নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নিজস্ব প্রতিবেদক ) : নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন সবুজের বড় ছেলে অনন্ত শাহার উপর কিশোর গ্যাংয়ের হামলা ও ছুরিকাঘাতের ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে কিশোর গ্যাংয়ের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃত কিশোররা হলো : গোলাম মারুফ জিদান (১৭), মো.সামিউল ইসলাম আবির (১৬) এবং আলিফ আহম্মেদ জিহান (১৭)।
এরআগে গত ৩ই এপ্রিল রবিবার পৌনে ১০টার দিকে ফতুল্লা থানাথীন মাসদাইর ঈদগাঁ সংলগ্ন মেলা ফুডের সামনে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। এসময় কিশোর গ্যাংয়ের হামলা ও ছুরিকাঘাতে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে আহত হন অনন্ত। সেই সময় পিঠের ক্ষতস্থানে ১৮টি সেলাই দেয়া হয়। ওই হামলায় ১৫/২০ জনের একটি কিশোর গ্যাং গ্রুপ ছিল। দুই গ্রুপের মধ্যে সিনিয়র ও জুনিয়র দ্বন্দ্বের জের ধরে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ বিষয়ে আহত অনন্ত জানায়, তার পথরোধ করে তাকে প্রথমে ঈদগাঁ মাঠের ভেতরে নেয়ার চেষ্টা চালায়। এসময় তার সঙ্গে ধস্তধস্তির এক পর্যায়ে তাকে পিঠে ছুরিকাঘাত করা হয়। সন্ত্রাসীরা তাকে এলোপাথারী পিটিয়ে অপহরণের চেষ্টার এক পর্যায়ে আহতাবস্থায় তাকে ফেলে দ্রুত দৌড়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
ঘটনার পরই রাত পৌনে ১২ টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থল অভিযান চালিয়ে ফতুল্লা মডেল থানাধীন ১৩ নং ওয়ার্ড এর আল্লামা ইকবাল (কলেজ রোড) রোডস্থ এফ এম গলির আব্দুল ওয়াদুদ ভুইয়ার ভাড়াটিয়া গোলাম হায়দারের ছেলে গোলাম মারুফ জিদান, একই থানার জামতলাস্থ হিরা কমিউনটি সেন্টারের গলির টুটুল মিয়ার ভাড়াটিয়া মো. জাকির হোসেনের ছেলে সামিউল ইসলাম আবির এবং জামতলাস্থ মোল্লা টাওয়ারের ৪র্থ তলার মিঠু আহম্মেদের ছেলে আলিফ আহম্মেদ জিহান কে গ্রেফতার করেন পুলিশ।
হামলার ঘটনায় শরীফ উদ্দিন সবুজ জানান, গত ৩ই এপ্রিল রবিবার রাতে বন্ধুদের সাথে অনন্ত তার দাদা–দাদীর কবর জিয়ারত করতে মাসদাইর কেন্দ্রীয় কবরস্থানে যায়। জিয়ারত শেষে বাসায় ফেরার পথে মাসদাইর ঈদগাঁয়ে সামনে তাদের ৫ জনকে ঘিরে ধরে ১৫ থেকে ২০ জন কিশোর। এ সময় তারা অনন্তকে বলে তুমি কি সিয়ামের বন্ধু ? অনন্ত বলে হ্যা। এরপরই তাকে টেনে হেচড়ে ঈদগাঁয়ের ভেতর নেয়ার চেষ্টা করে কিশোর সন্ত্রাসীরা। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তারা অনন্তের পিঠে ছুরিকাঘাত করে। এবং অনন্তের ২ বন্ধুকেও আহত করে। এসময় আহত অবস্থায় অনন্ত দৌড়ে কলেজ রোডের দিকে আসতে থাকে। তখন হামলাকারীরাও তার পিছু নেয়। এক পর্যায়ে অনন্তের চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন ও আমাদের পরিচিতজনরা এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে অনন্তকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তার ক্ষত স্থানে ১৮টি সেলাই দেয়া হয়েছে।
হামলার ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আহত অনন্তের বাবা শরীফ উদ্দিন সবুজ বাদী হয়ে গোলাম মারুফ জিদান (১৭), মো.সামিউল ইসলাম আবির (১৬) এবং আলিফ আহম্মেদ জিহান (১৭), মো. আনান (১৭), নাহিয়ান (১৭), আব্দুর রহমান পল্টু (২২) সহ অজ্ঞাত নামা ১৫/২০ জন বিরুদ্ধে আসামী করে ফতুল্লা মডেল থানায় ৪ঠা এপ্রিল সোমবার সকালে মামলা দায়ের করেছেন।মামলায় উল্লেখ্য করা হয়েছে, বাদীর ছেলে আহাম্মেদ অনন্ত শাহ (১৬) নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুলে ১০ম শ্রেণীর ছাত্র। অনন্তর বন্ধু মো. সিয়াম (১৫) নারায়ণগঞ্জ আদর্শ স্কুলে পড়াশুনা করে। অভিযুক্ত আসামীরা সিয়ামের বন্ধু। সেই সুবাদে গত কয়েকদিন পূর্বে অভিযুক্ত আসামীদের সাথে অনন্তের পরিচয় হয়।
সিয়ামের সাথে অভিযুক্তদের ছোট ভাই ও বড় ভাইকে কেন্দ্র করিয়া দ্ধন্ধ চলছিলো। সিয়ামের সাথে চলাফেরা করায় অভিযুক্তরা অনন্তের উপর ক্ষিপ্ত ছিলো। ৩ই এপ্রিল রবিবার রাতে নারায়ণগঞ্জের কেন্দ্রীয় মাসদাইর কবরস্থানে কবর জিয়ারত শেষে দুই বন্ধুকে সাথে নিয়ে বাসায় ফেরার পথে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন মেলাফুড ভিলেজের সামনে পৌছামাত্র অভিযুক্তরা তাদের সাথে থাকা হাতে ছোরা, হকিস্টিক, সুইচ গিয়ার চাকু, বাশের লাঠি, লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম সহ হত্যার ধারালো ছুরি দিয়ে অনন্তের পিঠে ছুরি দিয়ে পিঠে আঘাত করে। এ সময় হামলাকারীরা অনন্তের সাথে থাকা একটি হাত ঘড়ি, একটি মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। হামলাকারীদের কবল থেকে রেহাই পেতে ডাক–চিৎকার করলে স্থানীয় পথচারীরা এগিয়ে এলে অনন্ত কে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফতুল্লা মডেল থানার উপপরিদর্শক হুমায়ুন (থ্রি) জানায়, মামলা হয়েছে।এজাহারনামীয় তিন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জড়িত সকল আসামীদের কে গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।