নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নিজস্ব প্রতিবেদক ) : দেশ ও মাতৃভূমির মানুষের কথা চিন্তা করে নিজের জীবন বাজি রেখে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া মুক্তিসেনা সৈয়দ লুৎফর রহমান গুরুতর অসুস্থ হয়ে শয্যা অবস্থায় থাকা খবর শুনে দেখতে ও শ্রদ্ধা ও সম্মাননা জানাতে এবার হাসপাতালে ছুটে আসলেন আদ্রিকা নামে ৯ বছরের এক শিশু।
১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস, বিজয়ের ৫১ বছর পূর্তির উদযাপনে এবং মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে দিন ব্যাপী ব্যস্ত ছিলো পুরো বাঙালি। তবে সেই ১৬ ডিসেম্বর শুক্রবার রাতেই সেলিনা মেমোরিয়াল হাসপাতালে শয্যা অবস্থায় জীবন যুদ্ধে লড়াই করে যাওয়া সৈয়দ লুৎফর রহমানকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রাপ্য সম্মাননা হিসেবে ফুলের তোড়া দিয়ে শ্রদ্ধা ও সম্মাননা জানাতে এগিয়ে আসেন শিশু আদ্রিকা। ওই সময় শিশুটির সাথে হাসপাতালে সৈয়দ লুৎফর রহমান এর সেবায় নিয়োজিত ব্যাক্তিরাও ফুল দিয়ে সম্মান জানিয়েছেন। এছাড়া সকলেই তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
এদিকে জেলার জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, রাজনৈতিক সহকর্মী, মুক্তিযোদ্ধা সহকর্মী সহ এছাড়া দেশের অন্যান্য মানুষ ভুলে গেলেও জীবনের শেষ সময় শয্যা অবস্থায় হাসপাতালে লড়াই করে বেঁচে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা কে সম্মাননা জানাতে এগিয়ে আসতে ভুলেনি শিশু আদ্রিকা। শিশুটির পিতা ওই হাসপাতালটির কর্ণধার আলিনুর শরীফ শামীম। তার দিক নির্দেশনায় ঢাকা বারডেম ও ঢাকা মহানগর হাসপাতালের ডাক্তার ইফতেখার আল রাজিব এর তত্ত্বাবধায়নে নারায়ণগঞ্জে সেলিনা মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
জানা গেছে, সৈয়দ লুৎফর রহমান গত বছরের গত ১৫ই অক্টোবর শুক্রবার রাত ৯টায় শারীরিক দুর্বলতা ও শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় ভুগতে থাকলে তাকে চিকিৎসার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেয় হয়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে ভর্তির জন্য কোন সিট খালি না পাওয়ায় ওইদিন রাতে বারান্দায় সাধারণ বেডে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন চিকিৎসক। এরপর সেখান থেকেও রেফার করা হয় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসাইন্স হাসপাতালে। কিন্তু ওইখানকার চিকিৎসকরাও বিভিন্ন পরীক্ষা করিয়ে ভর্তি নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে। পরবর্তিতে সোহরাওয়ার্দী নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেয়।
এদিকে, রোগীর অবস্থার অবনতি দেখে সিদ্ধিরগঞ্জে অবস্থিত প্রো-অ্যাক্টিভ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের আইসিউতে ভর্তি করা হয়। তৎক্ষনাত কয়েকটি পরীক্ষা করলে ফুসফুসে ইনফেকশন, ডায়াবেটিস ও ব্রেনজনিত রোগ দেখা দেয়। ৪ দিন আইসিইউ বেডে চিকিৎসা সেবা প্রদানের পর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে গত ১৯ই অক্টোবর তাকে কেবিনে দেয়া হয়। ধারাবাহিক চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণ শেষে গত ২৩ই অক্টোবর আবারো রোগীর বুকের এক্স-রে, রক্ত সহ কয়েকটি পরীক্ষা করা হলে চিকিৎসক তার অবস্থার উন্নতি দেখতে পেয়ে বাসায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর হাসপাতাল থেকে গত ২৪ অক্টোবর রিলিজ দেয়া হলে বাসায় নিয়ে আসা হয়। তারপর গত বছরের ১৩ই ডিসেম্বর সোমবার নারায়ণগঞ্জে অবিস্থত ল্যাবএইড হাসপাতালে দেখাতে নিয়ে গেলে লুৎফর রহমানের দেহের মূত্রনালীতে সমস্যা ধরা পড়ায় তৎক্ষনাত রোগীর বুকের এক্স-রে, ইসিজি ও রক্ত সহ কয়েকটি পরীক্ষা করতে বলে চিকিৎসক।
এছাড়া চলতি বছর গত ২৮ নভেম্বর সোমবার বাসায় দুপুরের খাদ্য খেতে সমস্যা দেখা দেয়, শারীরিক দুর্বলতা ও শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা এবং দু-চোখ নিস্তেজ দেখা দেয়। এরপর চিকিৎসকের পরার্মশে বাসায় রক্ত পরীক্ষা করে তারপর স্যালাইন পানি, অক্সিজেন স্যালেন্ডার আর নেবুলাইজার দিয়ে বাসায় রাখা হয়। ৩ দিন বাসায় রেখে অবস্থা অবনতি দেখে চিকিৎসকের পরার্মশে ১লা ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়াস্থ ডনচেম্বার এলাকায় অবিস্থত সেলিনা মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে এখন হাসপাতালে শয্যাশয়ী রয়েছেন তিনি।