নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪: রাত পোহালেই নারায়ণগঞ্জের ৩ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। নির্বাচনে ১০ লাখ ৮০ হাজার ৭৬২ জন ভোটার উপজেলা পর্যায়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৩ উপজেলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভক্তি প্রকাশ্যে এসেছে। এ নিয়ে উত্তেজনা আছে নির্বাচনী এলাকায়। নির্বাচনকে ঘিরে থানায় সাধারণ ডায়রি, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন, বাকযুদ্ধ হয়েছে। তবে কোথাও কোন সংঘাতের খবর পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে আড়াইহাজার ও সোনারগাঁয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে না আসতে হুমকি, একজন আওয়ামী লীগ নেতার বংশ উচ্ছেদের হুমকি ও বিধি ভেঙ্গে শোডাউনের অভিযোগ, প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের নিয়ে আপত্তিকে কেন্দ্র করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভোটার ও প্রার্থীরা। নির্বাচনের সংঘাতপূর্ণ পরিবেশ নিয়ে তারা ভিত। ভোটাররা মনে করেন এই দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়ায় ভোটের দিন সংঘর্ষ হতে পারে। তবে নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাকিব আল রাব্বি। এ নির্বাচন উপলক্ষে ইতোমধ্যে বিপুল সংখ্যক বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, আনসার সদস্য নির্বাচনী এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২১ মে) ভোটগ্রহণের দিন ৩ উপজেলায় ৩২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও তিনজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটও দায়িত্ব পালন করবেন।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিঘ্নিত করে সুষ্ঠু নির্বাচনে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ালে তার বিরুদ্ধে তড়িৎগতিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা।
ইতোমধ্যে কেন্দ্রগুলোতে নির্বাচনী সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হলেও ভোটগ্রহণ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা রাখার লক্ষ্যে ব্যালট পেপার ভোটগ্রহণের দিন ভোরে পৌঁছাবে বলে জানান তিনি।
সোনারগাঁ উপজেলা
সোনারগাঁ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন চারজন। তারা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম (ঘোড়া প্রতীক), উপজেলার সদ্য সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বাবুল হোসেন ওমর (আনারস প্রতীক), উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু (মোটরসাইকেল প্রতীক) ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী হায়দার (দোয়াত-কলম প্রতীক)। এরমধ্যে রফিকুল ইসলাম নান্নু ও মোহাম্মদ আলী হায়দার কাগজে কলমে প্রার্থী। তাদের কোন প্রচারণা ছিল না।
এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন আবুল ফয়েজ (চশমা প্রতীক), এম জাহাঙ্গীর হোসেন ভূঁইয়া (টিউবওয়েল প্রতীক), মাছুম চৌধুরী (তালা প্রতীক) ও আজিজুল ইসলাম (মাইক প্রতীক)। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ফরিদা পারভীন (ফুটবল প্রতীক) ও মাহমুদা আক্তার (হাঁস প্রতীক) লড়ছেন।
সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে নির্বাচনে উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ১৪২ টি কেন্দ্রে ৩ লাখ ৫০ হাজার ৬৬৮ জন ভোটার ব্যালট পেপারে ভোট দেবে। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮১ হাজার ৪১৪ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৬৯ হাজার ২৫৪ জন।
রূপগঞ্জ উপজেলা
নয়টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত রূপগঞ্জ উপজেলায় ১৪২ টি কেন্দ্রে মোট তিন লাখ ৯০ হাজার ৬০৭ জন ভোটার। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫১ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৯০ হাজার ৫৫৪ জন। এই উপজেলায় ২ জন হিজড়া ভোটার আছেন। রূপগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে দুইজন প্রার্থী ভোটের মাঠে আছেন। তারা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য হাবিবুর রহমান (দোয়াত-কলম প্রতীক) ও রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু হোসেন ভূইয়া (আনারস প্রতীক)। এ উপজেলায় সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য ও রংধনু গ্রুপের পরিচালক মিজানুর রহমান ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ফেরদৌসী আক্তার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
আড়াইহাজার উপজেলা
আড়াইহাজার উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজালাল মিয়া (দোয়াত-কলম প্রতীক), উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি কাজী সুজন ইকবাল (আনারস প্রতীক) ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (ঘোড়া)।
এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে রফিকুল ইসলাম ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে শাহিদা মোশারফ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
আড়াইহাজার উপজেলায় দুটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়নের ১৩৯ টি কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৪৮৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৫ হাজার ২২ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৬৪ হাজার ৪৬২ জন। এখানে ৩ জন হিজড়া ভোটার আছেন।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাকিব আল রাব্বি বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোটের জন্য যা যা করনীয় আমরা তার সব রকম ব্যবস্থাই নিয়েছি। ভোট শতভাগ সুষ্ঠু হবে।