নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( রূপগঞ্জ প্রতিনিধি ) : আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রূপগঞ্জে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের প্রায় ছয়জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে উপজেলার ভুলতা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষে স্থানীয় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। উভয়পক্ষের সশস্ত্র মহড়ায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এক পক্ষ আরেক পক্ষের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ফলে দুই পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল আজিজ মিয়া তার পারিবারিক অনুষ্ঠানের দাওয়াত দিতে রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ ভূঁইয়ার মাসুমের মুড়াপাড়ার বাড়িতে যান। সন্ধ্যায় আব্দুল আজিজ মিয়াকে নিয়ে শেখ ফরিদ মাসুম একটি প্রাইভেটকারে করে ভুলতা এলাকার দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় প্রাইভেট কারের সামনে তাদের একটি মোটরসাইকেল ছিল। ভুলতা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হামজালার পক্ষের লোকজন সামনে থাকা মোটরসাইকেলটি গতিরোধ করেন। এসময় মোটরসাইকেল আরোহী বিপ্লব হাসানকে মারধর শুরু করে হামজালার লোকজন। পরে শেখ ফরিদ ভূঁইয়া মাসুম তার সহযোগী বিপ্লবকে মারপিট থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। এসময় মাসুমের সঙ্গে হামজালা লোকজনের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
কিছুক্ষণ পরেই হামজালার লোকজন ধারালো অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ভুলতা থেকে নাহাটি এলাকায় একটি অস্ত্রের মহড়া দেন। এরপর শেখ ফরিদ ভূঁইয়া মাসুম ও রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল আলম সিকদারের লোকজনও একত্রিত হয়ে পাল্টা মহড়া দেয়। এক পর্যায়ে ফয়সাল শিকদারের লোকজন হামজালার দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া একটি মুদি দোকানসহ ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এক পর্যায়ে ভুলতা ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুই পক্ষকে ধাওয়া দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরে পুলিশ সেখান থেকে চলে যায়।
পুলিশ চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই হামজালাসহ তার এক থেকে দেড় শতাধিক লোক রামদা চাপাতি চাইনিজ কুড়ালসহ ধারালো অস্ত্র নিয়ে ভুলতার নাহাটি এলাকায় অবস্থিত রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিকদারের অফিস ভাঙচুর করেন। এসময় হামলাকারীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী এবং গোলাম মর্তুজা পাপ্পার ছবি ভাঙচুর করেন বলে দাবি করেন শেখ ফরিদ ভূঁইয়া মাসুম। এছাড়াও নাহাটি এলাকার বেশ কয়েকটি দোকান পাট ভাঙচুর করে তারা। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সশস্ত্র অবস্থায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে করে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। পরে ফের পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
নারায়ণগঞ্জ (গ-সার্কেল) সহকারী পুলিশ সুপার মাহিন ফরাজী ও রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
সহকারী পুলিশ সুপার মাহিন ফরাজী বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ ভূঁইয়া মাসুম ও হামজালার দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসময় দুই পক্ষই একে অপরের অফিসে হামলা ভাংচুর চালিয়েছে দাবি করে তারা। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।