রূপগঞ্জে ফের কলি বাহিনীর তাণ্ডব, ব্যবসায়িকে কুপিয়ে জখম

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( রূপগঞ্জ  সংবাদ দাতা ) : মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ফের তাণ্ডব চালিয়েছে নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জ কাঞ্চন পৌরসভার সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসূল কলি ও তার বাহিনী। দুই যুবককে গরম পানি ঢেলে ও রাস্তা অবরোধ করে পেটানোর পর এবার এক থাই গ্লাস ব্যবসায়িকে মারধর করে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। ১৪ই মার্চ রবিবার রাত সাড়ে ১১টায় কাঞ্চন পৌরসভার পাচঁ নম্বর ওয়ার্ড কাটাখালির বাসিন্দা মো. রফিক ওরফে রফি মিয়ার ওপর ওই হামলার ঘটনা ঘটে।

গুরুতর আহত রফি জানান, রাত সাড়ে ১১টায় কাঞ্চন বাজার দোকান বন্ধ করে বাসায় ফিরছিলাম। ওই সময় বাজারের চাঁন টেক্সটাইল মন্ডল বাড়ির সামনে কাঞ্চন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসূল কলি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তার ছোট ভাই নুর মোহাম্মদ ওরফে ল্যাংরা নুরাকে দিয়ে তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আসেন। ওই সময় ল্যাংরা নুরার নির্দেশে কাঞ্চন পৌর আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক নবিউল হাসান শান্ত, ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসলাম উদ্দিন, যুবলীগ নেতা টুটুল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান নবিউর রহমান পুলক, সাইফুল্লাহ মিয়া, বিএনপির ছাত্রদল ক্যাডার মতিউর রহমান, সেলিম চিশতি, মামুন, রাজু, সুজন, বাবু মিয়া, গোলাম রসুল কলির গাড়ির ড্রাইভার আনোয়ার, কাঞ্চন পৌর ছাত্রলীগের সাহিত্য সম্পাদক আল আমিন, ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর হোসেন সহ অজ্ঞাত আরও ১০/১৫ জন আমাকে রাস্তা অবরোধ করে মারধর করে রক্তাক্ত করেন। তারা আমার কপালে মেরে চামড়া তুলে ফেলেছেন। ওই সময় আমি তাদের পায়ে ধরে জীবন ভিক্ষা চাই। কিন্তু তারা কোন কর্ণপাত করেননি। যতক্ষণ মন চেয়েছে আমাকে লাঠি সোটা দিয়ে পেটানো ও কিল ঘুষি দিয়ে রক্তাক্ত করেছেন। আশেপাশের মানুষ সময় কলি বাহিনীর ভয়ে এগিয়ে আসতে সাহস পায়নি। আমি সুস্থ হয়ে মামলার প্রস্তুতি নেব।

এদিকে সম্প্রতি ৩ যুবককে গরম পানি ঢেলে শরীর জ্বলসে দেওয়া ও রাস্তা অবরোধ করে পেটানো অস্ত্রধারীদের সিটি টিভি ফুটেজ দেখে পরিচয় পাওয়া গেছে। ফুটেজ পাওয়া অস্ত্রধারীদের সঙ্গে নাম ছবি মিলিয়ে গোলাম রসূল কলির বেশ কিছু ছবি পাওয়া গেছে। এতে অস্ত্রধারীরা প্রকৃতপক্ষে কার লোক তা বের হয়ে এসেছে। ইতিমধ্যে গণমাধ্যম কর্মীদের হাতে ওইসব ছবি পৌঁছেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অস্ত্রধারীরা স্থানীয় সরকারি দলের এক শীর্ষ জনপ্রতিনিধি ও কলির লোক বলেই প্রশাসন এসব অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। অস্ত্রধারীরা সবাই কলির লোক তার প্রমান হিসাবে সিটি টিভি ফুটেজে হামলাকারী অস্ত্রধারীদের সঙ্গে কলির ছবি।

এর আগে গত ৮ মার্চ দিনে-দুপুরে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল কলির নেতৃত্বে তার বাহিনী পৌরসভার মন্ডলের বাড়ির সামনে কালাদি এলাকার মৃত শহিদুল্লার ছেলে আব্দুর রহমানকে রাস্তা অবরোধ করে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সুকুমারের বাড়ির সামনে থেকে ধরে নিয়ে রানীপুরা এলাকার মৃত সিদ্দিক ভূঁইয়ার ছেলে নাঈম ভূঁইয়ার শরীরে গরম পানি ঢেলে ঝলসে দেওয়া হয়। তাদের দুইজনকেই মুমূর্ষু অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

এছাড়া একই দিনে কালাদি এলাকায় অবস্থিত এফ খান ফিলিং স্টেশনের সামনে ফেলে কলি বাহিনীর সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পশ্চিম কালাদি এলাকার হাজি মোজাম্মেল হকের ছেলে শাহিন মিয়া ও ত্রিশ কাহনিয়া এলাকার আব্দুল আলীর ছেলে রিফাতের ওপর হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা দুইজনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। ওই সব হামলা শেষে কাঞ্চন পৌরসভা গেটে ভাঙচুর করে বাজার এলাকায়ও মহড়া দেয়। এসব ঘ্টনায় থানায় মামলা হলে দুই জন গ্রেফতার হয়েছে। কিন্তু বাকি অস্ত্রধারীরা এখন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এর মধ্যে রবিবার রাতে ফের হামলা শিকার হলো রফি মিয়া। এলাকায় এখন চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসূল কলি জানান, আমি এসব বিষয়ে কিছু জানি না। মূলত কাঞ্চন পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম আমার বিরুদ্ধে তার লোকজন দিয়ে নানা কুৎসা রটাচ্ছেন।

এ বিষয়ে কাঞ্চন পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম জানান, কারা অস্ত্রধারী নিয়ে চলাফেরা করেন। কারা হামলা করেন এসব সিসি টিভি ফুটেজ ও অস্ত্রধারীদের ছবি কার সঙ্গে রয়েছে তা পৌর এলাকাসহ সবার কাছে পরিষ্কার।

এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিনুল কাদির জানান, কলির দু’জন সমর্থককে আটক করা হয়েছে। বাকিরা পলাতক রয়েছেন। কোন মতেই কোন পক্ষকেই কাঞ্চনকে অশান্ত করতে দেওয়া হবে না। এখন আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

add-content

আরও খবর

পঠিত