রাতে ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন ধর্ম প্রাণ মুসল্লিরা

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ রিফাত আল রহমান ) : আজ মঙ্গলবার পহেলা মে ১৪ শাবান দিবাগত রাতটিই পবিত্র শবে বরাত। দিবাগত রাতটি মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত মহিমান্বিত ও পবিত্র রাত । ফারসি শব শব্দের অর্থ রাত এবং বরাত অর্থ সৌভাগ্য। এ দুটি শব্দ নিয়ে শবে বরাত, অর্থাৎ সৌভাগ্যের রজনী। আরবিতে একে বলে লাইলাতুল বরাত।

আজ ১৪ শাবান মঙ্গলবার দিবাগত রাতটিই পবিত্র শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত। হিজরি বর্ষপঞ্জির শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত। মহান আল্লাহ তায়ালা এ রাতে বান্দাদের জন্য তাঁর অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন।

মহিমান্বিত এ রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিগত জীবনের সব ভুল-ভ্রান্তি, পাপ-তাপের জন্য গভীর অনুশোচনায় মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে সকাতরে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। নফল নামাজ, জিকির, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে বিনিদ্র রাত কাটিয়ে বিনম্র প্রার্থনা করেন ভবিষ্যৎ জীবনে পাপ-পঙ্কিলতা পরিহার করে পরিশুদ্ধ জীবনযাপনের জন্য। একই সঙ্গে প্রয়াত আত্মীয়-স্বজনসহ চির বিদায় নেওয়া মুসলিম নর-নারীর কবর জিয়ারত করে তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন

এ ছাড়া পাড়া-মহল্লার মসজিদগুলোতেও সন্ধ্যার পর থেকেই মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হবে। অনেকে গভীর রাত পর্যন্ত ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন থেকে শেষ রাতে সেহেরী খেয়ে পরদিন নফল রোজা রাখবেন। শাবান মাসের পরেই আসে পবিত্র মাহে রমজান। শবে বরাত মুসলমানদের কাছে রমজানের আগমনী বার্তা বয়ে আনে। শবে বরাতের মধ্য দিয়েই শুরু হয় রমজান মাসের সিয়াম সাধনার প্রস্তুতি। এ ছাড়া বাঙালি মুসলিম সমাজে শবে বরাতের একটি আনন্দঘন সামাজিক দিকও রয়েছে।

এদিন মুসলমানদের বাড়িতে সাধ্যানুযায়ী হালুয়া, পায়েস, রুটিসহ উপাদেয় খাবার রান্না করা হয়। এসব খাবার আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর বাড়িতে পাঠানো এবং গরিব-দুঃখীর মধ্যে বিতরণ করা হবে। অনেকে মুক্ত হস্তে দান-খয়রাত করবেন। বরাবরের মতোই শবে বরাতের পরদিন অর্থাৎ কাল বুধবার সরকারি ছুটি থাকবে। আজকের দিনটি উপলক্ষে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন নানা কর্মসূচি নিয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে রাত ব্যাপী ওয়াজ মাহফিল, দোয়া ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করেছে।

আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে পৃথিবীতে প্রেরণের শত বছর আগে তাদের রিজিক নির্ধারণ করে রাখলেও প্রতি বছর প্রতিটি মানুষের জীবনে যা ঘটবে, তা নির্ধারণ করা হয় পবিত্র শবে বরাতে। এ রাতে বান্দাহর জন্য আল্লাহ্ রহমতের ফল্গুধারা উন্মুক্ত থাকে। এ রাতকে হাদিস শরিফে লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান বা মধ্য শাবানের রজনী বলা হয়েছে।

সাহাবি-তাবিয়ীগণের যুগের অনেক পরে এ রাতকে লাইলাতুল বারাআত – বা বিমুক্তির রজনী বলে আখ্যায়িত করার প্রচলন শুরু হয়। মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিকগণ উল্লেখ করেছেন যে, ৪৪৮ হি. সনে বাইতুল মুকাদ্দাসে প্রথম এ রাতে প্রচলিত পদ্ধতিতে সালাত আদায়ের প্রচলন শুরু হয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৩/৩৮৮) তাই ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ এই রাতে নফল নামাজ, জিকির, কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে বিভিন্ন আমল করে থাকে। তাই এই রাতে যে কাজ গুলো একদমই করা যাবে না, তা হলো-

১। কারো ইবাদতে বাধা দেয়া যাবে না।

২। পটকা, আতশ বাজি ফোটানো যাবে না।

৩। সারা রাত এমন আমল করা যাবে, যাতে পরে ঘুমিয়ে গেলে ফযরের নামাজ কাযা হয়ে যায়। সুতরাং মনে রাখতে হবে আজকের রাতের ইবাদত হলো নফল আর ফযরের নামাজ হলো ফরয।

৪। অনেক যুবক বন্ধু আমল বাদ দিয়ে মসজিদে এই রাতে সবাই মিলে পিকনিক করে থাকে। এটা না করাটাই ঠিক।

৫। এই রাতে স্বামী-স্ত্রীকেও সংযত হয়ে থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া ইসলাম বিরোধী সকল কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।

add-content

আরও খবর

পঠিত