সন্তান‌দের ‌শরী‌রে কে‌রো‌সিন ঢে‌লে আগুন দেয় মা : প্রে‌মি‌কের জবানবন্দ‌ি

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( আড়াইহাজার প্রতিনিধি ) : আড়াইহাজারে পরকীয়ার জের ধরে শিশু হৃদয় হত্যা মামলার অন্যতম আসামী রাশেদুল ইসলাম মোমেন ৪ দিনের পুলিশ রিমান্ড শেষে শনিবার আদালতে শেফালীকে হত্যার জন্য দায়ী করে জবানবন্দী দিয়েছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক আবুল কাশেম আদালতের বরাত দিয়ে জানান, ঘটনার দিন রাতে রাশেদুল ইসলাম মোমেন শেফালী আক্তারের সাথে রাত্রি যাপন করার সময় শেফালী আক্তার তাকে বিয়ে করে ঢাকায় নিয়ে রাখার জন্য বলে। এতে রাশেদুল ইসলাম মোমেন তার স্ত্রী ও তিন সন্তান আছে জানিয়ে বিয়ে করতে অপারগতা জানালে শেফালী আক্তার তার সন্তানদের হত্যার কথা বলে।

তার প্রেক্ষিতেই ঘুমন্ত দুই শিশু পুত্র হৃদয় ও জিহাদ এর সারা শরীরে কেরোসিন ঢেলে মা শেফালী আক্তার আগুন দেয় বলে জানায়। ঘটনার সময় প্রেমিক রাশেদুল ইসলাম মোমেন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং হত্যায় সহযোগিতা করেছিলেন বলেও স্বীকার করেন।

এর আগে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট ২য় আদালতের বিচারক মেহেদি হাসানের আদালতে পাঠালে সে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী দেন। ঐ দিন সে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল আড়াইটা পর্যন্ত শিশু হত্যার দায় স্বীকার করে হত্যাকান্ডের বর্ণনা দেন।

সে আদালতে তার বর্ননায় বলেন, দীঘৃদিন যাবৎ শেফালী আক্তারের সাথে তার পরকীয়া প্রেম ও অনৈতিক সম্পর্ক চলে আসছিল। তাদের এ সম্পর্ক সবাই জেনে গেলে এলাকায় বিচার শালিস হয়। এতে করে শেফালী আক্তারকে তার স্বামী তালাক দেয়।

এর আগে ১৪ এপ্রিল শিশু হৃদয়ের মা শেফালী আক্তার একই আদালতে তার প্রেমিক রাশেদুল ইসলাম মোমেনকে তার শিশু পুত্র হৃদয় হত্যাকারী বলে দায়ী করে জবানবন্দী দিয়েছেন।

২২ এপ্রিল রবিবার ভোররাতে আড়াইহাজার থানা পুলিশ, নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশের যৌথ প্রচেস্টায় ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানা পুলিশের সহযোগিতায় নান্দাইল থানার মেরাকোনা গ্রামে অভিযান চালান পুলিশ। সেখানে রাশেদুল ইসলাম মোমেন এর দুঃসম্পর্কের আত্মীয় মোসলেম উদ্দিন ফকিরের ঘর থেকে রাশেদুল ইসলাম মোমেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক আবুল কাশেম জানান, একে অপরকে দায়ী করে জবানবন্দী দিয়েছেন। তবে হত্যাকান্ডের সাথে দুজনই জড়িত।

প্রসঙ্গত আড়াইহাজার উপজেলার উচিৎপুরা ইউনিয়নের বাড়ৈপাড়া গ্রামের বাহরাইন প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী শেফালী আক্তারের সাথে তার বৈমাত্রেয় ভাই রাশেদুল ইসলাম মোমেনের দীর্ঘদিন যাবৎ পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক চলছিল।

তাদের দুজনের অনৈতিক কর্মকান্ড শেফালী আক্তারের ছেলেরা দেখে ফেলে। এত শেফালী আক্তার ও তার প্রেমিক রাশেদুল ইসলাম মোমেন শিশু হৃদয় ও জিহাদদের উপর ক্ষুব্দ ছিল। দুই শিশু ছেলের কারনে তাদের এ অনৈতিক সম্পর্ক ফাঁস হয়ে যাওয়ায় এবং শেফালী আক্তারের স্বামী শেফালী আক্তারকে তালাক দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ায় দুই সন্তানের উপর প্রচন্ড ক্ষুব্দ ছিল মা শেফালী আক্তার ও প্রেমিক রাশেদুল ইসলাম মোমেন।

তাই তারা তাদের অনৈতিক কাজের স্বাক্ষী দুই শিশু হৃদয় ও জিহাদকে হত্যার পরিকল্পনা করে, ঘটনার দিন ঘুমন্ত শিশুদের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুণ ধরিয়ে দিলে শিশু হৃদয়(৯) আগুনে সম্পূর্ন দেহ পুড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু বরণ করে এবং শিশু জিহাদ(৭) এর শরীর পুড়ে যাওয়ার সময়, চিৎকার দিলে বাড়ির লোকজন তাকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠালে জিহাদ মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পায়।

add-content

আরও খবর

পঠিত