সাংবাদিকদের সহযোগীতায় বাল্য বিবাহ থেকে রক্ষা পেল ৫ম শ্রেনী ছাত্রী

নারায়ণগঞ্জবার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও পৌরসভার দরপত ঈদগাহ এলাকার আলী আকবরের মেয়ে (১৪)কে একই এলাকার সিরাজুল ইসলামের বেকার ছেলে বাবুল মিয়ার (২৫) সাথে মোটা অংকের টাকা খেয়ে বিয়ে দিয়েছে পৌরসভা ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহাজালাল ও দরপদ জামে মসজিদের সভাপতি ভারপ্রাপ্ত কাজী আবু হানিফ মাষ্টার। বাল্য বিবাহের এমন খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু নাছের ভূঞা, ম্যাজিষ্ট্রেট এস.এম জাকারিয়া, পুলিশ ও সুশীল সমাজের হস্তক্ষেপে বিয়ে ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বিকালে দরপত বড়বাড়ীর সিরাজুল ইসলামের ছেলে বাবুলের সাথে আলী আকবরের মেয়ের বিয়ের প্রস্তুতি চলছিল। বর কনের নিকট আত্মীয়, কাজী হানিফ, শাহজালাল ছাড়া গ্রামের সকলের কাছে মেয়ের বয়স কম থাকার বিষয়টি গোপন রাখে। দরপদ বড়বাড়ী মসজিদের ইমাম মাওলানা খাইরুল বাশার বিয়ে পড়িয়ে চলে যান। যে বাড়িতে বিয়ে হয়েছে বাইরে থেকে কারো বোঝার উপায় ছিল না। সংবাদের ভিত্তিতে সাংবাদিক মাসুদ রানা (দৈনিক বর্তমান দেশবাংলা), শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া (কালেরছবি), এম আই ফারুক আহমেদ (দিনকাল), আব্দুল হালিম নিশান (ভোরেরকথা) ও সংবাদ প্রতিদিনের নিজস্ব প্রতিবেদক ইসমাইল হোসেন টিটু খবর পেয়ে বাল্য বিবাহের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু নাছের ভূঁঞাকে অবগত করেন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু নাছের ভূঁঞা সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, এটা কখনো হতে পারে না। দয়াকরে আপনারা এ বিয়ে বন্ধ করেন। সমাজে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের জন্য আমি আপনাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে পুরস্কার প্রদান করব। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘটনাস্থলে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও পুলিশ পৌছাবে। তারপরও আপনাদের কথা না শুনে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করলে আমি মাষ্টারের কাজী গিরি ছুটিয়ে দেব আর নব কাউন্সিলর শাহাজালালের কাউন্সিলর গিরিও। সরেজমিনে দেখা যায়, সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে তারা বিব্রত হয়ে তড়িঘড়ি করে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেন। বিষয়টি যেন জানাজানি না হয় সে জন্য সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখাতে থাকে। কিছুক্ষনের মধ্যে সহকারি কমিশনার (ভূমি) এস এম জাকারিয়া ঘটনাস্থলে পৌছলে উৎসুক গ্রামবাসী ভীড় করতে থাকে। এ সময় মেজিষ্ট্রেট এস.এম জাকারিয়ার উপস্থিতি টের পেয়ে বরকনেসহ অভিভাবকগন পালিয়ে যান। পরে কৌশলে তাদেরকে খুজে বের করে সাদা কাগজে বিয়ে হয়নি এই মর্মে উপস্থিত ১০ জন স্বাক্ষীসহ অঙ্গীকারনামা তৈরি করেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট। উক্ত অঙ্গীকারনামায় ছেলে, ছেলের বাবা, মেয়ের বাবা ও স্থানীয় মুরব্বীগণের স্বাক্ষর রেখে ১৮ বছরের আগে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকান্ড করবে না মর্মে অঙ্গীকার করিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দরপত বড়বাড়ি এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, আমরা সারাদিন বাজারে থাকি অথচ আলী আকবরের মেয়ের বিয়ে কই বাজারের বা গ্রামের কেউতো কিছুই জানেনা। আপনারা জানলেন কিভাবে! দরপত টোটালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মোতালেব মিয়া বলেন, মেয়েটি মাত্র ৫ম শ্রেনী পাশ করেছে। আমি তাকে ভালোভাবে চিনি। এইটুকু মেয়ের বিয়ে হয় কি করে! আমি বিয়ের সাথে জড়িতদের শাস্তি ও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সমাজ বিশেষজ্ঞদের মতে, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। বাল্য বিবাহ একটি মেয়ের স্বাভাবিক বিকাশের জন্য বড় বাধা। মা ও সন্তানের জীবনের ঝুকির কারন। বর্তমান সরকার বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগের নির্দেশ প্রদান করেছেন। সমাজের জড়িত প্রভাবশালীদের এ ধরনের ঘৃন্য পদক্ষেপের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা না করা হলে তারা ভবিষ্যতে আরো বেপোরয়া হয়ে উঠবে। সরকার পক্ষের আরও শক্ত অবস্থানের ব্যাপারে আশাবাদী, তারা যেন ভবিষ্যতে ঐ গ্রামের আর কোন কিশোরীকে বিয়ের নামে মেধা বিকাশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করতে না পারে।

add-content

64 thoughts on “সাংবাদিকদের সহযোগীতায় বাল্য বিবাহ থেকে রক্ষা পেল ৫ম শ্রেনী ছাত্রী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও খবর

পঠিত