নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত লিংকন ) : কালের বিবর্তনে গ্রামীণ ঐতিহ্যের অনেক গাছের মত হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ ও তার থেকে আহরণ করা রস। শহর কিংবা গ্রাম, প্রতিটি মানুষের কাছেই খেজুর গাছের রসের খুব চাহিদা রয়েছে। তবে অর্থনীতির চাকাকে চাঙ্গা করতে গিয়ে গ্রামীণ ঐতিহ্যের অনেক গাছের মধ্যে খেজুর গাছকেও কেটে ফেলে লাগানো হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার কাঠগাছ।
একসময় গ্রামীণ উপজেলাগুলোতে অধিকাংশ রাস্তার পাশে, পুকুরপাড়ে ও কৃষিজমির পাশে ছিল প্রচুর পরিমাণ খেজুর গাছ। শীত মৌসুম শুরু হতেই গাছীরা ব্যস্ত হয়ে পড়ত খেজুরের রস সংগ্রহ করার কাজে। সেই রসের বিভিন্ন পিঠা, পুলি ও পায়েস সহ নানা প্রকার খাবার তৈরির জন্য খেজুরের রস ছিল অন্যতম উপাদান। এ জন্য গাছীদের চাহিদার কথা বলে রাখতে হতো। ফলে যাদের খেজুর গাছ ছিল না তারাও এ গাছ লাগাতে উৎসাহী ছিলো। রস খাওয়া থেকে বঞ্চিত হতেন না রস প্রেমীরা।
এ বিষয়ে বন্দরের কুশিয়ারা গ্রামের সৌরভ নামে এক যুবক জানায়, আমরা জন্মের পর দেখেছি আমাদের বাপ দাদাদের রোপন করা ঐতিহ্যবাহী কিছু গাছের মধ্যে খেজুর গাছ ছিল অন্যতম। আমরা অপেক্ষার প্রহর গুনতাম শীতকালের জন্য। কারণ শীত আসলেই খেজুরের রস ও খেজুরের পিঠার গন্ধে গ্রামীন জনপদ মৌ মৌ করতো। শীত আসলেই খেজুর গাছ রসের উপযোগী করতে পরিষ্কারের কাজে ব্যস্ত গাছিরা ব্যস্ত হয়ে পড়তো। এতে গাছিরা ওইসময়টায় অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হতো।
সোনারগাঁয়ের সন্মান্দি এলাকার বাসিন্দা ফয়েজুর রহমান জানায়, গ্রাাম-বাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক এ মধুবৃক্ষকে ঘিরে গ্রামীণ জনপদে থাকত উৎসবমুখর পরিবেশ। সেসময় মেহমান আসা মানেই খেজুরের রস ও আমনধানের ভাঁপা পিঠা, পুলি ও পায়েশ দিয়ে আপ্যায়ন। প্রায় ৫ লিটার রসে এক কেজি গুড় (মিঠাই) হতো। সেই গুড় দিয়ে মুড়ির মোয়া, চিরার মোয়া ও মুড়ি খাওয়ার জন্য কৃষক পরিবার থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের শীতের মৌসুম ছিল অতি প্রিয়। ওইসময় আনন্দময় পরিবেশ বিরাজ করত। বিশেষ করে পৌষ-মাঘ শীত মৌসুম এলে গাছীদের আনন্দের সীমা থাকত না। খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য মহাব্যস্ত হয়ে পড়তেন তারা। কাক ডাকা ভোর হলেই রস সংগ্রহ করতো। পরে তা বাজারে গিয়ে বিক্রি করতো এক কলসি রস ৫০ থেকে শুরু হয়ে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।
এ বিষয়ে জানতে মোকলেস নামে এক বৃদ্ধ খেজুর গাছির সাথে কথা বললে তিনি জানায়, শীত মৌসুমে খেজুর গাছের রস ও গুড় বিক্রি করার টাকায় আমি আমার সংসারের খরচ চালাতাম। বর্তমানে সেই অবস্থা আর নেই। পুরো গ্রাম ঘুরেও দুই থেকে তিনটা খেজুর গাছ পাওয়া যাবে কিনা আমার সন্দেহ। যাই ছিলো সকলেই হয়তো বাড়ি-ঘর উঠিয়েছে নতুবা অল্প খরচে বেশী মূল্যে বিক্রি করার জন্য বিভিন্ন প্রকার কাঠগাছ লাগিয়েছে। আর এখন খেজুর গাছ না থাকায় আমি সেই পেশা ছেড়ে দিয়েছি।
সচেতন মহলের মতে, ইটভাটা, বাণিজ্যিক চাষ, সুষ্ঠু তদারকি না থাকার ফলে নারায়ণগঞ্জ সহ সারাদেশ থেকে খেজুরগাছ আজ বিলুপ্তির পথে। তাদের পরার্মশ, সকলের জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অন্যতম প্রচার মাধ্যম সংবাদ পত্র, রেডিও, টেলিভিশন ও ফেসবুকে পরিবেশ বান্ধব গাছ ফলজ বনজ এবং ওষুধি গাছ লাগানোর পাশাপাশি খেজুর গাছ রোপনে উৎসাহিত করতে হবে। তাহলেই পুরোনো অনেক মানুষের স্বপ্ন ও হারিয়ে যেতে বসা পরিবেশ বান্ধব খেজুর গাছে ভরে উঠবে গ্রামীন জনপথ গুলো।