নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : রোববার (২১ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার (ডিআইটিএফ) ২৮তম আসর। গত দুই আসরের মতো এবারও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে (বিবিসিএফইসি) মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মাসব্যাপী এ মেলা উপলক্ষে ইতোমধ্যে প্যাভিলয়ন ও স্টল বরাদ্দসহ সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
প্রতিবারের মতো দেশী-বিদেশী পণ্য প্রদর্শণীর সবচেয়ে বড় এই আসরটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। সাধারণত খ্রিষ্ট্রীয় বর্ষপঞ্জির প্রথমদিন থেকে মেলা শুরু হলেও এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে নির্ধারিত সময়ের পর মেলা শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইপিবি।
ইপিবি বলছে, এবারের বাণিজ্য মেলায় দেশীয় পণ্যের পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর, নেপালসহ বিভিন্ন দেশ অংশগ্রহণ করবে। পণ্য প্রদর্শনের পাশাপাশি দেশীয় পণ্য রপ্তানির বড় বাজারও হয়ে দাঁড়ায় এই মেলা। এবারের মেলায় স্টলের সংখ্যার পাশাপাশি বেড়েছে দর্শনার্থীদের প্রবেশমূল্যও।
ইপিবি সচিব ও বাণিজ্যমেলার এ আসরের পরিচালক বিবেক সরকার বলেন, এ বছর মেলার পরিধি বাড়ানো হয়েছে। এবার দেশি-বিদেশি ৩৫০টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি-প্যাভিলিয়ন থাকবে। যা গতবছর ছিল ৩৩১টি।
এদিকে, গতবছর সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশমূল্য ৪০ টাকা এবং ১২ বছরের কম বয়সীদের জন্য ২০ টাকা ছিল। যা এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৫০ টাকা ও ২৫ টাকা।
শনিবার সকালে রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন সেতু থেকে উত্তর দিকে কিছু দূর এগিয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে স্টলগুলোতে শেষ সময়ের ব্যস্ততা দেখা যায়। এবার মেলার প্রধান ফটক তৈরি করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের (কর্ণফুলী টানেল) আদলে। যা গতবছর ছিল মেট্রোরেলের আদলে।
বিবিসিএফইসি’র ১৪ হাজার ৩৬৬ বর্গমিটার আয়তনের দু’টি হল ছাড়াও সামনে ও পেছনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন, স্টল নির্মাণ ও রঙের কাজে ব্যস্ত পাওয়া যায় নির্মাণ শ্রমিকদের। কিছু স্টলের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ায় রঙ ও পণ্যের পসরা সাজাতে দেখা যায়।
মেলায় অংশ নেওয়া জারিন ফ্যাশনের প্রতিনিধি রনি হোসাইন বলেন, “এবার স্টল নির্মাণ ও সাজাতে সময় কম পেয়েছি। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করার চেষ্টা করেছি। দিন-রাত নির্মাণ শ্রমিকরা কাজ করেছেন। আমাদের স্টল নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। বাকি যা আছে তা বিকেলের আগেই শেষ করা যাবে।”
একই কথা বলেন অলিম্পিক প্যাভিলিয়নের ইনচার্জ সেলিম আহমেদ। তবে তিনি জানান, গত দুই বছর বিবিসিএফইসি’র মেলা প্রাঙ্গণে আসতে এশিয়ান হাইওয়ে (ঢাকা বাইপাস) সড়কের যানজট তাদের এবং দর্শনার্থীদের ভুগিয়েছে। সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ এখনও চলমান থাকায় একই সমস্যার সম্মুখীন হবেন বলে আশঙ্কা তাঁর।
যদিও, ইপিবি সচিব বিবেক সরকার বলেন, সড়কের নির্মাণকাজ চলমান থাকায় যানজটের বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা বিকল্প সড়কগুলো নিয়মিত সচল রাখার নির্দেশনা দিয়েছি।
তিনি বলেন, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে। ছুটির দিন মেলা চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। মেলায় দর্শনার্থীদের যাতায়াতের জন্য রাজধানীর ফার্মগেট ও কুড়িল বিশ্বরোড থেকে সরাসরি মেলা প্রাঙ্গণে আসার জন্য আলাদা বিআরটিসি বাসের ব্যবস্থা রয়েছে। মেলায় আসতে ফার্মগেট থেকে ৭০ টাকা ও কুড়িল থেকে ৩৫ টাকা মূল্যের টিকিট কাটতে হবে দর্শনার্থীদের।
দর্শনার্থী ও ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার জন্য পুরো মেলা প্রাঙ্গণে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন থাকবে জানিয়ে ইপিবি সচিব আরও বলেন, এছাড়া সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল নিয়মিত থাকবে।
গত বছর মেলার শেষদিনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছিলেন, গতবার বাণিজ্য মেলায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ দর্শনার্থীর অংশগ্রহণে ১০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে। এছাড়া পাওয়া গিয়েছিল ৩০০ কোটি টাকার রপ্তানি আদেশ। এ বছর দর্শনার্থী ও লেনদেন দু’টোই বাড়বে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আয়োজকরা।