নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : নারায়ণগঞ্জের কেন্দ্রীয় সিটি কবরস্থানে ওসমান পরিবারের পূর্ব পুরুষ ও বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধাদের কবরকে শ্মশানের মাটিতে ঢেকে দেয়ার ঘটনায় কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি নষ্ট করার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ এ.কে.এম শামীম ওসমান। ১০ই আগস্ট মঙ্গলবার দুপুরে মাসদাইর কবরস্থানে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধায় অংশগ্রহনকারী তাঁর পরিবারের সদস্যদের কবরে জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
এ সময় তিনি এ নেক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে দোষীদের দ্রুত শাস্তি দাবী করেছেন। এছাড়াও নিজ উদ্যোগে শ্রমিকদের দিয়ে বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের সেই কবরগুলো সংস্কার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এই সাংসদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা।
শামীম ওসমান বলেন, আমার বাবা মা ভাইয়ের নামে নারায়ণগঞ্জে সড়ক ও ব্রিজের নামকরণ করা হয়েছে। এটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে কাগজ যায় সেটি সকল দপ্তর হয়ে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বাস্তবায়ন হয়। নারায়ণগঞ্জের কিছু লোক গত ৮ বছর ধরে বিভিন্নভাবে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন আমরা সহ্য করছি। কারণ আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের পছন্দ করেন। আমার নেতাকর্মীরা, স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিরা কাল উত্তেজিত ছিল। আমি তাদের একটা কথাই বলেছি এই মাসটা আমাদের পিতার মৃত্যুবার্ষিকী, শোকের মাস। আমাদের বংশ নির্বংশ করা হয়েছিল এ মাসে। এ মাসে আমরা এমন কোন কর্মকান্ড করতে পারিনা যাতে জাতির পিতার অসম্মান হয়। আশা করি আমরা নায্য বিচার পাব। আমি মনে করি, এ বিষয়ে অবশ্যই তদন্ত হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে বিচার হওয়া উচিত।
তিনি আরো বলেন, মানুষের মৃত্যুর পর তার কোন কিছু থাকে না এটাই (কবরস্থান) তার শেষ ঠিকানা। এখানে যা হয়েছে আমার মনে হয় তা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার অপচেষ্টা। এখানে এ পুকুরে পিন্ড দান করা হতো। আগে কবরস্থান ও শ্মশানের মাঝে দেয়াল তৈরী করে পরে উন্নয়ন কাজ শুরু করলে ভালো হতো। ‘আমি এখন পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের কোন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, সিইও কিংবা এক্সিকিউটিচ ইঞ্জিনিয়ার যারা সরকারের পয়সা খান এবং নারায়ণগঞ্জের মানুষের ট্যাক্স এর পয়সায় লালিত পালিত আমি তাদের দেখিও নাই, আমি একজন এমপি আমার সাথেই কথা বলেননি অন্য কারো সাথে কথা বলার তো প্রয়োজনই মনে করেন না।
এমপি বলেন, আমি তো আমার আব্বা আম্মা দাদা দাদী ভাইয়ের কবর তো উদ্ধার করলাম আপনাদের সহযোগিতায়। কিন্তু বাকি কবরগুলোর যে অবস্থা এখানে যে প্রায় ৪০ থেকে ৫০টা কবর সেগুলোর কি হবে। শ্মশানের মাটি এখানে আসতে পারেনা কারণ প্রত্যেকটা ধর্মেরই একটা রীতি আছে যা মেনে আমাদের কাজ করা উচিত। মসজিদের সামনে আমি কোরবানি দিতে পারি কিন্তু আমি কোনদিন একটা মন্দিরে কোরবানি দিতে পারি না। কেউ যদি চায় তাহলে সেটা সাম্প্রদায়িকতা নষ্ট করার একটা প্রয়াস। শ্মশানের মাটি এখানে কবরে দিয়ে দেয়া হয়েছে যেটা কোন মানুষ মানতে পারেনা। এটা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা ও শোকের মাসে যারা বঙ্গবন্ধুর ডাকে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন তাদের প্রতি চরম অবমাননা। এখানে কোনটা কার কবর আমরা নিজেরাও বুঝতে পারছিনা। যাদের স্বজনদের কবর এখানে তাদের কি অবস্থা। আমি তো আমার কথা বলে নিজে হালকা হচ্ছি তারা কি করবে। আমি কারো বিরুদ্ধে কথা বলতে চাইনা। দুনিয়ায় যে আযাব আসছে এগুলো বিনা কারণে আসেনা।
তিনি আরো বলেন, আমি ভেবেছিলাম আজ এখানে সে দেখবো নাসিকের সিইও। আইভীর কথা বলবো না কারণ কিছুদিন আগে তার মা মারা গেছে। এখানে আসার মত অবস্থা নাও থাকতে পারে বাঁ মহিলা মানুষ কবরস্থানে নাও আসতে পারে নিয়ম কানুন আছে আমি জানি না। সিইও কোথায় যার অধীনে কাজ হয়েছে, যার কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের কবরের হদিস নেই।
এর আগে গত ৯ই আগস্ট সোমবার বিকালে কবরগুলো পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পাশে থাকা শ্মশানটির উন্নয়নকল্পের ঠিকাদার ও দায়িত্বরতদের ৪৮ ঘণ্টা সময় দেন। তবে ১০ই আগস্ট মঙ্গলবার দুপুরেই নিজ পরিবারের সমাধিতে চাঁদর চড়িয়ে এবং আতর ছিটিয়ে বিশেষ মোনাজাত করেন তিনি।