নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১০নং ওয়ার্ডের সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলে অবস্থিত নিউ লক্ষ্মী নারায়ণ কটন মিলটির কলোনীর শেয়ার হস্তান্তর বা বিক্রি কেন অবৈধ হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। সম্প্রতি হাইকোর্টের বিচারক এম. এনায়েতুর রহিম ও মো. মোস্তাফিজুর রহমানের দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ। আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের জবাব দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মিলটির শেয়ারহোল্ডার নিধু কমল দে বাদী হয়ে রিট পিটিশনটি দাখিল করেন। এতে বিবাদী করা হয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) চেয়ারম্যান, জয়েন্ট স্টক এন্ড কোম্পানীজের রেজিষ্টার, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, নারায়ণগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি), নিউ লক্ষ্মী নারায়ণ কটন মিলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) এবং নিট কনসার্ন গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে (এমডি)।
রুলে আদালত উল্লেখ করেন, ২০০০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি গেজেটের ১২ নং ধারা অনুযায়ী মালিকানা ও শেয়ার হস্তান্তর চুক্তিপত্র অনুযায়ী কোন শেয়ার বিক্রি কিংবা হস্তান্তর আইনের পরিপন্থী। এ বিষয়ে বিবাদীদের নোটিশ পাওয়ার ৪ সপ্তাহের মধ্যে আদালতে জবাব দাখিল করতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিনের হাতে স্মারকলিপি প্রদান করেন মিলটির আন্দোলনরত শেয়ারহোল্ডাররা। আন্দোলনরতরা স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেন, ১৮ একর ৬৫ শতাংশের উপর গড়ে ওঠা শতবছরের পুরনো নিউ লক্ষ্মী নারায়ণ কটন মিলটি ২০০১ সালে ২১ মার্চ ৫১০ জন শেয়ার হোল্ডারদের মালিক বানিয়ে মিলটি হস্তান্তর করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। ২০০১ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত মিলটিতে প্রতি মাসে ৫০ লাখ টাকা আয় হলেও ১২ বছরে কোটি কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। শেয়ারহোল্ডাররা হিসাব চাইতে গেলে তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন প্রধান ও তোফাজ্জল হোসেন মুকুলের নেতৃত্বাধীন পরিচালনা পর্ষদ তাদের ক্যাডার বাহিনী দিয়ে আমাদের হুমকী ধমকী দিতো। এরপর মিলটির একজন বিনিয়োগকারী নিয়োগের কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে ৩৮২ জনের শেয়ার হাতিয়ে নিয়ে নিট কনসার্ন গ্রুপের কাছে বিক্রি করে দেয়। অথচ মিলটির শেয়ার বিক্রি করা আইনগতভাবে বৈধ নয়। আনুমানিক মূল্য ৭০০ কোটি টাকা হলেও মাত্র ৩৫ কোটি টাকায় মিলটি দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে নিট কনসার্ন গ্রুপের জয়নাল আবেদীন মোল্লা ও তার লোকজন এমনটিই অভিযোগ শেয়ারহোল্ডারদের। ৫৩ জন শেয়ারহোল্ডার শেয়ার বিক্রি করতে রাজী না হওয়ায় তাদের উপর গত ৬ বছর ধরে চালানো হয়েছে নির্যাতনের স্টীম রোলার। ২০১৩ সালের ৩১ আগষ্ট বকেয়া বিলের অজুহাতে মিলের বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় মিলের দুর্নীতিবাজ পরিচালনা পর্ষদ। সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্য দিবালোকে অস্ত্র নিয়ে হামলাও চালিয়েছে। ২০১৪ সালের ২১ অক্টোবর পরিচালনা পর্ষদের লোকজন শেয়ারহোল্ডারদের কলোনীতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এক শেয়ারহোল্ডারের রিট পিটিশন অনুযায়ী ২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারী হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চের জাস্টিস মো. রেজাউল হাসান নির্বাচন দেয়ার আদেশ দেন। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত নিরপেক্ষ হিসেবে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসককে নিউ লক্ষ্মী নারায়ণ কটন মিলের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান পদে ও শেয়ারহোল্ডারদের সরাসরি ভোটে পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক পদে নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছেন। পরে ওই বছরের ১১ এপ্রিল জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বার্ষিক সাধারণ সভা আহবান করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক। ওই দিন অবৈধ পরিচালনা পর্ষদের সন্ত্রাসী বাহিনী শেয়ারহোল্ডারদের সম্মেলনকক্ষে প্রবেশে বাধাঁ দেয়। এতে করে শেয়ারহোল্ডাররা বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রবেশ না করে বাহিরেই অবস্থান নেন। পরে জেলা প্রশাসক নিট কনসার্ন গ্রুপের শেয়ার হস্তান্তরের কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে তাতে জয়েন্ট স্টক রেজিষ্টারের বৈধতা না পাওয়ায় বার্ষিক সাধারণ সভা স্থগিত করেন। যে কারণে হাইকোর্টের আদেশে অদ্যাবধি মিলটির চেয়ারম্যান পদে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক।
আন্দোলনরত শেয়ারহোল্ডারদের অভিযোগ, হাইকোর্ট ঐতিহ্যবাহী মিলটির স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ভাঙচুরে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও তাতে কোনরূপ কর্ণপাত করেনি বিগত দুর্নীতিবাজ পরিচালনা পর্ষদ এবং নিট কনসার্ন গ্রুপের মালিকপক্ষ ও তাদের লোকজন। বেশীরভাগ স্থাপনা ভেঙ্গে বিরানভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। বেশ কিছু স্থানে পাইলিংও করেছে। মাঝেমধ্যেই তারা বিভিন্ন স্থানে মাপজোক করছে। হাইকোর্টের নির্দেশে জেলা প্রশাসক চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকলেও ২০১৮ সালের ১৬ মে মিলটির প্রবেশ ফটক সংলগ্ন দেয়ালে একটি নোটিশ সাটানো হয়েছিল যাতে চেয়ারম্যান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল নিট কনসার্ন গ্রুপের জয়নাল আবেদীন মোল্লাকে। ওই নোটিশে শেয়ারহোল্ডারদেরকে ৪৮ ঘন্টার আলটিমেটাম দেয়া হয়। পরে মাইকিং করে উচ্ছেদের হুমকীও দেয় নিট কনসার্ন গ্রুপের ক্যাডাররা।
এদিকে মিলটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিষদের তোফাজ্জল হোসেন মুকুল এবং নিট কনসার্ন গ্রুপের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন মোল্লার ছোট ভাই মনা ও তার লোকজন সম্প্রতি তারা মিলটির অভ্যন্তরের ঐতিহ্যবাহী পুকুর ও মিল সংলগ্ন সরকারী খাস জায়গা দখলের পায়তারা করছে। তারা খাস জায়গা মাপজোক করার পাশাপাশি পুকুরটির গভীরতাও পরিমাণ করেছে। তারা শেয়ারহোল্ডারদের কলোনীকে গোডাউন বানিয়ে শেয়ারহোল্ডার ও তাদের পরিবারকে উৎখাত করবে বলেও হুমকি দিচ্ছে। এতে করে নিরীহ শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিরাজ করছে উচ্ছেদ আতঙ্ক। এছাড়া পুকুর ও খালের ন্যায় খাস জায়গা ভরাট হয়ে গেলে মিলটির অভ্যন্তরে কলোনীতে বসবাস শেয়ারহোল্ডাররা জলাবদ্ধতায় পড়বে বলে মনে করছেন। এ বিষয়ে তারা মিলটির নিউট্রাল চেয়ারম্যান নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।