নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ (রূপগঞ্জ প্রতিনিধি ) : রূপগঞ্জ উপজেলার ৩০ গ্রামের প্রায় ১৫/২০ হাজার পরিবারের মানুষ এখন পানিবন্দি। তাদের দুর্ভোগ চরমে। গত কয়েক দিনের অতিবৃষ্টির পানিতে ও অপরিকল্পিতভাবে সেচ প্রকল্প নির্মাণ এবং পানি নিষ্কাশনের খালগুলো বেদখলে ভরাট হয়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাতে মানুষের দুর্ভোগ এখন চরমে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার তারাবো, বরপা, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল, মধ্যপাড়া, দক্ষিণপাড়া, নাগেরবাগ, বৌবাজার, বাক্মোর্চা, খালপাড়, ইসলামবাগ, নতুন বাজার, কান্দাপাড়া, বলাইখা, বিজয়নগর, মদিনানগর, তারাবো পৌরসভার তেঁতলাবো, শান্তিনগর, বাগানবাড়ি, পশ্চিম কান্দাপাড়া, উত্তর মাসাবো, যাত্রামুড়া, রূপসী ও ভূলতা ইউনিয়নের মাঝিপাড়া, সোনাব, পাচাইখা ও ইসলামপুর সহ আশপাশের এলাকায় এখন জলাবদ্ধতা। তাতে ১৫/২০ হাজার পরিবারের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অতি বৃষ্টিতে ঘর-বাড়ির উঠানে পানি উঠেছে। অনেকের বসত ঘরে ৩/৪ ফুট পানি। কারো কারো বসত ঘরে হাঁটু সমান পানি। আবার কারো বসত ঘরে কোমর সমান পানি। রাস্তা ঘাট তলিয়ে গেছে। জমির ফসলের গাছ হলদে হয়ে মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। গবাদি পশু অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব। ঘর-বাড়িতে পানি উঠায় কেউ কেউ আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। আবার কেউ কেউ বাঁশের মাচার উপর বসবাস করছে। কয়েকটি শিল্প কারখানায়ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। কোন কোন স্থানে টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে গেছে। সে সকল এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব। খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। তাছাড়া শিল্প কারখানার নির্গত ক্যামিকেল ও দূর্গন্ধযুক্ত কালো পানিতে দূষণ হয়ে রোগাক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন বয়সের মানুষ। মহিলা ও শিশুরা দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন।
নাগেরবাগ গ্রামের শামীম মিয়া বলেন, একদিকে লকডাউন অপরদিকে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় অতি কষ্টে চলছে নিম্ন আয়ের মানুষের। তাতে দেখা দিয়েছে খাবার সংকট। শিল্প কারখানার নির্গত বর্জ্যে পানি নিষ্কাশন খালগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। শিল্প কারখানার নির্গত গরম পানি জলাবদ্ধতায় মিশে গেছে। তাতে জলাবদ্ধতার পানি কুচকুচে কালো রঙ ধারণ করেছে। এ পানিতে হাটাচলা করতে গিয়ে মানুষ চর্ম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পানিতে কামড়ায়। পানির কীট-পতঙ্গ সহ মাছ মরে যাচ্ছে। আশপাশের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
নাগেরবাগ এলাকার শহিদ ফকির জানান, ১০/১২ বছর ধরে এখানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। পানির সাথে যুদ্ধ করে আমাদের বাঁচতে হচ্ছে। বরপা গ্রামের গৃহিনী রোকসানা আক্তার বলেন, আমার ঘরে হাঁটু সমান পানি। ঘর থেকে বের হতে পারছিনা। চুলায় আগুন জ্বালাতে পারিনা। বিশুদ্ধ পানি নেই। অনেকে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারনে এ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে।
গোলাকান্দাইল এলাকার আওয়ামীলীগ নেতা আজগর আলী বলেন, রূপগঞ্জ শিল্পাঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। সে কারণে জমির দাম বেশি। তুলনামূলকভাবে নিচু জমির দাম কম। তাই অনেকেই নিচু অঞ্চলে কম দামে জমি ক্রয় করে ঘর বাড়ি নির্মাণ করছেন। আর সে কারণেই নির্মিত ঘর বাড়িতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক তারাবো পৌরসভার মেয়র হাছিনা গাজী অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন।
তারাবো পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের কমিশনার মাহাবুবুর রহমান জাকারিয়া বলেন, অতি বৃষ্টির কারনে নিচু কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে আসছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার সমাধান করা হবে।
গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মনজুর হোসেন ভুঁইয়া বলেন, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীকের প্রচেষ্টায় ১টি ড্রেজার, কয়েকটি সেচ পাম্প ও বেরি বাঁধের বটতলার পাইপ লাইন স্থাপন করা হয়েছে।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ নুসরাত জাহান বলেন, রূপগঞ্জের বিভিন্ন জায়গার সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিষ্কাশনের কাজ চলছে। তা আগামী ২/৩ দিনের মধ্যেই নিরসন করা যাবে বলে আমি আশা করছি।