নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের নিজ বাসায় ছুরিকাঘাতে নাজমুল সাকিব নাবিল (২০) নামে তরুণ ছেলের হত্যার পরদিন অভিযুক্ত পলাতক সেই মায়ের ঝুলন্ত মরদেহ নরসিংদীর একটি হোটেল থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। ৩১ই মে সোমবার বিকালে নরসিংদী শহরের বাজিরমোড়ে নিরালা নামক আবাসিক হোটেল থেকে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করে সদর মডেল থানা পুলিশ।
নরসিংদী পুলিশ জানিয়েছে, আবাসিক হোটেলের ওই কক্ষে লাশ উদ্ধারের সময় ওই নারীর পা ফ্লোরে লাগানো অবস্থায় ছিলো। নাক দিয়েও রক্ত বের হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্তের পরে বলা যাবে–এটা হত্যা আত্মহত্যা। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হোটেলের ম্যানেজার নাদিমকে আটক করা হয়েছে।
তবে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, নরসিংদীতে উদ্ধার হওয়া নারীর লাশের বাবার নাম ও চেহারায় মিল পেয়েছি আমরা। লাশ শনাক্ত করতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ওই নারীর হোটেলের রেজিস্টারে তার নাম রেহানা আক্তার উল্লেখ্য করেছিলো । তবে নরসিংদীর পুলিশের অনুসন্ধানে মিলে জাতীয় পরিচয় পত্র থেকে নাসরিন আক্তার (৩০) পিতা : আবু তাহের, মাতা : ফাতেমা জোহরা, গ্রাম : ডোকাদি, নরসিংদী নাম ছিলো। লাশটি নাসরিন এর এটা আমরা নিশ্চিত হয়েছি। তিনি ওখানে গিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
উল্লেখ্য, এর আগে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে নিজ বাসায় ছুরিকাঘাতে নাজমুল সাকিব নাবিল (২০) নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী খুন হয়েছে। ৩০ই মে রবিবার গভীর রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নাবিলের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর থেকে নিহতের মা নাসরিন বেগমকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
একমাত্র ছেলে ছিলেন নাবিলকে নিয়ে মা নাসরিন বেগম ও বাবা সগির আহমেদ সিদ্ধিরগঞ্জ পাইনাদি নতুন মহল্লায় একটি দোতলা বাড়িতে নিজেদের ফ্ল্যাটে থাকতেন। নাবিল ডেমরা সারুলিয়ায় একটি মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী বলে জানা যায়।
নিহতের বাবা সগির আহমেদ জানান, আমি ব্যাংকে চাকরি করি । রবিবার আমি যখন অফিসে চলে যায় তখন আমার স্ত্রী ও ছেলে বাসায় ছিল। রাত ৮টার দিকে আমি অফিস থেকে ফিরে বাসার দরজায় বড় তালা ঝুলতে দেখি। পরে নিজের কাছে থাকা চাবি দিয়ে তালা খুলে ভেতরে ঢুকে ছেলে নাবিলকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। তার মাথা, গলা, বুক ও পেটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল। সঙ্গে সঙ্গে তিনি নাবিলকে উদ্ধার করে সিদ্ধিরগঞ্জে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার অবস্থা অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা মেডিকেল পাঠিয়ে দেন। এরপর ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসকরা নাবিলকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনার পর থেকে নাবিলের মা নাসরিন বেগমকে পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, নাসরিনের কিছুটা মানসিক সমস্যা রয়েছে। ১০ বছর ধরে তার এই সমস্যার চিকিৎসাও চলছিল। মানসিক সমস্যা দেখা দিলে সে উল্টাপাল্টা কথাবার্তা ও সবার সঙ্গে রাগ করতো। মা নাসরিন বেগম এই ঘটনা ঘটাতে পারে বলে তার ধারণা। তবে তাকে পাওয়া গেলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এদিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফারুক হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছি। নিহতের মৃতদেহটি ঢাকা মেডিকেল মর্গে রয়েছে। বিস্তারিত তদন্ত চলছে।