নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : নারায়ণগঞ্জ শহরের লঞ্চ টার্মিনাল ঘাটে প্রায় সময়ই একটি হৃদয় বিদারক দৃশ্য চোখে পড়ে। তেমনি একটি হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখা গেছে। কাঁক ডাকা ভোরে শিশু সন্তানকে পল্টুনের রেলিং এর সাথে শেকল দিয়ে বেধে রেখে কাজে চলে যান কোন এক মা। আবার বিকালে বা সন্ধ্যার কোন এক সময় শেকল খুলে শিশুটিকে নিয়ে ঘরে ফিরে যান। নদীপথে মুন্সিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মানুষ নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ ঘাটে প্রায় সময়ই দেখতে পান এমন দৃশ্য। ক্লান্ত শরীরে বা বৈরী আবহাওয়া সবকিছুকেই শেকলে বাধা এই শিশুটিকে সহ্য করে মানিয়ে নিতে হয় ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গত ৩০ অক্টোবর বুধবার এমন একটি চিত্র পাওয়া যায় । ছবির সত্যতাও পাওয়া যায় নারায়ণগঞ্জ টার্মিনাল ঘাটে গিয়ে। সেখানে দেখা যায় একটি ছেলে শিশুকে লঞ্চ টার্মিনালের রেলিং এ শেকলে বেঁধে রাখা হয়েছে। আশ-পাশের অস্থায়ী কয়েকজন দোকানদার এ ব্যাপারে জানান, মূলত ছেলে যেন হারিয়ে না যায় বা কোথাও না যায় সেজন্যই মা এই কাজ করেন। শিশুটির নাম, মায়ের নাম বা ঠিকানা সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, ভাই আমরা ছোটখাটো হকার, লঞ্চ ঘাটে ফলমূল বেইচ্চা খাই। কে রেখে গেছে নাম ঠিকানা জিজ্ঞাসা করার সময় কই আমাদের।
এ বিষয় নারায়ণগঞ্জ টার্মিনাল ঘাটের অস্থায়ী আচার বিক্রেতা রবিউল আলম জানান, এ রকম দৃশ্য তিনি মাঝে মাঝেই দেখেন। অনেক সময় রাত অবধি এভাবেই বাঁধা থাকে শিশুটি। মূলত মা সঙ্গে করে বাচ্চাটিকে নিয়ে যেতে পারেন না বলেই এখানে বেধে রেখে তারপর কাজে যান। আবার কাজ শেষে ফিরে যাওয়ার সময় নিয়ে যান। তবে কখন বাঁধেন আর কখন খোলেন সেটি অনেক সময় দেখেন না কেউ।
সেখানে অবস্থান করা জয়নাল নামে একজন ব্যাক্তি জানান, অর্ধ বয়স্ক এক নারী প্রায় সময় সকালে এই শিশুটিকে এখানে শেকলে বেধে রেখে যান। সন্ধ্যায় বা রাতে এসে তালা খুলে নিয়ে যান বাচ্চাটিকে। তার বাচ্চাই হবে এমনটাই জানান তিনি। এমন মানবিক দৃশ্য দেখে অনেকেই শিশুটিকে খাবার কিনে দেন আবার অনেকেই রোদ বৃষ্টিতে তাকে ছাতা কিংবা পানি কিনে দেন। তবে শিশুটিকে এমন বন্দি অবস্থায় দেখে মায়া হলেও কর্মব্যস্ত এ জীবনে কেউ বেশি সময় নিয়ে দেখার সময়ও পান না।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ মাসুম বিল্লাহ বলেন, ঘটনাটি আমাদের জানা ছিলো না। তবে আমি এখনি লঞ্চ টার্মিনালে অফিসার পাঠাচ্ছি। এধরনের অমানবিক কাজ যে বা যারাই করেছে এটা অপরাধ। এ বিষয়ে আমরা যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহণ করবো।