নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্ট ) : বাংলার প্রান্তরে আবার এসেছে ফিরে অগ্নিঝরা উত্তাল মার্চ। ১৯৭১ সালের এ মার্চেই ডাক এসেছিল বাঙালির স্বাধীনতার। শুরু করেছিল পরাধীনতার গ্লানি থেকে নিজেকে মুক্ত করার সশস্ত্র সংগ্রাম। প্রায় দুই যুগের ধারাবাহিক আন্দোলনের পথ ধরে এ মার্চেই অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ে বাঙালির স্বাধীনতার সংগ্রাম।
১৯৭১ সালের ১ মার্চ ছিল সোমবার। এদিনই জাতীয় পরিষদের পূর্বনির্ধারিত অধিবেশন বাতিলের আকস্মিক ঘোষণা আসে। আর ইয়াহিয়া খানের এ ধরনের ঘোষণায় ফুঁসে ওঠে সমগ্রজাতি। তবে এ আন্দোলন আকস্মিক নয়। মুক্তিযুদ্ধের অনেক আগে থেকেই বাঙালির মনে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে। আর মার্চে সে ক্ষোভ রূপ নেয় স্বাধীনতা যুদ্ধে।
এর চার মাস আগে অর্থাৎ ১৯৭০ সালে ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় পরিষদের নির্বাচন। সে নির্বাচনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। আওয়ামী লীগের এ বড় জয়ে সমগ্র বাঙালি জাতি যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার স্বপ্ন দেখছে, ঠিক তখনই জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বাতিল করেন সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান। পূর্ব-নির্ধারিত ৩ মার্চের এ অধিবেশন শুরুর মাত্র দুদিন আগে নেয়া পাক শাসকের এ ধরনের আকস্মিক সিদ্ধান্তে উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলার জনপদ।
ইয়াহিয়া খানের অধিবেশন বাতিলের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সর্বস্তরের মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। ছাত্র, শিক্ষক, আইনজীবী, কলকারখানা শ্রমিক, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাসহ সর্বস্তরের মানুষ নেমে আসেন রাস্তায়। সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষুব্ধ জনতা জড়ো হতে থাকেন মতিঝিলের হোটেল পূর্বাণীর দিকে। সেখানে আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের বৈঠকে বসেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অন্যদিকে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা খ- খ- মিছিল নিয়ে যান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে। সেখান থেকে তারাও এগোতে থাকেন হোটেল পূর্বাণীর দিকে।
মূলত ইয়াহিয়ার ঘোষণার ফলে সারাদেশে সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় অসহযোগ আন্দোলনের সূত্রপাত। এক পর্যায়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পশ্চিমা সামরিক জান্তার নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ অকার্যকর হয়ে পড়ে। প্রকৃত কর্তৃত্ব চলে যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে। এ দিনেই স্বাধীনতাকামী বিক্ষুব্ধ মানুষের মুখে বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো আগের চেয়ে অনেক দৃঢ়ভাবে উচ্চারিত হয়।
শোষক গোষ্ঠীর বিষদাঁত ভেঙে দিতে বাঙালি জাতি বেছে নেয় সশস্ত্র সংগ্রামের পথ। এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ মার্চ শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস অবিরাম যুদ্ধের পর ওঠে স্বাধীনতার সূর্য। পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নেয় বাংলাদেশ। বাংলার আকাশে ওড়ার স্বাধীনতা পায় লাল-সবুজের পতাকা।