নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : নারায়ণগঞ্জ সরকারী মহিলা কলেজের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম রফিকের বিরুদ্ধে মাস্টার্স পরিক্ষার্থীদের খাতা আটকিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। আর শিক্ষক জাতিকে গড়ার কারিগর। তবে এবার শিক্ষকের অসদাচরণে, কলংক লেপন করলো র্অথনীতি বিভাগের প্রভাষক রফিকুল ইসলাম রফিক। অভিযোগ উঠেছে, পরিক্ষার শুরুর ১৫ মিনিট এর মধ্যেই খাতা নিয়ে যায় সবার। পরে ২ ঘন্টা পর খাতা ফেরত দেয়ার কথা বলে, তিন দফায় ঘুরিয়ে আর পরীক্ষার খাতা ফেরত দেয়া হয়নি। বরং পরিক্ষার্থী পা ধরে ক্ষমা চাওয়ায় দেয়া হয় ধিক্কার, করা হয় লাঞ্ছনা।
লাথি আর থাপ্পর মেরে বলা হয়, আমি খোদা না। স্যারকে এমন আকুতি করার একপর্যায়ে তিনি বলেন, তুমি যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা শামীম ওসমানের সন্তান হও তাতে আমার কিছু যায় আসেনা, আই ডোন্ট কেয়ার। এক মেয়েকে আত্যহত্যার করতে বলেন – হু মরে যাও ! মারা গেলে তুমিও হেড লাইনে আসতে পারবা আমিও পারবো!! টিভিতে দেখাইবো। যেখানে ৪০ টা শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত গলা টিপে হত্যা করেছে বলে আক্ষেপ জানায় পরীক্ষার্থীরা ! ১৩ নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে গত ২৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া মাস্টার্স পরীক্ষার মঙ্গলবার ছিলো ৪র্থ তম পরীক্ষা। যে পরীক্ষায় অংশ নিতে তোলারাম কলেজের শিক্ষার্থীদের ব্যাবস্থাপনা ও হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছে নারায়ণগঞ্জ সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। এরই ধারাবাহিকতায় দূরদূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার হলে প্রবেশ করে। দুপুর ১টা থেকে মাষ্টার্স এর পরীক্ষা শুরু হয়। দুপুর ১টা ১০ মিনিটে শিক্ষক রফিকুল ইসলাম সকল শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন থাকলে দেয়ার জন্য বলে। পরীক্ষার্থীরা শিক্ষকের নির্দেশ পালন করে তাদের কাছে থাকা মুঠোফোন জমা দেয়।
কিন্তু মুঠোফোন নেয়ার পাশাপাশি তাদের পরীক্ষার খাতা নিয়ে যায় এবং তাদের ওএমআর ফরম পূরণ করার সময় কেড়ে নিয়ে যায়, এমন অভিযোগ করে পরীক্ষার্থীরা বলেন, কেন্দ্রে মোবাইল আনা নিষেধ তা সঠিক। কিন্তু আমরা বিগত তিনটি পরীক্ষায় দেখেছি সকলেই মোবাইল ফোন নিয়ে আসছে। স্যারদের পক্ষ থেকে কোন নিষেধাজ্ঞা বা বাধাঁর সম্মূখিন হয়নি পরীক্ষার্থীরা। হঠাৎ করে আজ আমাদের মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। এবং কয়েকজনের ম্যানুয়াল সাধারণ মোবাইল দিয়ে দেয় কিন্তু আমাদের ব্যবহৃত এন্ড্রোয়েড মোবাইলও নিয়ে যায়। গেইট লাগিয়ে রাখা হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা স্কুলটির প্রিন্সিপালকে জানালে তিনি তাদের খাতা দিয়ে দিতে বলেন। কিন্তু শিক্ষক রফিক তাদের খাতা দেননি।
পরীক্ষার্থীরা জানায়, স্যারকে অনেক অনুরোধ করার পরেও তিনি আমাদের খাতা দেননি এমনকি তিনি বলেন, তুমি যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা শামীম ওসমানের সন্তানও হও তাতে আমার কিছু যায় আসেনা, আই ডোন্ট কেয়ার। তোমরা কেউ খাতা পাবেনা। এসময় শিক্ষার্থীদেরকে পরিক্ষার কেন্দ্র থেকেও বের হতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছে পরিক্ষার্থীরা। পরে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করে এবং কিছুক্ষন ঢাকা নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়ক অবরোধ করে পরীক্ষার্থীরা।
এসময় পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে থাকলে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের দুইটি দল স্কুলে চলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করে। ওইসময়ও তারা শিক্ষক রফিকের বহিস্কার দাবী জানিয়ে বলেন, রফিক স্যারের বিরুদ্ধে পূর্বেও এধরনের অভিযোগ রয়েছে। তাই আমাদের জুনিয়র যারা আছে তাদেরকে যেন এমন হেনস্তার শিকার হতে না হয় তাই আমরা তার বহিস্কার ও সর্বোচ্চ শাস্তি দাবী করছি আমাদের জেলা প্রশাসকের কাছে।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. মাসুম বিল্লাহ এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ এর প্রতিবেদককে জানান, বিষয়টি আমি অবগত নই। যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলে এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো।
তবে এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত শিক্ষক রফিকের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও তার পক্ষে তোলারাম কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল মো. রবিউল, শিক্ষক পলাশ, মহিলা কলেজের প্রাণী বিদ্যা বিষয়ের শিক্ষক শফিক তার সাথে কথা বলা যাবেনা বলে নিষেধ করেন। পরে রাত সাড়ে আট টার দিকে ফতুল্লা পুলিশের একটি দল পাহাড়া দিয়ে তাকে স্কুল থেকে বের করে নিয়ে যায়।