লকডাউন: নারায়ণগঞ্জে থেমে নেই শিল্পকারখানা, বিপাকে মালিক ও শ্রমিক !

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪  ( সৈয়দ সিফাত আল রহমান লিংকন ) : নারায়ণগঞ্জ লকডাউন হলেও এতে কোন প্রভাব পড়েনি প্রভাবশালীদের দখলে থাকা বিভিন্ন শিল্পকারখানায়। অনেক প্রতিষ্ঠানই সরকারী বিধি নিষেধ নেই বলে এমন দাবীতে বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের প্রতিষ্ঠান। অথচ জেলাটিকে করোনা পরিস্থিতিতে রেড জোন হিসেবেও চিহ্নিত করে ঘোষনা দিয়েছেন আইইডিসিআর। তারপরেও কোন কিছুকে তোয়াক্কা না করেই ঝুঁকিতে ফেলে শ্রমিকদের কর্মযজ্ঞতে থেমে নেই অনেকগুলো সিমেন্ট, পোশাক, খাদ্য সহ বিভিন্ন প্রস্তুতকারক কারখানা।

সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাধারণ ছুটি ঘোষনা করে তা বাড়ানো হয়েছে আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। এদিকে বিকেএমইএ ও বিজেএমইএ ও করোনা পরিস্থিতির কারণে নীট সহ গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে সময়সীমা বাড়িয়েছে। তবে এরই মধ্যে ছুটি শেষ ভেবে চাকুরী বাঁচাতে শহরে ঢুকে পড়েছে হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষ। করোনা প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ায় জেলাটিকে আইইডিসিআর রেড জোন ঘোষনার পরেও ঝুঁকি নিয়েই কর্মস্থলে যাওয়া আসা সহ অসচেতন হয়ে চলাফিরা করছে ওইসব শ্রমজীবী মানুষ। এতে ব্যপক ঝুঁকি’র আশংকা করছে স্থানীয়রা।

এসব বিষয়ে জানতে কারখানার কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ক্যামেরার সামনে আসতে রাজি হননি। তবে তাদের নিরাপত্তা কর্মীদের ইনর্চাজ ও মুঠোফোনে কথা হলে তারা জানিয়েছেন, তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধে কোন বিধি নিষেধ নেই। সরকারী বা প্রশাসনিক অনুমতি নিয়েই তারা এসব কারখানা চালু রেখেছেন। এমন পরিস্থিতিতে কি করার আছে। আমরাও বিপাকে আছি। আর্থিক লোকসান কে গুনবে? তাছাড়া শ্রমিকদের নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবস্থাও।

আর এমন দাবী করেই খোলা রয়েছে বন্দর উপজেলার মদনগঞ্জে বসুন্দরা সিমেন্ট কারখানা, ইনসি সিমেন্ট কারখানা, একই থানাধীন কুড়িপাড়া এলাকার সামিট সহ বেশ কয়েকটি কারখানা। থেমে নেই বিষাক্ত পরিবেশ দূষনকারী রোলিং মিলসগুলোও। চলছে মদনপুর এলাকার বন্দর ষ্টীল, বিক্রপুর রোলিং মিলস সহ ডজনখানেক কারখানা। অন্যদিকে পাল্লা দিয়ে ফতুল্লাহর বিসিক শিল্পনগরীতে পিচাছ ফ্যাশন, ডায়মন্ড, এমএস প্রিন্ট, শহরের নয়ামাটি, উকিলপাড়া সহ সিদ্ধিরগঞ্জের ইপিজেডও চলছে বেশ কয়েকটি গার্মেন্ট, নীট ও প্রিন্ট সহ প্রস্ততকারক শিল্প কারখানার কাজ।

স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, তারা গাঁয়ের জোরে ব্যবসা চালাচ্ছে। সরকার ও প্রশাসনকে নাকি কিনে কারখানা চালাচ্ছে তারা। এতে ঝুঁকিতে রয়েছি আমরা এলাকাবাসী। বিভিন্ন শ্রমিক সারাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা যাওয়া করছে। কার সাথে  কি নিয়ে  আসছে কে বলতে পারবে।  আমরা চাই সকল  কারখানা যেন  বন্ধ  করা হয়।

শ্রমিকরা জানায়, আমরা তো বন্ধ চাই, কিন্তু মালিকরা না দিলে কি করমু। ঝুঁকি থাকলেও বাধ্য হয়েই আসতে হয়। আপনারা মিডিয়ার লোক ও প্রশাসন চাইলেই এগুলি  বন্ধ  করা সম্ভব।

সচেতন মহলের দাবী, করোনা একটি বৈশ্বিক মহামারি। এর প্রতিরোধে সরকার সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে শিল্প কারখানার মালিকদের খামখেয়ালীপনায় সরকারের সকল চেষ্টা ব্যর্থ হতে পারে। তাই শ্রমিক ও মালিকদের পাশে দাড়িযে সমঝোতায়, সার্বিক বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট কর্তুপক্ষের দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করলেই বাঁচতে পারে আমার দেশ ও খেটে খাওয়া এসব শ্রমজীবী মানুষ।

সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলায় পোশাকসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ২ হাজার ৪৫৯টি। এর মধ্যে আরএমজিভুক্ত ৬৪২টি আর নন আরএমজিভুক্ত ১৭৫৮টিসহ আরও ৫৯টি কারখানা রয়েছে। এ সকল কারখানাগুলোতে কাজ করে ৭ লাখ ১ হাজার ৪০৪ জন শ্রমিক। এর মধ্যে পুরুষ ৪ লাখ ১ হাজার ৬০ জন ও নারী শ্রমিক রয়েছে ৩ লাখ ৩৪৪ জন। নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশ কারখানাই বন্ধ রাখা হলেও কিছু পোশাক কারখানাসহ নিটিং, সিমেন্ট, ঔষধ, আটা, বিস্কুটসহ বিভিন্ন ধরনের ৫০-৬০টি শিল্প কারখানা খোলা ছিল।

এ বিষয়ে শিল্প পুলিশ-৪ এর পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন জানান, পোশাক কারখানাগুলো তেমন খোলা নেই। যদি খোলা থাকে তাহলে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের জন্য এ সকল কারখানা আজকে খোলা রাখা হয়েছে। কারণ অনেক কারখানা মাসের ৭ বা ৮ তারিখে বেতন দেয়। তবে খাবার, ঔষধের কারখানাগুলো খোলা রয়েছে। যেমন মেডিকেল সরঞ্জাম তৈরি প্রতিষ্ঠান জিএমআই, ঔষধ তৈরি প্রতিষ্ঠান এসিআই তারপর কিছু আটার মিল, কিছু বিস্কুটের ফ্যাক্টরি, সিমেন্টের কিছু ফ্যাক্টরি খোলা রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আসলে যদি কোনো পোশাক কারখানা খোলা থাকে তাহলে তা আমাদের না জানিয়েই খোলা হয়েছে। আমাদের এলাকায় ২৪৫৯টি গার্মেন্টস রয়েছে। এর মধ্যে ২-৪টি গার্মেন্টস আমাদের জানিয়েছে তারা আজকে শ্রমিকদের  বেতন দিচ্ছে।  আমারও সেখানে আমাদের পুলিশ পাঠিয়েছি যাতে নিয়মানুযায়ী সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শ্রমিকদেও বেতন দেওয়া হয়। এ রকম যারাই আমাদের ফোন করছে, আমরা সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে দিচ্ছি।

ফকির গার্মেন্টস খোলা রাখার ব্যাপারে শিল্প পুলিশ-৪ এর পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ঔষধ এবং খাবার ফ্যাক্টরিগুলো খোলা রাখার নির্দেশ রয়েছে।  অন্যান্য কোনো ধরনের শিল্প কারখানা খোলা রাখার নির্দেশ নেই। তবে যারা খোলা রাখছে তারা আমাদের না জানিয়েই খোলা রেখেছে। ফকির গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষও আজকে শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।

add-content

আরও খবর

পঠিত