নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : করোনা মহামারীর নিষেধাজ্ঞার কারণে ২ বছর পর এবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে লাঙ্গলবন্দ মহাষ্টমী স্লান । আগামী ৮ই এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টা থেকে ৯ই এপ্রিল রাত ১১টা পর্যন্ত পূর্ণ্যস্লান অনুষ্ঠিত হবে। আসন্ন মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ স্লান উৎসবকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ন পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।
৩০শে মার্চ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন, লাঙ্গলবন্দ স্লান উদযাপন পরিষদ ও হিন্দু নেত্রী বৃন্দ সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে উক্ত স্লান উৎসব সুষ্ঠু ভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উৎসবে আগত পূর্ণার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সুষ্ঠুভাবে যাতায়াতের জন্য উৎসব স্থলে মেলা সম্পূর্ন ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যাতায়াতের রাস্তার দু পাশে কোন প্রকার দোকানপাট না বসার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়াও সেবা ক্যাম্প গুলো একটি নিদিষ্ট নিয়মের ভেতরে থেকে পরিচালনা করতে অনুরোধ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বন্দর উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রশাসনের সাথে স্থানীয় অন্যান্য জনপ্রতিনিধি এবং হিন্দু নেত্রীবৃন্দরা পুণরায় আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উৎসব স্থলে নিরাপত্তার স্বার্থে বসানো হবে সিসি টিভি ক্যামেরা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে থাকবে পুলিশ আনসার সহ অন্যান্য সদস্যরাও। এছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং হিন্দু সংগঠন গুলোর পক্ষ থেকে নিজস্ব সেচ্ছাসেবী নিয়োগ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত আলোচনা সভায় উপদেষ্টা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। তিনি বলেন, কয়েক বছর পূর্বে লাঙ্গলবন্দ স্লান উৎসব চলাকালে একটি দুর্ঘটনায় ১০ জন মানুষের প্রাণহানীর ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লাঙ্গলবন্দকে তীর্থ স্থানের পাশাপাশি একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেন। ইতোমধ্যে উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে উন্নয়ন কাজ আটকে যাওয়ায় আজকে আমাদের আলোচনায় বসতে হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে লাঙ্গলবন্দ স্লান নিয়ে আমাদের আর আলোচনায় বসার প্রয়োজন পড়বে না। ওই বছর দুর্ঘটনাটি ঘটে ছিল একটি গুজবকে কেন্দ্র করে। তাই আপনাদের সকলকে সর্তক থাকতে হবে। কেউ যেন কোন অবস্থায় কোন গুজব ছড়াতে না পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। লাঙ্গলবন্দ স্লান দেশের বাইরে থেকেও অনেক পূর্ণ্যার্থী আসে। হয়তো এই বছরটা একটি কষ্ট হবে। কিন্তু আমাদের পুলিশ প্রশাসন অত্যন্ত দক্ষ। সকলে মিলে তাদেরকে সহযোগীতা করলে আশা করি তেমন কোন সমস্যা থাকবে না।
বন্দর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, প্রত্যেকটি চেয়ারম্যানকে নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগীতা করতে হবে। কেউ এটা বললে চলবে না যে এটা আমার ইউনিয়ন নয়। ওই দিন যারা উৎসব স্থলে আসবে তারা সকলেই বন্দর উপজেলার মেহমান। তাই আপনাদের সকলকেই সহযোগীতা করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বিগত বছর গুলোতে যে নিয়মে উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছিলো সেই নিয়মেই উৎসবের আয়োজন করা হবে। নিয়মের বাইরে কিছু যাবে না। এখানে লাখো লোকের সমাগম হলেও একদিক দিয়ে লোক ডুকে স্লান শেষ করে আরেক দিক দিয়ে লোক বেরিয়ে যায়। এর মধ্যে হয়তো সার্বক্ষনিক ২৫ থেকে ৩০ হাজার লোক সেখানে সমবেত থাকেন। এই লোক গুলোর নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে। একটি স্থানে এসে যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হবে। উৎসব স্থলে কেউ গাড়ি বা মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্য্য মেনেই উৎসব পালন করা হবে সেখানে কোন অবস্থায় যেন কোন প্রকার মাদক সেবন না করা হয় এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। কেউ যেন মদ্য পান করে সেখানে প্রবেশ না করে সেটাও সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। সেবা ক্যাম্প গুলো একটি নিদিষ্ট জায়গায় স্থাপন করতে হবে যাতে করে কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়। সাধারণ মানুষদের যেন বিশুদ্ধ খাবার পানির সমস্যা না হয় সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি আপনারাও মিনারেল ওয়াটারের বোতলের ব্যবস্থা রাখবেন। আমি বলার পর সব শেষ উৎসবের সময় আপনারা অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে ব্যবস্থা করে ছিলেন।
সম্প্রতি একটি ঘাট ভেঙ্গে ফেলা নিয়ে সৃষ্ট হওয়া বিশৃঙ্খলা নিরসনে তিনি বলেন, ঘাটটি কে বা কারা ভেঙ্গে ফেলেছে এটা আপনারা নেতৃবৃন্দরা কেন আগে অভিযোগ করলেন না। ঘাটটি যেই ভেঙ্গে থাকুক সেটি মেরামতের ব্যবস্থা করতে হবে। এটা কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। এটা সরকারী সম্পত্তি। সমাধান না হলে সরকারী ভাবে মামলার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া নদের কচুরি পানা পরিস্কার সহ অন্যান্য ছোট খাট যেই সমস্যা গুলো রয়েছে তা সমাধান করে দেওয়া হবে। প্রয়োজনে জেলা প্রশাসক সাহেব আগামীকাল সেখানে সরেজমিনে পরিদর্শনে করে যা করা প্রয়োজন সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান এম.এ রশিদ, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, বন্দর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কুদরত-এ-খোদা, বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা লাঙ্গলবন্দ স্লান উদযাপন পরিষদের সভাপতি সরোজ কুমার সাহা, সাধারণ সম্পাদক সুজিত সাহা, বন্দর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ সানু, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি দীপক কুমার সাহা, সাধারণ সম্পাদক শিপন সরকার, মহানগরের সভাপতি অরুন দাস, সাধারণ সম্পাদক উত্তম সাহা, হিন্দু কল্যাণ স্ট্রাটের ট্রাস্টি পরিতোষ কান্তি সাহা, লাঙ্গলবন্দ স্লান উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি বাসুদেব চক্রবর্তী, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান, বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন, মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন, ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন সহ হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।