রমজানে নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় থাকবে : সংসদে প্রধানমন্ত্রী

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্টার ) : দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধের বিস্তারিত পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারের এসব কার্যক্রম গ্রহণের ফলে বাজারে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে এবং আশাকরি আসন্ন পবিত্র রমজান মাসেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।

আজ ৩০শে মার্চ বুধবার জাতীয় সংসদে ফখরুল ইমামের (ময়মনসিংহ) এক প্রশ্নের জবাবে কথা বলেন তিনি। ফখরুল ইসলাম জানতে চান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুগ্রহ করিয়া বলিবেন কি, বর্তমানে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি দ্রব্য সামগ্রীর মূল্য লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পাইয়া চলিয়াছে, যেই কারণে সাধারণ মানুষ চোখে অন্ধকার দেখিতেছে, তাই বাজার নিয়ন্ত্রণ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করিবার লক্ষ্যে সরকার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করিয়াছে কিনা, করিলে তাহা কী ?

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ সবধরনের পণ্যসামগ্রীর মূল্যের সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণপূর্বক তা সহনীয় পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যে সরকার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে দেশের সব সিটি করপোরেশন, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ইউনিয়ন পর্যায়ে নিম্নআয়ের এক কোটি পরিবারের কাছে রমজান শুরুর আগে রমজানের মাঝামাঝি মোট দুইবার টিসিবির পণ্য সামগ্রী ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলা প্রশাসন উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে নির্ধারিত মানদণ্ডের ভিত্তিতে টিসিবির পণ্য সামগ্রী বিক্রি করা হবে। তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় আগের মতো ট্রাক সেলের মাধ্যমে পণ্যসামগ্রী ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে নিয়মিত সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ সে অনুযায়ী প্রতিবেদন উপস্থাপনের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা পূর্বাভাস সেল কর্তৃক প্রতিদিন বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন, টিসিবি কৃষিবিপণন অধিদপ্তর থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ মূল্য পরিস্থিতি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি সরবরাহ অবস্থা পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এলসির তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকেও আমদানি তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এসব তথ্য বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পর্যালোচনা করে পণ্যভিত্তিক প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নেতৃত্বে সব জেলা উপজেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্য প্রতিমাসে জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। টাস্কফোর্স কমিটি জেলা উপজেলা বাজারে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। এসব মোবাইল কোর্ট পণ্য ক্রয়বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী কর্তৃক ভোক্তাদের ওজনে কম না দেওয়া, অধিক মুনাফার মানসিকতা পরিহার, দোকানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের তালিকা টাঙানো, খাদ্যদ্রব্যে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহাররোধ বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতারোধে জরিমানা আরোপ করে থাকে।

তিনি আরও বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসহ সব পণ্যের মূল্য নিয়ে কেউ যেন মনোপলি বা অলিগোপলি অবস্থার সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন সৃষ্টি করা হয়েছে। লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনও কাজ করে যাচ্ছে, দেশীয় শিল্পকারখানার উৎপাদন স্বাভাবিক রাখাসহ উৎপাদিত পণ্যের সরবরাহ বিপণন স্বাভাবিক রাখতে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে নিরবছিন্ন যোগাযোগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। খাদ্য শস্যের বাজারদর নিয়ন্ত্রণ ঊর্ধ্বগতি রোধের লক্ষ্যে চালকল পর্যায়ে ধান মজুতের সর্বোচ্চ পরিমাণ দৈনিক আট ঘণ্টা হিসাবে পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতার পাঁচগুণের স্থলে তিনগুণে হ্রাস করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা তার সরকারের সংক্রান্ত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, পাইকারি বাজারগুলোতে মজুতদারি এবং বিভিন্ন চালকলে অতিরিক্ত চাল মজুতের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে যাতে খাদ্যশস্যের মূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে লক্ষ্যে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে ১০০টি বৃহৎ আকারের চালকলের মিলগেটের মূলা নিয়মিত সংগ্রহ করে ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অভিযান এবং কেউ অবৈধ মজুতের মাধ্যমে বাজারে যাতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে, সে লক্ষ্যে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ১০ টাকা দরে চাল বিক্রির খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে কর্মাভাবকালীন পাঁচ মাস (সেপ্টেম্বরনভেম্বর মার্চএপ্রিল) সারাদেশের গ্রামাঞ্চলে ৫০ লাখ অতিদরিদ্র পরিবারের মধ্যে মাসিক ৩০ কেজি করে চাল বিক্রয় কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে, ওএমএস কর্মসূচির আওতায় বিক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বাড়িয়ে বর্তমানে দুই হাজার ১৩টি কেন্দ্রে ওএমএসের খাদ্য শস্য বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ওএমএস কর্মসূচি মহানগর জেলা পর্যায়ের পৌরসভাগুলোতে পরিচালনা করা হলেও বর্তমানে তা সম্প্রসারিত করে সব পৌরসভায় পরিচালনা করা হচ্ছে। সরকারের এসব কার্যক্রম গ্রহণের ফলে বাজারে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে এবং আশাকরি আসন্ন পবিত্র রমজান মাসেও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।

add-content

আরও খবর

পঠিত