নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : একদিকে নগরীর ফুটপাত ও সড়ক হকারমুক্ত রাখার পক্ষে একাট্টা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন। অন্যদিকে ফুটপাতে বসার দাবিতে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তবে নগরীর ফুটপাত থাকবে হকারমুক্ত; এই সিদ্ধান্তে অনড় সিটি মেয়র, স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার।
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তারা। বিকেল থেকে এই সভা শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
এই সময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিল্লাল হোসেন রবিন, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন, নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুস সালাম, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের দুই কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না ও শওকত হাশেম শকু।
এই সভায় হকারদের অন্যায্য আবদার না মেনে ফুটপাত নগরবাসীর চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। শহরকে সুশৃঙ্খল রাখতে এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ বলেও মন্তব্য করেন তারা।
যদিও এই সভাকে অনানুষ্ঠানিক বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র ও সংসদ সদস্য। তবে ফুটপাত দখলমুক্ত রাখার সিদ্ধান্তে অটল অবস্থানের কথা জানান এই দুই জনপ্রতিনিধি। এই ব্যাপারে প্রশাসনিক পর্যায়ে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রাখার কথা জানান জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার।
সভাশেষে সাংবাদিকদের সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘প্রথম বৈঠকে (প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত) নেওয়া সিদ্ধান্তের আলোকেই কাজ হচ্ছে। ওই বৈঠকের পর কীভাবে সমস্যাগুলোকে সমাধান করা যায় সেই লক্ষে এবার একটি অনানুষ্ঠানিক সভা হলো ডিসি অফিসে। আমি এমপি মহোদয়ের (সেলিম ওসমান) সঙ্গে একমত। (হকার ইস্যুতে) আমরা আমাদের ভোটারদের অগ্রাধিকার দেবো। সাধারণ মানুষের অধিকার ফুটপাত দিয়ে হাঁটা।’
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলা হকারদের সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে দেওয়া ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ বক্তব্যের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ‘আজকে তারা (হকার) অন্যায় কাজটা করেছে। গতকাল ২১শে ফেব্রুয়ারি ছিল, আজ ২২শে ফেব্রুয়ারি। সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা চলাকালীন কীভাবে হকার নামধারী কিছু খুনি, বাজে, অবৈধ লোক এভাবে হুঙ্কার দেয়, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলে? এত সাহস তারা কীভাবে পায়, তা আমারও বোধগম্য নয়।’
৮ শতাধিক হকারকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার বিষয়টি পুনরায় উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ‘মানবিকতার কারণে আমি ৬০০-৮৫০ জন পুনর্বাসন করেছি। আমি এমপি মহোদয়কে তালিকাগুলো চেক করার অনুরোধ করবো। যারা দোকানগুলো বিক্রি করে চলে এসেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করারও অনুরোধ জানাই।’
ফুটপাত মানুষের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে জানিয়ে সিটি মেয়র আইভী বলেন, ‘এরপর যারা হকারি করে নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের বিষয়ে আমরা, এমপি মহোদয় ও জেলা প্রশাসন মিলে কি করা যায় চিন্তা করবো। কিন্তু কোনো অবস্থাতে বঙ্গবন্ধু সড়ক দখল করে, যানজট সৃষ্টি করে, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি করে সরকারের বদনাম করা এবং নারায়ণগঞ্জকে জিম্মি করা; এটা কেউই বরদাস্ত করবো না।’
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান বলেন, ‘আজকের বৈঠক একটি আনঅফিসিয়াল ঘরোয়া বৈঠক ছিল। আজকে শহীদ মিনারে হকাররা যাচ্ছে-তাই কথা বলে আমাদেরকে (জনপ্রতিনিধি) চ্যালেঞ্জ করেছে। এইটা তাদের উচিত হয়নি। আমরা তাদের কাছে তালিকা চেয়েছিলাম, পর্যায়ক্রমে একটা ব্যবস্থা করার কথাও বলেছিলাম। কিন্তু তারা যাচ্ছে-তাই কথা বলছে, পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে তারা রাস্তায় মিছিল করেছে।’
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পূর্বে রাইফেলস্ ক্লাবে হকারদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন সেলিম ওসমান।
এই বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আজকে রাইফেল ক্লাবে হকারদের সাথে আমি বসেছি, সবার সাথে কথা বলেছি। আমরা কীভাবে সুন্দর সমাধান দিতে পারি সেই ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করছি। কীভাবে আমরা গাড়ি ও রিকশাসহ যানবাহন কমাতে পারি সেইটা নিয়েও ভাবছি। হকারদের সহযোগিতা করতে হলে তাদের নামের তালিকা আমাদের দিতে হবে। তাই বলে একজন মানুষকে দিয়ে একশ’ মানুষের ক্ষতি হবে, এই ধরনের সহযোগিতা আমরা করতে পারবো না। আমরা নারায়ণগঞ্জের মানুষ, জনপ্রতিনিধিরা চাই যারা আমাদেরকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন তারা যেন কোন কষ্ট না পায়, তাদের ছেলেমেয়েরা যেন কোন কষ্ট না পায়; সেই ব্যাপারে আমরা অটল থাকবো।’