নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মাসব্যাপি লোকজ ও কারুশিল্প মেলার উদ্বোধন করা হয়েছে। মেলার উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি এমপি। এ সময় তিনি বলেন, নতুন প্রজম্মের কাছে অতীত ঐতিহ্য তুলে ধরার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। গ্রাম-বাংলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লোকজ ও কারুশিল্প বিকাশে নতুন কারু শিল্পিদের সুযোগ দিতে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সংস্কৃতি ও ঐহিত্যকে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন সোনারগাঁয়ে মাসব্যাপী লোকজ ও কারুশিল্প মেলা উদ্ধোধন উপলক্ষে প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে হস্তশিল্প ও কারুশিল্প একটি সম্ভবনাময় রপ্তানী খাত হতে পারে। সে জন্য আমাদের নতুন বাজার সৃষ্টি করতে হবে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে থাকা কারু শিল্পিদের কাজ করার জন্য ফাউন্ডেশনের ভেতরে স্থায়ী গ্যালারী নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে সোনারগাঁ জাদুঘরে ৪৮টি স্থায়ী গ্যালারী আছে, ভবিষ্যতে বাড়িয়ে ৬৪টি জেলার জন্য একটি করে গ্যালারী তৈরীর চেষ্টা চলছে। এ সময় বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন নির্মাণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শিল্পি জয়নুল আবেদীনের অবদানের কথা তুলে ধরেন তিনি।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক কবি রবীন্দ্র গোপের সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব আক্তারী মমতাজ ও নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ আনিছুর রহমান মিঞা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু নাসের ভুঞা, সোনারগাঁও পৌর মেয়র সাদেকুর রহমান, উপজেলা ভারপ্রাপ্ত ভাইস চেয়ারম্যান শাহআলম রূপন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাছিমা আক্তার, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সামছুল ইসলাম ভুইয়া, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সোহেল রানা, ডেপুটি কমান্ডার ওসমান গনি প্রমুখ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আলোচনা শেষে মঞ্চে এক মনোজ্ঞ লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পরে প্রধান অতিথি মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। মেলায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কারু শিল্পীদের পণ্য বিক্রির জন্য এবারের মেলায় ১৭২টি স্টল স্থান পেয়েছে। মেলার পাশাপাশি লোকজ মঞ্চে প্রতিদিন বাউলগান, কবিগান, পালাগান, জারি-সারি ও ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়াসহ বিভিন্ন সংগীতানুষ্ঠান পরিবেশিত হবে। এছাড়াও মেলায় দেশের বিলুপ্ত প্রায় গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন দৃশ্যবলী স্থানীয় স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হবে। মেলা চত্তরে লোকজ খেলার মাঠে বিভিন্ন ধরনের হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ খেলার প্রদর্শনী করা হবে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ৪৮ জন কারু শিল্পিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাদের শিল্পকর্ম তৈরি প্রদর্শন ও বিক্রয়ের জন্য। এদের মধ্যে রয়েছে ঝিনাইদহ ও মাগুরার শেলা শিল্প, রাজশাহীর শখের হাড়ি, চট্টগ্রামের নকশী পাখা, রংপুরের শতরঞ্জি, সোনারগাঁয়ের কাঠের পুতুল, কাঠের কারুশিল্প ও নকশী কাঁথা, সিলেটের শীতল পাটি, ধামরাইয়ের তামা কাঁসা ও পিতলের কারুশিল্প, বান্দরবান ও রাঙামাটির ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠির কারু পণ্য ও টাঙ্গাইলের বাঁশের কারুশিল্প। উৎসব উপলক্ষে ফাউন্ডেশন চত্বরকে সাজানো হয়েছে বর্ণাঢ্য সাজে। ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন স্থানে লোকজ ঢঙ্গে বসানো হয়েছে রঙ বে-রঙ্গের ব্যানার ফেস্টুন। ফাউন্ডেশন করা হয়েছে বর্ণিল আলোক সজ্জা। মেলায় সার্বক্ষনিক নিরাপত্তার জন্য বসানো হয়েছে ৩০টি সিসি ক্যামেরা। লোকজ উৎসব ও কারুশিল্প মেলা প্রতিদিন সকাল ৯টা হতে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত।