নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ১০ দিনের ব্যবধানে পৃথক স্থান থেকে উদ্ধারকৃত অজ্ঞাত এক নারী ও দুই শিশুর লাশের রহস্য উদঘাটন করতে পেরেছে পুলিশ। তাঁরা তিনজনই একই পরিবারের মা ও সন্তান বলে পুলিশের তদন্তে বের হয়ে এসেছে। নিহতরা হলো মাসুদের স্ত্রী নোয়াখালীর সেনবাগের পদুয়া এলাকার আঞ্জুবী আক্তার (২৮) ও তার দুই মেয়ে ৭ বছর বয়সী মাঈদা আক্তার ও ১৫ মাস বয়সী মাহি। এই তিনটি লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। পুলিশ প্রশাসনে শুরু হয় ব্যাপক তোলপাড়। তবে পুলিশ অধিক গুরুত্ব দিয়ে এই রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে। তদন্ত বের হয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, মূলত স্বামীর দ্বিতীয় বিয়েকে কেন্দ্র করে প্রথম স্ত্রী ও তার দুই মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যার পর তাদের লাশ বস্তায় ভরে ফেলে দেয়া হয়েছিল পুকুরে। এ নৃশংস হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ছিলো স্বামী মাসুদ দেওয়ান, দ্বিতীয় স্ত্রী শোভা আক্তার ও চাচাতো শ্যালক সবুজ ওরফে সোহেল। ঘটনাটিকে লোমহর্ষক বলেই অবিহত করেছেন পুলিশ।
ইতমধ্যেই এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত মাসুদ দেওয়ান (২৬) চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানার দক্ষিণ শাহআলী এলাকার খলিলুর রহমানের ছেলে, তার দ্বিতীয় স্ত্রী শোভা আক্তার ও চাচাতো শ্যালক নেত্রকোনার খালিয়াজুরী থানার ফতুয়া এলাকার স্বপন মিয়ার ছেলে সবুজ ওরফে সোহেল। এদরে মধ্যে ঘাতক দ্বিতীয় স্ত্রী শোভাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ২৪ জুন রোববার সন্ধ্যা ৬ টায় এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে লোমহর্ষক এই হত্যাকান্ডের তথ্য বিবরনিতে আরো জানা যায়, মাসুদ দেওয়ান সিদ্ধিরগঞ্জের আটি হাউজিং এলাকাস্থ কবির মিয়ার বাড়ির ৬ তলার পশ্চিম দক্ষিণ ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়। সে তার প্রথম স্ত্রী আঞ্জুবী আক্তারের মতে তারই বান্ধবী শোভা আক্তারকে বিয়ে করে। এই বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া লেগেই ছিল।
ওই ঝগড়ার জের ধরে সে তার দ্বিতীয় স্ত্রী শোভা আক্তার ও চাচাতো শ্যালক সবুজ ওরফে সোহেলকে সঙ্গে নিয়ে প্রথম স্ত্রী আঞ্জুবী আক্তারকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ওই পরিকল্পনা মোতাবেক গত ৯ জুন তার দ্বিতীয় স্ত্রী শোভা আক্তার ও চাচাতো শ্যালক সোহেল মিলে প্রথমে আঞ্জুবী আক্তারকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে বড় মেয়ে মাঈদা ও ছোট মেয়ে মাহিকেও শ্বাসরোধে হত্যা করে। এরপর তাদের লাশ বস্তায় ও ড্রামে করে সিদ্ধিরগঞ্জের একটি নির্জন স্থানে ও একটি পুকুরে ফেলে দেয়া হয়।
এদিকে রোববার বিকেলে এ ঘটনায় জড়িত গ্রেফতারকৃত সবুজ ওরফে সোহেল নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমামের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। এছাড়া অপর ঘাতক স্বামী মাসুদ দেওয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হলে আদালত শুনানীর জন্য সোমবার তারিখ নির্ধারণ করেছে।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক অঞ্চল) মো. শরফুদ্দিন জানান, লোমহর্ষক এ ঘটনায় আমাদের পুলিশ অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। পৃথকভাবে লাশ উদ্ধারে পর দুইজনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। ঘাতক দ্বিতীয় স্ত্রী শোভাকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
প্রসঙ্গত, ১১ জুন বিকেল সোয়া ৫টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের ভাঙারপুল এলাকার ডিএনডির ইরিগেশন খালের কাছ থেকে একটি ড্রামের ভেতর বস্তায় প্যাচানো অজ্ঞাত নারী (২৯) এর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর ঈদের দিন ১৬ জুন সিদ্ধিরগঞ্জের অটি হাউজিং এলাকার আলী হোসেনর মাছের খামার থেকে বস্তাবন্দি ৬ মাস বয়সী একটি কন্যা শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। এর ঠিক তিনদিনের মাথায় একই খামার থেকে একটি ব্যাগের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয় ৫ বছর বয়সী আরও একটি কন্যা শিশুর লাশ।