লতিফ মেম্বারের ছেলে ফজলে রাব্বি (১৬) নামে এক কিশোর মোবাইলে ফোন করে রূপার পরিবারের কাছে নগদ সাড়ে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে এবং বিষয়টি পুলিশকে জানাতে নিষেধ করে। রূপার পরিবার অপহরণকারীদের হুমকী উপেক্ষা করে বিষয়টি পুলিশকে জানায় এবং পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে রূপাকে উদ্ধারের জন্য মাঠে নামে। এ দিকে চাহিদা অনুযায়ী মুক্তিপণ না পেয়ে এবং বিষয়টি পুলিশ কে জানানোর কারণে অপহরণকারীরা রূপাকে হত্যা করে রাতেই লাশ তার বাড়ীর পাশে ফেলে রেখে যায়। ২৭ নভেম্বর সকালে লোক মুখে সংবাদ পেয়ে পুলিশ রূপার লাশ উদ্ধার করে এবং মোবাইলে হুমকী দাতা ফজলে রাব্বিকে গ্রেফতার করে। এ ব্যাপারে নিহতের মা লিপি আক্তার বাদী হয়ে আড়াইহাজার থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ২জনকে অজ্ঞাত উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে একটি (অপহরণ পুর্বক) হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরদিন শনিবার ভোরে পুলিশ মামুন (১৫) নামে অপর এক আসামীকে গ্রেফতার কোর্টে চালান করে।
অপরদিকে অপহরণের ৬ দিনের মাথায় উপজেলার ইদবারদী গ্রামের স্কুল ছাত্র রিয়াদের (১১) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ১১ ডিসেম্বর ভোরে গ্রাম্য মক্তবে পড়তে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে বের হয়ে ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র রিয়াদ আর বাড়ীতে ফিরেনি। ১৬ ডিসেম্বর দুপুরে লোক মুখে সংবাদ পেয়ে বাড়ীর কাছের একটি ঝিলের পাড় থেকে তার অর্ধ গলিত লাশউদ্ধার করা হয়। রিয়াদ ঈদবারদী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র এবং ওই গ্রামের গাড়ী চালক মোঃ ফিরোজ ভূইয়ার ২য় পুত্র।
নিহত স্কুল ছাত্র ইসমাইল হোসেন রিয়াদের মা রেখা আক্তার নারায়নগঞ্জ বার্তা ২৪ কে জানায়, শক্রবার ( ১১ ডিসেম্বর) ভোর অনুমান ৬ টার দিকে মসজিদের ঈমাম মাইকে ছাত্রÑছাত্রীদেরকে মক্তবে পড়তে যাওয়ার জন্য ডাকলে রিয়াদ মক্তবে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে বের হয়। তার পর থেকে আর তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। সম্ভাব্য সকল স্থান সহ আত্মীয় স্বজনদের বাড়ী বাড়ী সন্ধান করা হয়েছে। এমন কি জ্বীন ভুতে ধরে নিয়ে যেতে পারে এ জন্য এলাকার প্রতিটি গাছে এবং প্রতিটি বাড়ীর ছাদে তল্লাশী করা হয়েছে। কিন্তু কোথাও রিয়াদের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ১৪ ডিসেম্বর নিহত রিয়াদের বাবা ফিরোজ ভুইয়া আড়াইহাজার থানায় একটি সাধারণ ডাইরী করেন। লাশ উদ্ধারের পর নিহতের বাবা বাদী হয়ে আড়াইহাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ব্যাপারে পুলিশ একই গ্রামের নুর মোহাম্মদ (৫০) নামে এক কবিরাজ কে গ্রেফতার করেছে। এ ঘটনাটি নহিত রিয়াদের মা রেখা বেগমের সঙ্গে নুর মোহাম্মদের পরকিয়ার সম্পর্ক জনিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন নারায়নগঞ্জ বার্তা ২৪ কে বলেন, পর পর শিশু অপহরণ ও হত্যার ঘটনা গুলো সত্যিই উদ্বেগের কারণ। পুলিশ এ ব্যাপারে খতিয়ে দেখছে। দোষীদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।