শীতলক্ষার এপাড় ওপাড়ে কে হবে নৌকার মাঝি ?

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : জাতীয় সংসদের একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে বেশ জোড়েশোড়েই মাঠে নেমেছে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগ। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় যোগাযোগ শুরু করেছেন। কেউ কেউ দলের হাই কমান্ডের গ্রিন সিগন্যালের অপেক্ষা না করেই ব্যক্তিগতভাবে শুরু করেছেন গণসংযোগ ও উঠানবৈঠক। নারায়ণগঞ্জ জেলায় মোট রয়েছে ৫টি আসন। যেখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসনের অবস্থান রয়েছে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনটি। এ আসনে ১ ডজন প্রার্থী মনোনয়নের প্রত্যাশায় প্রচারণা চালালেও এখন অবধি জানা যায়নি কে হচ্ছে নৌকার প্রার্থী।

এদিকে আগামীতে মহাজোটের অবস্থান জাতীয় পার্টির প্রার্থির পক্ষেই বহাল থাকবে এমন আশ্বাস পেয়ে স্বাস্তিতে জাপা মনোনিত এমপিরা। তবে মহাজোটের অবস্থান নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা না থাকলেও জাপা প্রার্থীদের ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন সভা সমাবেশে এ আসনটিতে যেন জাপা প্রার্থীকে সুযোগ না দেয়া হয় এবং নারায়ণগঞ্জের মোট ৫টি আসনেই যেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেওয়া হয় দাবি করে আসছেন নেতাকর্মীরা। কিন্তু তৃণমূল জানায় নৌকা নিয়ে অনেকেই কথা বললেও কেন্দ্রীয় নির্দেশনাতো এখনো পাইনি। জানা যায়নি আসলে কে হচ্ছেন এই নৌকার মাঝি! অথচ সকলেই নিজের মত করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে এবং সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করছে। বিভিন্ন স্থানে সাটানো হয়েছে পোস্টার ব্যানারও।

বর্তমানে এ আসনটিতে সংসদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন জাতীয় পার্টির মনোনিত একেএম সেলিম ওসমান। তিনি আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের নিয়ে একসাথে কাজ করার দৃঢ় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়াও সম্প্রতিকালে এক গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিএনপির বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধিও এখন তাঁর পাশে কাজ করার ঘোষনাও দিয়েছেন। তবে একেএম সেলিম ওসমান এর বাহিরেও একজন সফল ব্যবসায়ী নেতা হিসেবেই সকলের কাছে বেশী পরিচিত। তিনি বর্তমানে ব্যবসায়িক সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।।

এক সময়ে এ আসনটি জাতীয় পার্টির (জাপা) শক্ত ঘাটি হিসেবে পরিচিত হলেও বর্তমানে অনেকটা দুর্বল। এ আসনে এর আগেও চারবার নির্বাচিত হয়ে সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তাঁরই বড় ভাই প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব একেএম নাসিম ওসমান। তবে পূর্বে এ নিয়ে (টু) শব্দ না হলেও এবার সংশয় দেখা দিয়েছে।

এদিকে নৌকার দাবীতে সরব শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি এখন শামীম ওসমান ও আইভী বলয়ে ভীড়ে নিজেদের ভীত মজবুত করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তবে শুরু থেকেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি পক্ষকে শামীম বলয়ে ভীড়তে দেখা গেলেও সম্প্রতি  দলীয় পদবী প্রাপ্তির পর এখন অনেকেই আবার আইভী  বলয়েও  ভীড়তে শুরু করেছেন সম্ভাব্য নৌকা প্রত্যাশীরা।

আর এটিকে শামীম আইভীর নির্বাচন কেন্দ্রিক জোট গড়ার অংশ হিসেবেই দেখছেন বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে শামীম ওসমান ও আইভীর গ্রহণযোগ্যতা সর্ব মহলেই অন্যানদের তুলনায় একটু বেশী। তাই আগামীতে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিতে জোড়ালো সমর্থন পাওয়ার লক্ষ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে শামীম ওসমান ও আইভী বলয়ের জোট গঠন অস্বাভাবিক কিছুই হবেনা। কারন, প্রভাবশালী হিসেবে উভয়েরই কোন প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন বাগিয়ে এনে দেয়ার যেমন ক্ষমতা রয়েছে, তেমনি সেই প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিতে উভয়েই ভূমিকাও ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। সেই ভেবে হয়তো শামীম ওসমান ও আইভীর নেতৃত্বে নির্বাচন কেন্দ্রিক জোট গঠনের প্রয়াস চালাচ্ছেন সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বলে দাবী করেন, আওয়ামীলীগের একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা।

সূত্রে মতে, চলতি বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিতে সমর্থণ পাওয়ার লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই আইভীর সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন, নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনে সম্ভাব্য নৌকা প্রত্যাশী সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামীলীগ থেকে পদত্যাগ করা আহব্বায়ক এস এম আকরাম, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আরজু রহমান ভূইয়া, এছাড়াও উক্ত আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আইভীর ঘনিষ্টজন হিসেবে রয়েছেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদির, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম আবু সুফিয়ান, শহর যুবলীগের সাধারন সম্পাদক আলী আহাম্মদ রেজা উজ্জল। আর শামীম ওসমানের বলয়ে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এড. আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল।

এছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশী বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জাতীয় কমিটির সদস্য এড. আনিসুর রহমান দিপু, জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব শুক্কুর মাহমুদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই, সহ সভাপতি আব্দুল কাদির, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গির আলম, মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা, মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আরাফাত, নাসিক মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর ছোট ভাই এবং শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আহাম্মদ রেজা উজ্জল।

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জাতীয় কমিটির সদস্য এড. আনিসুর রহমান দিপু বলেন, আমরা একটি দল করি, অনেকেই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নৌকার নমিনেশন চাচ্ছে। আমিও চাই। দলের জন্য ত্যাগী নেতা রয়েছে। এখন নেত্রী আমাকে দিলে আমি করবো, যাকে দিবে সেই প্রার্থী হবে, যেহেতু নেত্রীর সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত।

জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আব্দুল কাদির বলেন, আমরা নৌকার মাঝি। ছয় জন হোক আর ৫ জন সেটা বিষয় না। নেত্রী চায় ভালো লোক। ন¤্রতা ভদ্রতা যার মধ্যে আছে সেই এ আসনে মনোনয়ন পাবে। আমি প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি শুক্রবারও বন্দরে একটি পথসভা করবো।

যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গির আলম বলেন, আমার দল আওয়ামীলীগ। মার্কা নৌকা। আমিও প্রত্যাশা করি। তবে নেত্রী যাকে দিবে তার জন্যই কাজ করবো।মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা বলেন, এ ব্যপারে আমি এটুকুই বলবো নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আমি প্রার্থী।

এছাড়াও শহর যুবলীগের সাধারন সম্পাদক আলী আহাম্মদ রেজা উজ্জল সম্ভ্যাব্য প্রার্থী হিসেবে একই আসনে নৌকার মনোয়ন চাইতে পারে এমন গুঞ্জন শুনা যাচ্ছিল। তবে তাঁর মুঠোফোনে ব্যবহৃত নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে, এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এরপরও একাধিকবার চেষ্টা করলে তার ব্যবহৃত নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।

add-content

আরও খবর

পঠিত