নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত আল রহমান লিংকন ) : প্রযুক্তির এ যুগে যোগাযোগের সব থেকে অন্যতম মাধ্যম র্স্মাট ফোন। বর্তমান সমাজের মানুষ, এর প্রতি এতোটাই নির্ভরশীল যে, র্স্মাট ফোন ছাড়া যেন চলেই না ! মাত্র দেড় বছরের শিশুটিও এখন বায়না ধরে র্স্মাট ফোনে কার্টুন দেখবে। এমনটাই জানালো নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গৃহিনী।
তিনি জানায়, খাওয়া কিংবা ঘুমানো, শিশুটির বায়না র্স্মাট ফোনে তাকে একটি কার্টুনের ভিডিও ছেড়ে দিতে হবে। আর তা না হলে নিস্তার নেই। অথচ প্রায় এক যুগ আগেও শিশুরা বেড়ে উঠতো নানা ধরনের কবিতা, গল্প এবং গানের মাধ্যমে। মা তার সন্তানকে গান বা কবিতা আবৃত্তি শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতো। কিন্তু আজ আর সেই সংস্কৃতি দেখতে পাওয়া যায় না। বর্তমান সময়ে অধিকাংশ শিশুরাই বেড়ে উঠছে মোবাইলের সঙ্গে সক্ষমতার মাধ্যমে।
শহরের প্রাণ কেন্দ্র চাষাড়া শহীদ মিনার। যেখানে ঘন্টার পর ঘন্টা মাথা নিচু করে কিছু একটা করছে চারজন তরুণ! যাদের দেখলে যে কারোই সন্দেহ অথবা কৌতুহল জেগে উঠবে কি করছে ওরা ! কারণ দূর থেকে বুঝা যাচ্ছে না আসলে ওরা কি করছে! শুধু তারাই না আশে পাশে আরো কয়েকটি জায়গায় একই চিত্র। একটু সামনে এগুলে জানা যায় আসল রহস্য। আসলে এরা লুডু কিং নামে একটি অ্যাপস গেইম নিয়ে মত্ত ছিল। যেখানে বসা ছিল নীরব (ছদ্মনাম) নামে একজন তরুণ। সে কাশিপুর এলাকার বাসিন্দা নবম শ্রেনীর ছাত্র। প্রতি ১০ মিনিটে একবার হলেও সে তার স্মার্ট ফোনটি চেক না করে থাকতেই পারে না। শুধু ঘুমের সময় কিছুটা বিরতি দিলেও খাওয়া এবং লেখাপড়ার ফাঁকেও সে তার র্স্মাট ফোনটি চেক করে। এসব তরুণদের মধ্যে ঠিকমতো পড়াশোনা করার সময়টুকুও যেন নেই। দিন রাত ব্যস্ত নিত্য নতুন গেমস, ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটস অ্যাপ কিংবা মেসেঞ্জার নিয়ে। প্রতিদিন বিভিন্ন সোশ্যাল সাইটে যতগুলো তথ্য আদান-প্রদান করে, এত কথা তারা সারাদিনে কারো সঙ্গেও বলে না। কিন্তু তারপরেও তার দাবী, লেখাপড়ার জন্য সাজেশন ও কথাপোকথনও হয়ে থাকে র্স্মাট ফোনের ব্যবহারের মাধ্যমে। এর কাছেই জানা যায়, স্মার্ট ফোনের সঠিক ববহার কতটা করছে তরুণ সমাজ।
আজকাল অধিকাংশ মানুষই হয়ে উঠছে প্রযুক্তিনির্ভর। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মই নয় পঞ্চাশ র্উধ্ব ব্যক্তির মাঝেও ছোয়া লেগেছে আধুনিকতার। তিনিও শিখে গেছেন, কিভাবে করবেন জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের ব্যবহার। সকলেই এখন প্রযুক্তির নেশায় আসক্ত হয়ে মূল্যবান সময়ের অপচয় করছে। স্মার্টফোনের প্রতি এমন মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি আমাদের কর্মদক্ষতা, সৃষ্টিশীলতা কমানোর পাশাপাশি সৃষ্টি করছে নানা দৈহিক ও মানসিক সমস্যা এমনটাই বলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এসব মানা কি সম্ভব? বর্তমানে প্রযুক্তির কাছে দিন দিন গ্রাস হতে চলেছি আমরা।
আর এসব স্মার্ট ফোনের ব্যবহারে নানা সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি বাংলাদেশেও কোনো অংশে কম নয়। জানা গেছে, বিবিসি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী ৬০টি দেশের ওপর জরিপ চালিয়ে যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে, সেখানে বলা হয়েছে- সাইবার নিরাপত্তার দিক দিয়ে সবচেয়ে অনিরাপদ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। তাহলে আমরা কতটা ঝুঁকিতে আছি, ভাবার বিষয় নয় কি? সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আধুনিকতার খারাপ দিকগুলোই আমরা বেছে নিচ্ছি। ইন্টারনেটের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে আনছি। তাই আমাদের উচিত, সময় থাকতে প্রযুক্তির ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসা। প্রযুক্তি আমাদের ব্যবহার করবে না; বরং আমরাই প্রয়োজন অনুযায়ী প্রযুক্তিকে ব্যবহার করব- এমন প্রতিজ্ঞা করা উচিত বলে পরার্মশ দেন বিশেষজ্ঞরা।