নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্ট ) : বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট ময়ূরপঙ্খী ছিনতাই চেষ্টা মামলার তদন্তে এবার মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। এ ঘটনায় নিহত পলাশ আহমেদ ওরফে মাহাদির মনে শুধু স্ত্রী হারানোর বিরহ নয়, ৬০-৭০ লাখ টাকা খোয়ানোর বেদনাও ছিল। সব মিলিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যন্ত পলাশ এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে চেয়েছিলেন। তাই বিমান ছিনতাইয়ের মতো অদ্ভুত পরিকল্পনা করেন পলাশ। তদন্ত করতে গিয়ে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন মামলার তদন্তকারী সংস্থা চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট।
সংস্থাটির উপ-কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, এ মামলার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বলার মতো সময় হয়নি। তবে মামলা তদন্তে নানা ধরনের তথ্য হাতে আসছে। তথ্যগুলো যাছাই-বাছাই করা হচ্ছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক রাজেস বড়ুয়া বলেন, মামলায় অনেক কিছুই তো উঠে আসছে। আমরা সবকিছু তদন্ত করে দেখছি। ঘটনার আগে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন পলাশ। তিনি কী কী সংকটের মধ্যে তখন ছিলেন তা আমাদের তদন্তে উঠে এসেছে। এসব তথ্য আমরা তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করব।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, লন্ডনে পাঠানোর নাম করে বিভিন্নজনের কাছ থেকে ৬০-৭০ লাখ টাকা নিয়েছেন পলাশ। তবে তাদের কাউকে লন্ডনে পাঠাতে সক্ষম হননি তিনি। যা ভুক্তভোগীরা তদন্তে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। ওই টাকা পলাশের কাছ থেকে নানা কৌশলে চিত্র নায়িকা শিমলা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জেনেছে তদন্ত কর্মকর্তারা। প্রভাবশালী নানা মহলে শিমলার যাতায়াতের কারণে ওই টাকা উদ্ধার করাও সম্ভব ছিল না পলাশের পক্ষে।
একদিকে ৬০-৭০ লাখ টাকা হারানো, অন্যদিকে শিমলাকে হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছিলেন পলাশ। এসব দু:খ, ক্ষোভ কারও কাছে প্রকাশও করতে পারছিলেন না তিনি। এমনকি পাচ্ছিলেন না উপযুক্ত প্রতিকারও। এমন অবস্থায় নাটকীয় কিছু একটা করে এ সংকটের সমাধান চেয়েছিলেন পলাশ। যার পরিপ্রেক্ষিতে তার বিমান ছিনতাইয়ের ব্যর্থ চেষ্টা।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার কয়েক মাস আগে পাওনাদারদের কাছ থেকে আত্মগোপনে থাকতে নিজের ভাড়া বাসা ছেড়ে দেন পলাশ। নিজের বাসা ছেড়ে দেওয়ার পর শিমলার বাসা এবং বিভিন্ন হোটেলে রাতযাপন করতেন পলাশ।
তিনি বলেন, বিমান ছিনতাই চেষ্টা ঘটনার পর পলাশের কয়েকজন পাওনাদারের খোঁজ পেয়েছে তদন্ত দল। এ পর্যন্ত পাওয়া হিসাব মতে প্রায় ৭০ লাখ টাকা দেনা ছিল পলাশের। দেনার এ পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
তদন্ত কর্মকর্তারা অন্তত ১৬ জনের জবানবন্দি সংগ্রহ করেছেন। তবে তদন্তের ব্যাপারে সহযোগিতা করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না পলাশের সাবেক স্ত্রী শিমলা। এরই মধ্যে তার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকালে ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পর বিমানের ফ্লাইট ময়ূরপঙ্খী ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন পলাশ আহমেদ। বিমানটি চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। বিমানটি ছিনতাইয়ের প্রচেষ্টার পর শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। পরে প্যারা কমান্ডো অভিযান চালিয়ে জিম্মিদশা থেকে বিমানটি মুক্ত করা হয়। অভিযানেই নিহত হন ময়ূরপঙ্খী ছিনতাই চেষ্টাকারী পলাশ আহমেদ। সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন