শহীদ জননী জাহানারা ইমামের মৃত্যুবার্ষিকীতে মহিলা ফোরামের আলোচনা সভা

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি): যুদ্বাপরাধী সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠন নিষিদ্ধ, শিক্ষা-সংস্কৃতিসহ সর্বক্ষেত্রে মৌলবাদবিরোধী মতবাদিক সংগ্রাম জোরদার ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা বাস্তবায়নের দাবীতে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ২৬জুন ২০১৬খ্রি: ছিল শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ২২তম মৃত্যুবার্ষীকি। এ উপলক্ষ্যে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, গাবতলী পুলিশ লাইন কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলার সংগঠক জেসমিন আক্তার। আলোচনা করেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয়ক নিখিল দাস, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের কেন্দ্রিয় উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য সামসুন্নাহার জোৎস্না, সংগঠনের কেন্দ্রিয় সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী শম্পা বসু, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি সুলতানা আক্তার, অর্থ সম্পাদক মুন্নী সরদার, সংগনের নারায়ণগঞ্জ মহিলা কলেজ শাখার সভাপতি জোবাইদা ইসলাম সোমা প্রমুখ।

আলোচনা সভায় বক্তাগন বলেন, মুক্তিযুদ্ধে একজন মানুষ কেমন করে তার সমস্তকিছু উজার করে দিতে পারে তার জ্বলন্ত উদাহরন হলো জাহানারা ইমাম। কিন্তু স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের শাসকদের কাছে মানুষের এই ত্যাগের কোন মূল্যই রইল না। তারা মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে, বড় করে দেখলো তাদের ক্ষমতাকেন্দ্রিক লুটপাটের রাজনীতিকে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে শুরু থেকেই পরিস্কার অবস্থান নিতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। তারা রাজাকার, আলবদরদের সমাজে প্রতিষ্ঠা করা, আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়া এবং এই শক্তিকে নিজেদের ক্ষমতায় যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করল। ফলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীর তীব্র আকাঙ্খা থেকেই ১৯৯২ সালে গড়ে উঠে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও ৭১এর ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি-আর এর নেতৃত্ব দেন শহীদ জননীয় জাহানারা ইমাম।

শহীদ জননীয় জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে পরিচালিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে আন্দোলন ও গণ আদালতের রায় সেদিন বাস্তবায়িত না হলেও সে চেনতা ফল্গু ধারার মত সমাজে বয়ে চলেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে গড়ে উঠে ‘গণজাগরণ মঞ্চ’।

আন্দোলনের চাপে সরকার কাদের মোল্লা, কামরুজ্জামান, সাকা চৌধুরী, মুজাহিদ ও নিজামীর ফাঁসির রায় কার্যকর করতে বাধ্য হয়। কিন্তু এখনও যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ হয়নি। যুদ্ধাপরাধীদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহ বাজেয়াপ্ত করার দাবী বাস্তবায়ন করেনি সরকার। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয় শুরু হয়েছে সাত বছর। এই সময়ে মৌলবাদী জঙ্গী ধর্মান্ধ গোষ্ঠী প্রগতিশীল লেখক-প্রকাশক-শিক্ষক, পুরোহিত-ভিক্ষু-পীর-মাশায়েখসহ ভিন্নমত ধারনকারীদের হত্যা করে চলেছে। সেসব হত্যাকান্ডের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় একের পর এক হত্যা খুন চলছে। ক্ষমতা দখলের রাজনীতিতে শাসক শ্রেণীর দল সমূহ যুদ্ধাপরাধীদের সাথে জোট এবং নানা মাত্রায় আপোষের খেলায় মত্ত। ফলে মুক্তিযুদ্ধের মৌলচেতনা স্বাধীনতার ৪৫বছর পরও বাস্তাবায়ন হয়নি। এটা পুঁজিবাদী আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা ও বুর্জোয়া রাজনীতির সীমাবদ্ধতা। ফলে শোষনমুক্ত সমাজ তথা সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের মৌলচেতনা প্রতিষ্ঠিত হবে না। আবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ন্যায্যতা ও যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। তাই মৃত্যুর পূর্বে দেশবাসীর উপর জাহানারা ইমাম যে দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন তা পালন  করতে তরুন প্রজন্মসহ দেশবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে।

বক্তাগন ১০৫জন পাকিস্তানী সেনাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জামায়ত-শিবিরসহ যুদ্ধাপরাধী সকল সংগঠন নিষিদ্ধ, যুদ্ধাপরাধীদের সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাজেয়াপ্ত, ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার নিষিদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের সংগ্রামকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

add-content

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও খবর

পঠিত