নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : শহরের জল্লারপাড় এলাকায় প্রবাসীর ছেলে শিশু আলিফ (৪) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ১৭ আগস্ট শুক্রবার দুপুরে নিহতের বাবা আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে দুই জনকে অভিযুক্ত করে সদর মডেল থানায় এ অভিযোগ দায়ের করেন। ফুটফুটে শিশু হত্যার বিচার চেয়ে আলিফের মা সালমা বেগম ও তার স্বজনরা বারবার বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ছে। শুক্রবার (১৭ আগস্ট) বিকেলে প্রবাসি আলমগীর হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন রুমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আলিফের বিভিন্ন খেলনা ও ব্যবহারের জিনিসপত্র। ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনরা এগুলো ধরে আহাজারি করছেন। হৃদয়বিদারক এমন দৃশ্য দেখলে, যে কারোই চোখে জল নিমিষেই পড়বে। বাবা মায়ের আদরে তিলে তিলে বড় হওয়া শিশুটি র্নিমম হত্যার শিকার।গনমাধ্যমের কাছে তাদের একটাই চাওয়া প্রশাসনের কাছে দাবী করে বলেন এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের যেন কোন ছাড় দেয়া না হয়। আলিফের বাবা আলমগীর হোসেন কান্না কন্ঠে বলেন, আমার শিশু সন্তান কি দোষ করেছিল। আমার ছেলের খুনিদের বিচার চাই।
সারাক্ষন তাদের পাশে এখন নিহত আলিফের ফটো আর স্মৃতিময় প্রতিচ্ছবি ছাড়া আর কিছুই নেই তাদের দু্ই নয়নে। নিহত শিশু আলিফের বড় বোন শহরের ইংরেজি মাধ্যম স্কুল মাউন্ট রয়েল একাডেমির চতুর্থ গ্রেডের ছাত্রী সুমাইয়া। মানসিকভাবে ভেঙে পড়া এই নাবালিকা শিশুটিও ছোট ভাইয়ের খুনিদের ফাঁসির দাবি জানায়। প্রশ্ন করে, কি অপরাধে এবং কেন তার ভাইকে এভাবে শ্বাসরোধ ও নির্যাতন করে হত্যা করা হলো? একই স্কুলের শিক্ষার্থী নিহত আলিফের দুই বছরের বড় ভাই সিয়ামও দিনরাত কান্না করছে ছোট ভাইকে হারিয়ে। তার খেলার সাথী আদরে প্রিয় ভাইটি আজ নেই, এটা সে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। ভাইয়ের খেলনাগুলো জড়িয়ে ধরে কান্না করেই দুইদিন কাঁটালো এই শিশুটি।এদিকে, হত্যাকাণ্ডের মূল সন্দেহভাজন ব্যক্তি মোবাইল ফোনে আলিফের পরিবারকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় পরিবারটি চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। তাদেরকে মামলা না করতে চাপ সৃষ্টি করছে শিশু হত্যাকারী পাষন্ড ঘাতক।
এ ব্যপারে সদর মডেল থানার ওসি মো. কামরুল ইসলাম জানান, নিহত আলিফের বাবা হুমকির বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। আমরা সেই হুমকিদাতার মোবাইল নম্বর পর্যবেক্ষণ করছি। পরিবারের নিরাপত্তার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মূল আসামিকে সনাক্ত করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতার করতে পুলিশের একাধিক টিম অভিযান অব্যাহত রেখেছে। শিগগিরই তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রসঙ্গত,বৃহস্পতিবার রাতে শিশুর মৃতদেহটি একই এলাকার খোকন মিয়ার টিনসেড ঘরের ভাড়াটিয়ার তালাবদ্ধ ঘরের ভিতরে ভাংগা ইটের সাথে বস্তাবন্দি করে মুখে কাপড় ও হাত পা বাধা অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিপন ( ১৮ ) কে আটক করে পুলিশ। এছাড়াও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল‘ক) মেহেদী ইমরান সিদ্দিক ও সদর মডেল থানা ওসি মো.কামরুল ইসলাম। ওই সময় তদন্তের স্বার্থে বাড়িওয়ালাকে ডাকা হলে ভাড়াটিয়ার কোন তথ্য কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র আছে কিনা জানতে চাইলে বাড়ির মালিক অপরাগতা প্রকাশ করে। পরে তাকে আটক করে সদর থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানাযায়, সকাল থেকে আলিফ নিখোঁজ ছিলো। সারাদিন সন্ধান না পেয়ে তার পরিবার মাইকে ঘোষনাও দিয়েছিল। পরে ওর বন্ধু ফাহিমের সাথে আলিফের পরিবার কথা বললে সে জানায়, সকালে আলিফ বন্ধুদের সাথে খেলা করছিলো। এসময় পাশের বাড়ির ভাড়াটিয়া আলিফকে চকলেট খাওয়ার কথা বলে নিয়ে যায়। এসসময় তার সাথে থাকা বন্ধু ফাহিমকেও প্রথমে ২০ টাকা ও পরে ১০ টাকা দেয়। কিন্তু তাকে সে নিয়ে যায়নি। পরে ফাহিম বাড়ি চলে আসে। এরপর থেকে ফাহিম আর আলিফকে দেখেনি। কিন্তু ফাহিমের দেয়া তথ্যানুযায়ী পরিবারের লোক প্রতিবেশীর সেই বড়িতে গেলে তালাবদ্ধ দেখতে পায়। পরে তালা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলে রাবিস (ইট ভাংগা) বস্তা দড়ি দিয়ে বাধা দেখতে পায়। খোলার পরে মুখে কাপড় ও হাত পা বাধা দেখতে পায় প্রত্যক্ষর্দশী। এদিকে গত মাসেই রাজমিস্ত্রীর পরিচয় দিয়ে খোকন মিয়ার বাসাটি ভাড়া নেয় সম্রাট ও অহীদ নামে দুই ব্যাক্তি। তবে মামলা না করতে ঘাতক পরিবারের সদস্যকে হুমকী দিচ্ছে বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে। নিহত আলিফের বাবা আলমগীর হোসেন সৌদি আরব প্রবাসী। ঈদের ছুটিতে গতকালই তিনি দেশে এসছেন।