নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( রূপগঞ্জ প্রতিনিধি ) : নারায়ণগঞ্জের সর্ববৃহৎ প্রকল্প ভূলতা ফ্লাইওভারের দুটি অংশ ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও গাজীপুর-চট্টগ্রাম বাইপাস সড়ক উদ্বোধনের পর কিছু দিন আলো জ্বলেও এখন ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত। কয়েক দিন ধরে ভূলতা ফ্লাইওভারে বাতি না জ্বালানোর কারণে অপরাধীরা সক্রিয় রয়েছে।
রূপগঞ্জের ভূলতা ফ্লাইওভার যানজট নিরসনে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও রাতের বেলায় ফ্লাইওভার অনেকের কাছে ভয়াবহ আতঙ্কের নাম। সূর্যের আলো নিভে গেলেই ফ্লাইওভারে ভ‚তুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে। আলো ও সিসি ক্যামেরা না থাকায় প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। আর গভীর রাতে ফ্লাইওভার রীতিমতো ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাত ১১টার পর ছিনতাইকারীর ভয়ে ফ্লাইওভার দিয়ে যানবাহন চলাচল করে না।
যারা না জেনে গভীর রাতে ফ্লাইওভার দিয়ে যাতায়াত করে তাদের বিপদে পড়তে হয়। শুধু তাই নয়, ভূতুড়ে পরিবেশের কারণে অনেক যানবাহনই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। আলো না থাকার ফলে মাদকসেবীরা নির্বিঘ্নে মাদক সেবন করে। এখানে পড়ে থাকতে দেখা যায় ফেনসিডিলের খালি বোতল। ফ্লাইওভার কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারি না থাকায় এখন রাতের অন্ধকারে ডুবে থাকে ৩৫৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ফ্লাইওভার। এ অবস্থায় রাতে ফ্লাইওভারটিতে যানবাহন চলাচলে হয়ে ওঠে ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিরাজ করে আতঙ্ক।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ফ্লাইওভারের কোনো বাতি জ্বালানো হয়নি। অন্ধকারে হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। এ সময় গাজীপুরগামী ট্রাক চালক এমরান হোসেন জানান, প্রায় সময় এ ফ্লাইওভার দিয়ে যাতায়াত করি। রাতে অনেকে মোটরবাইক নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। অনেকে বসে মাদক সেবন করে। তখন খুব ভয়ে থাকি। যদি লাইট জ্বলতো তাহলে এতটা ভয় লাগত না।
সিএনজি চালক মনির হোসেন বলেন, সর্বোচ্চ রাত ১১টা পর্যন্ত যানবাহন চলাচল করে। এরপরে আর কেউ সাহস করে ফ্লাইওভার দিয়ে যায় না। কারণ অন্ধকারের মধ্যে ওৎ পেতে থাকে ছিনতাইকারীরা। যানবাহন চলাচল কম থাকায় নির্বিঘ্নে ছিনতাইকারীরা সব নিয়ে চলে যায়।
কারওয়ান বাজার থেকে মুরগি বিক্রি করে আসা নরসিংদীগামী ব্যবসায়ী শহিদুল জানান, লাইট ছাড়া ফ্লাইওভার অনিরাপদ। পৃথিবীর কোনো দেশে ফ্লাইওভার অন্ধকারে নেই। কিন্তু ভূলতা ফ্লাইওভারে ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে রাতে। প্রায়ই ছিনতাই, যাত্রী হয়রানির ঘটনা ঘটছে। কিছুদিন আগেও ছিনতাইকারীরা গাড়ি আটক করে আমার কাছ থেকে নগদ ১ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এদিকে এক রিকশা চালক বলেন, এই ফ্লাইওভার উদ্বোধনের পর থেকেই কিছুদিন আলো জ্বলে আবার অন্ধকার হয়ে যায়। আবার মাঝে মাঝে দিনের বেলায়ও আলো জ্বলতে দেখতাম।
এলাকাবাসী জানায়, রূপগঞ্জের ভূলতা গাউছিয়া কাঁচা বাজারের পাশে ভূলতা ফ্লাইওভারের বিদ্যুতের মিটার এখনো চলমান রয়েছে। তাহলে ভূলতা ফ্লাইওভারের লাইটগুলো জ্বলে না কেন?
এ ব্যাপারে ভূলতা ফ্লাইওভারের ইঞ্জিনিয়ার হাফিজুর রহমান বলেন, ভূলতা ফ্লাইওভারটি উদ্বোধনের এক বছর পর্যন্ত আমাদের আওতায় ছিল। ১ বছর অতিক্রম হওয়ায় ফ্লাইওভারের বিষয়ে আমাদের কোনো দায়িত্ব নেই। আলো জ্বলবে কি জ্বলবে না সেটা আমাদের বিষয় না। এই দায়িত্বে কারা আছেন তাও জানা নেই।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ভূলতা ফ্লাইওভারের বিদ্যুতের বকেয়া বিল থাকা সত্তে¡ও লাইন এখনো চলমান রয়েছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ (গ সার্কেল) এ এসপি মো. মাহিন ফরাজী বলেন, ভূলতা ফ্লাইওভারটি অন্ধকার থাকায় পুলিশের টহল আরো বাড়িয়ে দিয়েছি। যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। তবে ফ্লাইওভারটি অন্ধকার থাকলে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুসরাত জাহান বলেন, ভূলতা ফ্লাইওভারের অন্ধকারের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে জনগণের নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে শিগগিরই আলো জ্বলে উঠার ব্যবস্থা করছি। তাছাড়া ফুটপাত উচ্ছেদে অভিযান চালানো হবে। ফুটপাত দখলের বিষয়ে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।