নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : দেশের অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি ও সংস্কারের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-(সুজন) নারায়ণগঞ্জ জেলা।
শনিবার (১ মার্চ) সকালে চাষাঢ়ায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
সুজন নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েলের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাসেল আদিত্যের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক হিমাংশু সাহা, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নূরউদ্দিন আহম্মেদ, গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রধান সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন, বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সদস্য সচিব আবু নাঈম খান বিপ্লব, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট প্রদীপ ঘোষ প্রমুখ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত হচ্ছে, কিন্তু আরেকটি প্রস্তাবনা আসছে গণপরিষদ নির্বাচন। যদি গণপরিষদ নির্বাচন হয়, তবে সেই গণপরিষদের অধিবেশনে সংস্কারগুলো পাশ করানো যেতে পারে। তবে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার তার ইচ্ছামতো সংস্কারগুলো পরিবর্তন করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, সংস্কার সংস্কার বলে নির্বাচন বিলম্বিত করায় দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। কিছু রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় সন্ত্রাসী ও দখলদার গোষ্ঠী অবাধে তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তাদের প্রতিহত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যর্থ।
তিনি অভিযোগ করেন, জিমখানা, মণ্ডলপাড়া, র্যালীবাগানে মাদকের পাইকারি ব্যবসা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা জানে, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয় না। সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীরা কি এতই শক্তিশালী যে তারা পুলিশের চেয়ে বেশি ক্ষমতাধর? আমি পুলিশ প্রশাসনকে ধিক্কার জানাই। নারায়ণগঞ্জে ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়ছে, কিন্তু প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, অনেক পেশাজীবী মানুষ ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছে। তাই পুলিশ প্রশাসনকে বলছি, দ্রুত ব্যবস্থা নিন। তা না হলে সুজনসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন রাস্তায় নেমে এসপি অফিস ও থানাগুলো ঘেরাও করবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক সরকার নেই, কিন্তু হাট-বাজার, ঘাট সব কিছু দখল হয়ে গেছে। চাঁদাবাজি বেড়েছে। কারা করছে, তা প্রশাসন জানে। এটি বন্ধ করা যাচ্ছে না কেন? রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে বলছি, মুখে মুখে না বলে কার্যক্ষেত্রে প্রমাণ করুন। খেয়াঘাট, বাসস্ট্যান্ডে নিজেদের মধ্যে হানাহানি করে দখলের প্রতিযোগিতা চলছে। নারায়ণগঞ্জের মানুষ এসব থেকে মুক্তি চায়। তারা নিরাপদে চলাচল করতে চায়।
গণসংহতি আন্দোলনের তরিকুল সুজন বলেন, ৫ আগস্টের আগের ও পরের বাংলাদেশ এক নয়। ৫ আগস্টের আগে যারা শেখ হাসিনার পতনের জন্য জীবন দিয়েছিল, তারা চায়নি যে ৫ তারিখের পর আইনশৃঙ্খলার অবনতি হবে। তারা চেয়েছিল একটি নতুন বাংলাদেশ, যেখানে লুটপাট, দখলবাজি, টেন্ডারবাজি থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোই আইনশৃঙ্খলার অবনতির জন্য দায়ী। তাদের সাথে যুক্ত আছে আওয়ামী লীগের দোসররাও। ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন মামলার বাণিজ্য হয়েছে।
৫ আগস্টের আগের এবং পরের বাংলাদেশ এক নয়। এক দুর্বৃত্তকে তাড়িয়ে আরেক দুর্বৃত্তের ভোগদখলের জন্য হাজার হাজার ছাত্র-জনতা জীবন উৎসর্গ করেনি। আমরা একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে জীবন বাজি রেখেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজ সারা দেশে অব্যাহতভাবে খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি, লুটপাট, হাট-ঘাট-মাঠ দখলের মহোৎসব চলছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ চেয়েছিল এমন একটি দেশ, যেখানে ক্ষমতার পেশিশক্তি, লুটপাট, দখলবাজি ও টেন্ডারবাজি থাকবে না। কিন্তু বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাই, দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটিয়ে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করুক।
তরিকুল সুজন আরও বলেন, খাদ্যে বিষক্রিয়া যেমন মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি তৈরি করে, তেমনি জুলাই শহীদদের হত্যাকাণ্ড নিয়ে মামলা বাণিজ্যও বিচার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে এবং গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আমরা এমন একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চাই, যা জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করবে, ভোটাধিকার নিশ্চিত করবে এবং নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা দেবে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করে স্বৈরতন্ত্রের কবর রচনা করাই হবে সেই নতুন বন্দোবস্তের লক্ষ্য। এই নতুন রাজনীতির জন্য আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। আমরা আশা করি, জনগণ এই লড়াই অব্যাহত রাখবে এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মাধ্যমেই শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ হবে।
মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি প্রদীপ সরকার, সুজনের সদস্য সাব্বির আল ফাহাদ, জহিরুল ইসলাম মিন্টু, তারেক উল্লাহ, তৌফিক আহমেদসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা।