শামীম হত্যায় ঘাতক আলীর জবানবন্দি

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নিজস্ব প্রতিবেদক ) : নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় মো. শামীম (৩০) নামে এক গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত এক আসামী আলী ওরফে ডাকাত আলী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তীমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। ৭ই এপ্রিল বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমরান মোল্লার আদালতে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয় বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোর্ট ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামান।

ওই ঘটনায় নিহত শামীমের স্ত্রী শর্মী বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ্যসহ অজ্ঞাতনামা আরো ১০ থেকে ১২ জনকে আসামী করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামীরা হলো : রাজ্জাক বাহিনী প্রধান রাজ্জাক (৪২), আলী ওরফে ডাকাত আলী (৪৫), রাজ্জাকের দুই  পুত্র জসিম (২২), অসিম (১৯), ফরিদ (৪০), আলম (৩০), রায়হান (৩২), জাকির (৩৫), জামান (৪০), আলআমিন (২৮), শান্ত (২০)সহ অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জনকে। এই মামলায় আটক আলী ওরফে ডাকাত আলী অসিমকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

এরআগে ৬ই এপ্রিল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শামীমকে ডেকে এনে প্রকাশ্য দিবালোকে ফতুল্লা থানাথীন ইসদাইর রেললাইন সংলগ্ন রাজ্জাকের ভাঙ্গারীর দোকানের সামনে কুপিয়ে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে নৃসংশভাবে হত্যা করে প্রতিপক্ষ মাদক ব্যবসায়ী। নিহত শামীম মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার পাড়াগাও গ্রামের আলমগীর হোসেনের ছেলে। সে স্ত্রী দুই সন্তান নিয়ে শ্বশুড় বাড়ী ফতুল্লার দাপা ইদ্রাকপুর এলাকার শহীদ হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকে। এবং গ্যাস সিলেন্ডারের ব্যবসা করেন। নিহত শামীম জেলা কারাগারে আটক ফতুল্লা থানার তালিকাভুক্ত দাপা ইদ্রাকপুর এলাকার শহিদ হোসেন ওরফে ডাকাত শহিদের জামাতা। নিহত শামীম তার  স্ত্রীসহ দুই বছর আগে হাজার পিস ইয়াবা নিয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের গ্রেফতার হয়।

এদিকে শামীমের সহযোগী জামাল জানান, একটি পত্রিকায় মাদক নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় সে সকল অভিযোগে শামীমের উপর তুলে দেয় রাজ্জাক। সময় রাজ্জাকের নেতৃত্বে জসিম, জাকির, আলম, মহসিন, আলী ওরফে পাঠা আলী, শান্ত, রায়হান রাজ্জাকের পুত্র ওয়াসিম প্রায় ১৪/১৫ জন মিলে আমাকে শামীমকে তার ভাঙ্গারী দোকানে ঢুকিয়ে সার্টার লাগিয়ে দেয়। সময় শামীমের সঙ্গে ওদের ধস্তাধস্তির ফাঁকে আমি দোকান থেকে বের হয়ে যাই। তারপর আমাকে মাথায় রড দিয়ে আঘাত করেছে। শামীমকে বাচাঁতে চিৎকার দিলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। এসময় রাজ্জাকের নেতৃত্বে শামীমকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।

জামালের মা তানিয়া বেগম জানান, তার ছেলে জামালের চাষাঢ়া রেলস্টেশন এলাকায় চায়ের দোকান রয়েছে। ২দিন আগে সেখানে মাদকের স্পটে মাদক বিক্রি করতে নিষেধ করায় রাজ্জাক গ্রুপের সঙ্গে বাক বিতন্ডার এক পর্যায়ে জামালকে মারধর করে। পরে তিনি বাঁধা দিতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়। ওই ঘটনায় মঙ্গলবার তিনি ফতুল্লা মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। ওই অভিযোগের সূত্র ধরে রাজ্জাক তার অনুগামীরা বুধবার সকালে তার ছেলে জামালকে ডেকে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এসময় জামালকে দিয়ে আমাকেও বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে আসা হয়। আমি এসে দেখতে পাই আমার ছেলে জামালকে ভাঙ্গারীর দোকানে আটকে মারধর করা হচ্ছে। এসময় আমি কাকুতি মিনতি করলেও রাজ্জাক বাহিনী শোনেনি। আমাকেও শেকল দিয়ে আটকে রেখে মারধর করা হয়। এসময় শামীম আসলে তাকেও আটকে রাজ্জাক বাহিনী বলে, তোর কারণেই জামাল তার মাকে আটকেছিলাম। নইলে তো তুই আসতি না। এই কথা বলেই তারা শামীমকে এলোপাথারি কোপাতে থাকে।

শামীমের সঙ্গে শত্র্রুতার বিষয়ে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে মিলন মাদকের স্পট চালাতো। রাজ্জাক তখন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আনতো। সেই স্পট নিয়ে নাকি শামীমের সঙ্গে রাজ্জাক বাহিনীর বিরোধ ছিল বলে শুনেছি।

জামালের স্ত্রী স্বপ্না বেগম জানান, আমার স্বামী জামালের দোকানের পাশেই রাজ্জাক তার লোকজন হিরোইন গাজার স্পট চালু করেছে। আমার স্বামী সেখানে মাদক বিক্রি করতে বাধা দেওয়ায় তাকে মারধর করতে থাকে। আমার শাশুড়ি খবর পেয়ে ছুটে গেলে তাকেও আটকে রেখে মারধর করে। পরে শামীম আমার স্বামীকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে শামীমকেও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

নিহত শামীমের পিতা আলমগীর হোসেন জানান, কি কারণে শামীমকে হত্যা করা হয়েছে সেটা তিনি জানেন না। তিনি খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন।

শামীমের স্ত্রী শর্মী জানান, দুপুর সাড়ে ১২টায় কোন একজন ফোন করে জানান তোমার স্বামীকে রাজ্জাকের ভাঙ্গারীর দোকানে রাজ্জাকসহ কয়েকজন মিলে কুপিয়ে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে লাশ শনাক্ত করেছি। এদিকে শামীমের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক সহ একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত নতুন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রকিবুজ্জামান জানান, শামীম হত্যাকান্ডের ঘটনায় ওয়াসিম আলী ওরফে পাঠা আলী নামে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যাকান্ডে জড়িত বাকী আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।

add-content

আরও খবর

পঠিত