সেলিম ওসমানের অর্থায়নে বিতরণ করা হবে ৪৫ হাজার প্যাকেট ঈদ সামগ্রী

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( প্রেস বিজ্ঞপ্তি ) : অসহায় দরিদ্র পরিবার গুলোতে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিতে প্রতিবারের মত এ বছরেও নারায়ণগঞ্জের অসহায় পরিবার গুলোর হাতে ঈদ সামগ্রীর প্যাকেট তুলে দিবেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। তাঁর ব্যক্তিগত তহবিল থেকে মোট ৪৫হাজার প্যাকেট ঈদ সামগ্রী বিতরন করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। যার মধ্যে ২২ হাজার ৫০০ প্যাকেটে ১টি করে শাড়ি অবশিষ্ট প্যাকেটে ১টি করে লুঙ্গি, প্রত্যেক প্যাকেটে ১ কেজি পোলাও চাল, ১কেজি চিনি, ৫০০ গ্রাম গুড়ো দুধ, ৪০০ গ্রাম সেমাই, ১লিটার সয়াবিন তেল।

পাশাপাশি অসহায় পরিবার গুলোতে থাকা ২০ থেকে ২৫ হাজার শিশুর হাতে ঈদে নতুন পোশাক তুলে দেওয়ার জন্য  নারায়ণগঞ্জের ৮টি ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের প্রতি আহবান রেখেছেন তিনি। তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে শিশুদের হাতে নতুন পোশাক তুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ব্যবসায়ী সংগঠন গুলোর নেতৃবৃন্দরা। সেই সাথে শিশুদের হাতে নতুন পোশাক তুলে দিতে বিকেএমইএ সভাপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ১০ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া ঘোষনা দিয়েছেন তিনি।

সোমবার ২১মে বিকাল ৩টায় নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের তৃতীয় তলায় শীতলক্ষ্যা কমিউনিটি সেন্টারে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে অসহায় মানুষের মাঝে সহায়তা পৌছে দিতে এমপি সেলিম ওসমানের আহবানে তাঁর নির্বাচনী এলাকার আওতাধীন নাসিকের ১৭টি ওয়ার্ড এবং ৭টি ইউপি এলাকার জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা জানান।

মতবিনিময় সভায় জনপ্রতিনিধিদের প্রতি তিনি আহবান রাখেন, দলীয় অথবা ভোটার বিবেচনা করে নয় প্রকৃতি অসহায় মানুষের মাঝে যেন ঈদ সামগ্রীর প্যাকেট পৌছে দেওয়া হয়। যাতে করে অসহায় পরিবার গুলো অন্য দশজনের মত হাসি খুশি ভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারে। অসহায় মানুষটি আপনার পাশের বাড়ির মানুষ হতে পারে, আপনার আত্মীয়ের মাঝে যদি কেউ অসহায় হয় তবে তাকে একটি প্যাকেট দিতে কোন সমস্যা নাই।

তবে কোন অবস্থায় দলীয় অথবা ভোটার বিবেচনা করে প্যাকেট দিবেন না। ৭টি ইউনিয়ন পরিষদ এলাকার জন্য ২১ হাজার প্যাকেট এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকার ১৭টি ওয়ার্ডের জন্য ১৭ হাজার ঈদ সামগ্রীর প্যাকেট দেওয়া হবে। রমজান মাসের ২১তম থেকে ২৫তম দিনের মধ্যে আপনারা এসব প্যাকেট বিতরন করতে পারবেন। যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাঁরা সবাই মনে রাখবেন যারা আপনাদের সাথে নির্বাচন করেছেন উনারাও ভোট পেয়েছেন। উনারাও আপনাদের সহকর্মী। সবার মাধ্যমে সবার সহযোগীতা নিয়ে প্যাকেট গুলো বিতরন করবেন। ভোটার বিবেচনায় অসহায় মানুষদের বঞ্চিত করা হলে তাদের সাথে মোনাফেকি করা হবে।

এলাকার উন্নয়ন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি চাই আমার নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি ইউনিয়ন এলাকা উন্নত হোক। আর আমার নির্বাচনী এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব অপর একজন জনপ্রতিনিধির কাছে। যিনি সিটি কর্পোরেশনের মেয়র। উনি যদি আমাকে সহযোগীতা করেন এবং আমার সহযোগীতা চান তাহলে অবশ্যই আমি উনাকে সহযোগীতা করবো। আমি একটা কথা হলফ করে বলতে পারবো অনেকেই বলে থাকেন উনি মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার করেন না। কিন্তু এমন কোন ঘটনা নাই যে আমি বলবো আমার মেয়র আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছেন। কিন্তু আমাদের আশেপাশের কিছু লোক আমাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। সবসময় হয়তো তারা সফল হয়ে যায়। আমি মেয়রের কাছে অনুরোধ রাখবো, আপনি যেই কাজই করতে চান আলোচনার মাধ্যমে করেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আঘাত করবেন না। সম্পদটা আমার আপনার নয়। সম্পদটা জনগনের এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের। স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মন্দির, গীর্জায় যদি জনগনের সম্পত্তি থাকে তাহলে সিটি কর্পোরেশনের মালিক কিন্তু জনগন।

জনগনের সম্পত্তিতে যদি এসব প্রতিষ্ঠান হতে পারে তাহলে সিটি কর্পোরেশনের জায়গায় একটি স্কুল, বা মসজিদ অথবা মন্দির হতে আপত্তি নাই। আমি মর্গ্যাণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের কাছে অনুরোধ রাখবো উনি যাতে উত্তেজিত না হন। ঈদ শেষে আমরা সবাই মিলে বসবো ইনশাল্লাহ মর্গ্যাণ স্কুল আগের থেকে বেশি উন্নত হবে। এখানে উপস্থিত কাউন্সিলরবৃন্দরা মেয়রকে কথা গুলো জানাবেন। উনি যাতে উত্তেজিত না হন। প্রয়োজনে উনি আমার সহযোগীতা নিবেন আমিও উনার সহযোগীতা নিবো। আমি আপনাদের সামনে কথা দিলাম আনোয়ার ভাই আমাদের সকলের গুরুজন উনার সম্মানে সরকারী ভাবে হোক আর আমার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সহযোগীতা নিয়ে হোক মর্গ্যাণ স্কুলের উন্নয়ন আমি করবো।

তিনি আরো বলেন, আমি সাধারণ মানুষের জন্য যেটা করতে পারবো সেটা আমার পাশ্ববর্তী এলাকার সংসদ সদস্যরা এমনকি আমার নিজের ছোট ভাই শামীম ওসমান নিজেও সেটা করতে পারবেন না। কারন আমি দীর্ঘ ২২বছর যাবত ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছি। আমি সংসদ সদস্য হওয়ার পাশাপাশি ব্যবসায়ী সংগঠন বিকেএমইএ, এফবিসিসিআইএ নেতৃত্ব দিয়ে থাকি। আমার সাথে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী রয়েছে। ব্যবসায়ীরা আমাকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগীতা করে থাকেন। ব্যবসায়ীরা আমার জন্য কিছু করলে সেটা হবে সহযোগীতা। কিন্তু অন্য এলাকার সংসদ সদস্যরা এটা করতে গেলে মানুষ বলবে চাদাঁবাজি। তাই অন্যান্য এলাকার সংসদ সদস্যরা ইচ্ছা থাকলেও আমার মত করে করতে পারেন না।

হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ খেয়াঘাট দিয়ে ফেরী সার্ভিস চালু হওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মন্ত্রী মহোদয় ১৫দিনের ঘোষনা দিয়ে গেলেন ফেরী চালু করার জন্য। ফাইল চালাচালিতে অনেক সময় চলে গেল। কথা ছিল রোজার আগে ফেরী সার্ভিস চালু হবে। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ ফেরীতে যান্ত্রিক ত্রুটি সহ বিভিন্ন সমস্যা ফেরী চালু বিলম্ব হচ্ছে। তাই আমি চাই তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে যাতে ভাল কাজটি নষ্ট না হয়ে যায়। তাই সকল সমস্যা সমাধান করে আমরা হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ খেয়াঘাটে ফেরী সার্ভিস চালু করবো এমনো হতে পারে ৫নং ঘাট-ময়মনসিংহপট্টি দিয়ে দুইটি ঘাটে একসাথে ফেরী সার্ভিস চালু করা হবে। এটাই হবে নারায়ণগঞ্জ-বন্দরবাসীর ঈদ উপহার। ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জ-বন্দরবাসীর জন্য নবীগঞ্জ খেয়াঘাট দিয়ে পূর্ণাঙ্গ সেতু নির্মান করা হবে।

সদর ও বন্দর উপজেলার দুইজন চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমি তাদের দুইজনকে ধন্যবাদ জানাই যে উনারা আজকে এখানে উপস্থিত হয়েছেন। কারন আমার সাথে উনাদের এক মঞ্চে দেখলে পত্রিকায় গোল চিহ্ন দিয়ে ছবি ছাপা হয়। এসব কিছু উপেক্ষা করে দলমতের উর্ধে উঠে অসহায় মানুষের পাশে দাড়াঁনোর জন্য নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন।

জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, সারাদেশেই যানজট তীব্র আকার ধারন করেছে। কখনো রোদ, কখনো অতিবৃষ্টি, রাস্তায় খান খদ্দর এতোকিছুর নারায়ণগঞ্জে অন্যান্য জেলার থেকে যানজট অনেকটাই নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। এটা সত্যিই প্রশংসনীয়। সেই সাথে আমি নারায়ণগঞ্জের ছাত্রলীগ ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যারা সেচ্ছাসেবীর শ্রম দিয়ে শহরকে যানজটমুক্ত রাখার প্রানপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই সাথে আমি সাধারণ মানুষকে ধৈর্য্য ধারনের আহবান এবং সকলের সহযোগীতা কামনা করছি। যাতে করে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নারায়ণগঞ্জকে আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়।

উল্লেখ্য সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৪-২০১৭ সাল পর্যন্ত গত ৪ বছরে মোট ১লাখ ১৬  হাজার প্যাকেট ঈদ সামগ্রী বিতরন করেছেন এমপি সেলিম ওসমান। যার মধ্যে ২০১৪ সালে ২০ হাজার প্যাকেট, ২০১৫ সালে ২৬হাজার প্যাকেট, ২০১৬সালে ব্যক্তিগত তহবিল ও ব্যবসায়ীদের সহযোগীতায় ৫৬হাজার প্যাকেট, ২০১৭সালে ২০হাজার প্যাকেট ঈদ সামগ্রী বিতরন করা হয়েছে।  যার মধ্যে ছিল একটি শাড়ী, ১ কেজি ফ্রেস চিনি, ২৫০ গ্রাম ফ্রেস গুড়া দুধ, ১ লিটার ফ্রেস সয়াবিন তেল, ১ কেজি ফ্রেস আটা, ১ কেজি প্রাণ চিনিগুড়া চাল, ৪০০ গ্রাম চিকন সেমাই ছিল। চলতি বছর ২০১৮ সালে আরো ৪৫ হাজার ঈদ সামগ্রীর প্যাকেট সহ ব্যবসায়ীদের সহযোগীতায় ২০

মত বিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম সোলায়ামন, বিকেএমইএ এর সহ সভাপতি মনসুর আহম্মেদ, জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল, অ্যাডভোকেট মাহমুদা আক্তার, মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান মুন্না, সহ সিটি কর্পোরেশন এলাকার ১৭টি ওয়ার্ডে ২৩জন কাউন্সিলরদের মধ্যে ১৮জন কাউন্সিলর এবং ৭টি ইউপি এলাকার চেয়ারম্যানদের মধ্যে ৫জন চেয়ারম্যান সহ সকল সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

add-content

আরও খবর

পঠিত