নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( রূপগঞ্জ প্রতিনিধি ) : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় নাওড়া এলাকায় গত ৩০ই নভেম্বর মঙ্গলবার রাত ৮টায় আওয়ামীলীগের ১২ নেতাকর্মীর বাড়িতে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে।
আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মিজানুর রহমান, তার ভাই রফিকুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে বহিরাগত ২০০/৩০০ সদস্যের একদল সন্ত্রাসী রাম দা, ছুরি, বল্লম, চাইনিজ কুড়াল, শর্টগান, আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এ হামলা চালায়। হামলায় ২ জন গুলিবিদ্ধ, ১৫ জন আহত ও একজন নিখোঁজ রয়েছে। এ ঘটনায় কায়েতপাড়া ইউনিয় পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য জসিম উদ্দিন জসুকে (৪০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
হামলাকারীরা কায়েতপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি মোশারফ হোসেন, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন মহিলালীগের সভাপতি জোসনা আক্তার, আওয়ামীলীগের কর্মী নবী হোসেন, আমির হোসেন, রবিউল্লাহ, নজরুল ইসলাম, আজিজুল, ফায়জুল, ফজুল মিয়া, শাহজাদা, আহমদউল্লাহ, বিশা মিয়ার বাড়িসহ ২০ বাড়িতে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে এ হামলা চালায়। মহিলা ও শিশুরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। সংঘর্ষে ২জন গুলিবিদ্ধ ও ১৫ জন আহত হয়। গুলিতে আহত নাওড়া গ্রামের মৃত ফজুল মিয়ার ছেলে ইউসুফ মিয়াকে (৪০) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া আহত সুবহান (২৮), জায়েদা খাতুন (৩০), নুরজাহানকে (৩২) মুমুর্ষ অবস্থায় ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত অন্যান্যদের রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নাওড়া গ্রামের ওমেদ আলীর ছেলে রেনু মিয়া (৩৫) নিখোঁজ রয়েছে।
আওয়ামীলীগ নেতা মোশারফ হোসেনের বাড়ির পাকা সিমানা প্রাচীর ভেঙ্গে হামলা চালিয়ে ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। ঘটনার পর থেকে নৌকা প্রতীকের কর্মী সমর্থকরা চরম আতঙ্কে রয়েছে। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ আগুনে ঘরবাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। নাওড়া এলাকার বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহের লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। টর্চ লাইটের আলোতে দুই ঘন্টা ব্যাপী সন্ত্রাসীরা এ তান্ডব চালায়। ঘটনার তিন ঘণ্টা পর পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। আবারও নারায়ণগঞ্জ-১ রূপগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক তাঁর ব্যক্তিগত তহবিল থেকে আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ ২০ পরিবারের মধ্যে ৫০ হাজার টাকা করে প্রদান করেন।
ঘটনাস্থল বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম, রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ্ নুসরাত জাহান, কাঞ্চন পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম, রূপগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. ছালাউদ্দিন ভুঁইয়া, ভুলতা ইউপি চেয়ারম্যান ব্যারিষ্টার আরিফুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইমন হাসান খোকন পরিদর্শন করেছে। সন্ত্রাসীদের দেওয়া আগুনে আওয়ামীলীগ নেতা মোশারফ হোসেনের ৫টি বসতঘর, ৪টি মোটরসাইকেল, ১টি প্রাইভেটকার ও কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী যুবলীগের কার্যালয় ভস্মীভ‚ত হয়।
কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক মিনারা বেগম বলেন, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীকে পরাজিত হয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী মিজানুর রহমান, তার সমর্থক জসিম উদ্দিন জসু ও আলেক মিয়ার নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা এ হামলা চালায়।
কায়েতপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সহ সভাপতি আমির হামজা বলেন, আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মিজানুর রহমান পরাজিত হওয়ায় তার সমর্থিত সন্ত্রাসীরা একের পর এক নৌকা প্রতীকের সমর্থিতদের ঘর বাড়িতে হামলা চালাচ্ছে। নেতাকর্মীদের কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করছে। পুলিশ ও র্যাব নিরব ভ‚মিকা পালন করছে।
কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. জাহেদ আলী বলেন, নির্বাচনের পরদিন থেকে নাওড়া এলাকার নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের বাড়িতে একের পর এক হামলা, লুটপাট চালানো হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ ও র্যাব সন্তোষজনক ভ‚মিকা রাখছেনা। ক্ষতিগ্রস্থদের মামলা রুজু করছে না। তাতে সন্ত্রাসীরা উৎসাহিত হয়ে একের পর এক হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে যাচ্ছে। গত ২৭ নভেম্বর ৮ জন গুলিবিদ্ধের ঘটনায়ও পুলিশ এখনও মামলা নেয়নি। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী মিজানুর রহমান, তার ভাই রফিকুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলাম নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন কৌশলে আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশ করে বিএনপি জামাতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। আওয়ামীলীগের দলীয় নেতাকর্মীদের উপর হামলা ও মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক বলেন, সন্ত্রাসীরা যত অর্থ ও প্রভাবশালী হোক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। তাদের শাস্তি পেতে হবে।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফএম সায়েদ বলেন, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ, র্যাব ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
উল্লেখ্য, গত ১১ই নভেম্বর কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আলহাজ্ব মোঃ জাহেদ আলী নৌকা প্রতীকে জয়লাভ করে। আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মিজানুর রহমানের পরাজয় হয়। ১২ই নভেম্বর নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের বাড়ি ঘরে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় আওয়ামীলীগ নেত্রী লিপি আক্তার গুলিবিদ্ধ হয়ে এখনও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এখানে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি ও অসহায় হয়ে পড়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।