নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বন্দর সংবাদ দাতা ) : করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে অভিবাসীদের প্রতি মালয়েশিয়া সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণ নিয়ে কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরাকে সাক্ষাৎকার দেওয়া রায়হান কবির নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকার ছেলে গ্রেফতার হয়ে প্রায় মাসখানেক পুলিশি হেফাজতে ছিলেন । ২১শে আগস্ট শুক্রবার ভোরে নারায়ণগঞ্জে নিজের বাড়িতে ফিরেছেন তিনি। তাকে পেয়ে আনন্দে উচ্ছ¡সিত তার পরিবার। বাবা শাহ্ আলম ও মা রাশিদা বেগমের বক্তব্যেই ফুটে ওঠে এমন চিত্র।
২২ আগস্ট শনিবার সকালে নারায়ণগঞ্জের বন্দরের শাহী মসজিদ এলাকায় রায়হান কবিরের বাড়িতে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেন তারা। মা রাশিদা বেগম বলেন, ছেলেকে পেয়ে আমি মহা খুশি। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া। ছেলেকে ফেরত পাবো ভাবিনি। মিডিয়াসহ সবাই আমার ছেলের পাশে দাড়াইছে, তাই আমি আমার ছেলেরে নিজের কাছে পাইছি। সবার জন্য আমি দোয়া করি। সব মায়ের সন্তান ভালো থাকুক এই কামনা করি।
বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে রাশিদা বেগম বলেন, আমি তো আমার ছেলেকে ফেরত পাইছি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে আমি একটা কথা বলতে চাই। অনেক মায়ের ছেলে বিভিন্ন দেশের আনাচে-কানাচে পইড়া আছে। তাদের দেখার কেউ নাই। তাদের খোঁজও কেউ নেয় না। সবাই তো মায়ের সস্তান। প্রবাসী সরকার ও আমাদের দেশের সরকার যদি সুদৃষ্টিতে তাকায় তাহলে আমার মতো সব মায়ের মন ঠান্ডা থাকবে।
রাশিদা বেগম জানান, গত বছরের সেপ্টেম্বরের ৪ তারিখ ছুটি শেষে আবার মালয়েশিয়া যান রায়হান কবির। এরপর চলতি বছরের ২৪ জুলাই মালয়েশিয়া পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন তিনি। গ্রেফতারের খবর পাওয়ার পর থেকে মা ছিলেন দুশ্চিন্তায়।
তিনি আরো বলেন, এই কয়টা দিন আমার খুব খারাপ কেটেছে। কিছুই খাইতে পারি নাই। কোন খুদা ছিল না। এখন আমার ছেলে আসছে এই খুশিতেই আমার পেট ভরে গেছে। এই বলেই কাঁদলেন রায়হান কবিরের মা। বলেন, এই কান্না আমার আনন্দের কান্না। আমি আমার ছেলেকে কাছে পাইছি এতে আমি মহা খুশি।
তিনি আরও বলেন, এখন আমার ছেলে দেশে ফিরেছে। এখন সে যা ভালো বোঝে সেটাই করবে। তার কাজ কর্মে আমরা কোন বাধা দেব না। সে নিজেরটা ভালোই বোঝে। মানুষের জন্য যেভাবে আগেও কাজ করছে এখনও সেরকমই করবে।
বাবা শাহ্ আলম ফতুল্লার বিসিক শিল্প নগরীর একটি রপ্তানিমুখী কারখানায় চাকরি করেন। ছেলে ফিরবেন শোনার পর থেকে হতবিহŸল হয়ে পড়েন তিনি। শুক্রবার দিবাগত রাতেই ছুটে যান ঢাকায় এয়ারপোর্টে। রাত দেড়টার দিকে বাংলাদেশে নামার পর এয়ারপোটের সকল কার্যক্রম শেষে আড়াইটার দিকে ছেলেকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওয়ান হন শাহ্ আলম। বাড়িতে ফেরেন ভোর সোয়া ৫টায়।
সকালে রায়হান কবিরের বাবা শাহ্ আলম বলেন, ৩ জুলাই থেকে পলাতক ছিল আমার ছেলে। ২৪ জুলাই সে গ্রেফতার হলো। পরে শুনলাম রিমান্ডে দিয়েছে। অনেক মানসিক দুশ্চিন্তায় ছিলাম আমরা। এখন আমার ছেলে মুক্ত হয়ে ফিরে এসেছে, এর চেয়ে বেশি কিছু চাই না। সকলের দোয়া ও চেষ্টায় আমি আমার ছেলেকে ফিরে পাইছি। সকলকে ধন্যবাদ জানাই আমি।
রায়হান কবিরের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের শাহী মসজিদ এলাকায়। বাবা শাহ্ আলম ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীর এবিএফ নিটওয়্যার নামে একটি রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে রায়হান। পরে মালয়েশিয়া গিয়ে পার্টটাইম চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা করছিল সে। সেখানে বিএ পাস করার পর গত ঈদ-উল ফিতরের আগে একটি কোম্পানিতে স্থায়ী চাকরি হয় তার। কিন্তু কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরায় সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর বিপত্তিতে পড়েন রায়হান কবির। গ্রেফতার হতে হয় তাকে। গ্রেফতারের মাসখানেক পর ছাড়া পেয়ে দেশে ফিরেছেন রায়হান।