নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : এক যুগ পর গত ১০ মে অনুষ্ঠিত হয়েছে নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের নেতৃত্বে একক প্যানেল ছিল। তার প্যানেলের বিপরীতে কেবল তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তবুও ভোটের হিসেবে দশম হয়েছেন মোহাম্মদ হাতেম।
সর্বশেষ ২০১২ সালের নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে প্রথম হয়েছিলেন এ ব্যবসায়ী নেতা। ওই হিসেবে হাতেমের জনপ্রিয়তা কমে এসেছে। আর জনপ্রিয়তায় এই ধস নামার পেছনে তার বিরুদ্ধে ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও ওসমান পরিবারের দোসরের’ অভিযোগটি প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে বলে মনে করছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা।
যদিও একক প্যানেল হওয়ার কারণে এবং পূর্ণ প্যানেলে বিজয়ী হওয়াতে আবারও এ ব্যবসায়ী সংগঠনের সভাপতি হওয়ার পথে রয়েছেন তিনি। তবে, এবারের নির্বাচনের ফলাফল হাতেমের জন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে ‘হলুদ কার্ড’ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
তাদের মতে, বিকেএমইএ’তে দীর্ঘ বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন মোহাম্মদ হাতেম। সর্বশেষ ২০১২ সালের নির্বাচনেও তিনি দুই প্যানেলের নেতাদের চেয়েও বেশি ভোট পেয়ে প্রথম হয়েছিলেন, সেখানে এবার একক প্যানেল থাকার পরও তিনি হয়েছেন দশম। এটি মোহাম্মদ হাতেমের নেতৃত্বের জন্য আশঙ্কা তৈরি করেছে। সাধারণ ব্যবসায়ীরা তাকে নির্বাচিত করলেও তার বিগত সময়ের কর্মকাণ্ডের বিবেচনায় কিছুটা হুঁশিয়ার করেছেন ভোটের মধ্য দিয়ে। বিশ্লেষকরা বলছেন ভবিষ্যতে লাল কার্ডও পেতে পারেন তিনি।
বিকেএমইএ সূত্রে জানা যায়, গত ১০ মে দিনভর ঢাকার বাংলামোটর ও নারায়ণগঞ্জের বিকেএমইএ ভবনের আলাদা দু’টি ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলে। এবারের নির্বাচনে ৫৭২ জন ভোটারের মধ্যে ৪৩১ জন ভোট দেন। এরমধ্যে ২৩টি ভোট বাতিল ঘোষণা করা হয়। বিকেএমইএর ৫৭২ ভোটারের মধ্যে নারায়ণগঞ্জে ২৭২, ঢাকায় ২২৪ ও চট্টগ্রামে ৭৬ জন।
দিনভর ভোটগ্রহণ শেষে সন্ধ্যায় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি শহরের চাষাঢ়ায় বিকেএমইএ’র প্রধান কার্যালয়ে ফলাফল ঘোষণা করেন।
হাতেমের নেতৃত্বে প্রোগ্রেসিভ নীট অ্যালায়েন্স’ এ সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন। এ প্যানেলের প্রধান মোহাম্মদ হাতেম ভোটের হিসেবে দশম হয়েছেন। যদিও এ প্যানেলের নেতা হিসেবে আবারও এ ব্যবসায়ী সংগঠনের সভাপতি হতে যাচ্ছেন আছেন তিনি।
ফলাফল অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি ৪০৮ ভোট পেয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন রিপন। এছাড়া, ফকির কামরুজ্জামান নাহিদ ৪০৬, আশিকুর রহমান ৪০৫, এম. ইসফাক আহসান ৪০৫, আহমেদ নূর ফয়সাল ৪০৪, আহসান খান চৌধুরী ৪০৪, মো. আব্দুল হান্নান ৪০৪, মো. মহসিন রাব্বানি ৪০৪, মো. শাহরিয়ার সাইদ ৪০৪, মোহাম্মদ হাতেম ৪০৩, ইঞ্জিনিয়ার ইমরান কাদের তুর্য ৪০৩, মোহাম্মদ শামসুল আজম ৪০২, গাওহার সিরাজ জামিল ৪০১, আব্দুল বারেক ৪০১, মো. জামাল উদ্দিন মিয়া ৪০১, মো. মনিরুজ্জামান ৪০১, মো. সামসুজ্জামান ৪০১, মোহাম্মদ রাশেদ ৪০১, ফজলে শামীম এহসান ৪০০, মনসুর আহমেদ ৩৯৯, মো. মামুনুর রশিদ ৩৯৯, খন্দকার সাইফুল ইসলাম ৩৯৮, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ৩৯৮, মো. ইয়াসিন ৩৯৭, রাজীব চৌধুরী ৩৯৭, ফওজুল ইমরান খান ৩৯৬, মোহাম্মদ জাকারিয়া ওয়াহিদ ৩৯৬, মো. মোরশেদ সারোয়ার ৩৯৩, মোহাম্মদ সেলিম ৩৯১, মিনহাজুল হক ৩৮৬, অমল পোদ্দার ৩৮০, রাকিব সোবহান মিয়া ৩৭৪, সালাহ উদ্দিন আহমেদ ৩৭০, নন্দ দুলাল সাহা ৩৫৪, রতন কুমার সাহা ৩৩৮ ভোট পেয়েছেন।
অনির্বাচিত তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী জিএম হায়দার আলী ১৬৩, মো. শাহজাহান আলম ১৫৩ ও মনির হোসেন শেখ ১৪০ ভোট পেয়েছেন।
এর আগে সবশেষ ২০১২ সালে বিকেএমইএ’র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওইবার সভাপতি নির্বাচিত হন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান। এরপর এ সংগঠনটিতে আর নির্বাচন হয়নি। গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত সবগুলো নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় সভাপতি নির্বাচিত হতেন জাতীয় পার্টির ওই সংসদ সদস্য।
এর আগে ২০১২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর বিকেএমইএ’র নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। ওই নির্বাচনে সেলিম ওসমানের নেতৃত্বের সম্মিলিত নীট পরিষদের ২২ জন বিজয়ী হন। সাবেক সভাপতি ফজলুল হক নেতৃত্বাধীন প্রগ্রেসিভ নিট অ্যালায়েন্স’র ৫ জন বিজয়ী হন।
ওইবার সেলিম ওসমানের নেতৃত্বাধীন প্যানেল থেকে নির্বাচন করেন মোহাম্মদ হাতেম। সেবার ভোটের হিসেবে প্রথম হন তিনি। ওই নির্বাচনে ৬৫২ জন ভোটারের মধ্যে ৫৯৭ জন ভোট দেন। এবং হাতেম পান ৫০৪ ভোট। যদিও পরবর্তীতে নির্বাচিত প্রার্থীদের সিদ্ধান্তে সংখ্যাগরিষ্ঠ প্যানেল প্রধান হিসেবে সভাপতি হন সেলিম ওসমান।
গত আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে সেলিম ওসমান আত্মগোপনে চলে যান। পরে আত্মগোপনে থাকা অবস্থাতেই পদত্যাগপত্র পাঠান এবং মোহাম্মদ হাতেমকে পরবর্তী সভাপতি করার পরামর্শ দেন। পরে বোর্ডের সিদ্ধান্তে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন মোহাম্মদ হাতেম। তিনি সেলিম ওসমানের নেতৃত্বের কমিটিতে নির্বাহী সভাপতি ছিলেন।
ওসমান পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ থাকলেও এবারের নির্বাচনে ৩৫ জনের প্যানেল ঘোষণা করেন হাতেম। তাদের প্যানেলের বিপরীতে পূর্ণ কোনো প্যানেল দেওয়া হয়নি। তবে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়েন তিনজন প্রার্থী।
হাতেম আগে ‘সম্মিলিত নীট পরিষদ’ থেকে নির্বাচন করলেও এবার তিনি প্রগ্রেসিভ নীট অ্যালায়েন্সের প্যানেলের নেতৃত্ব দেন। নিট পোশাক ব্যবসায়ীদের বৃহৎ সংগঠন- বিকেএমইএ’র প্রতিষ্ঠাতা দাবি করা মোহাম্মদ হাতেম গত ১০ মে নির্বাচনের দিন সাংবাদিকদের সামনে সর্বোচ্চ ভোট পাবার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কিন্তু ভোটের ফলাফল তাকে হতাশ করে।
যদিও পূর্ণ প্যানেলে জয়ের পর প্রোগ্রেসিভ নীট অ্যালায়েন্স-এর নেতা মোহাম্মদ হাতেম বলেন, অনেকদিন পর উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। সকল মালিকরা সুন্দর পরিবেশে ভোট প্রদান করেছেন। আমরা এই সুন্দর পরিবেশটা উপভোগ করেছি। ১৯৯৯ সালের ৫ ডিসেম্বর বিকেএমইএর জন্ম হয়। তখন থেকেই আমি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। তারই প্রতিদান আজ সকল সদস্যরা আমাকে দিয়েছে।