মার্কেটে ক্রেতা হয়রানী রোধে তৎপর রয়েছে পুলিশ

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : শহরের চাষাড়া সমবায় মার্কেটে ইভটিজিং এর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঈদকে সামনে রেখে সরগরম এ মার্কেটটি। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু বখাটেরা নারীদেরকে উক্তক্ত করার কাজে লিপ্ত হয়েছে। তবে এ অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে সয়ং কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে এবং পুলিশকে অবগত করলে শুরু হয় তৎপরতা।

সমবায় মার্কেটে ক্রেতারা যাতে কোন প্রকারের হয়রানি কিংবা ইভটিজিং এর শিকার না হন সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহন করেছে সমবায় মার্কেট কর্তৃপক্ষ। কেনা-কাটা করতে আসা ক্রেতাদের কোন প্রকার ডাকাডাকি করা থেকেও বিরত থাকতেও হুশিয়ারী করে দেয়া হয়েছে।

এদিকে ঈদকে কেন্দ্র করে ইভটিজিং ও ক্রেতাদের হয়রানি রোধে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছিলেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম। এরই ধারাবাহিকতায় ৬ই মে বুধবার দুপুরে সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) জয়নাল আবেদীন সমবায় মার্কেট পরিদর্শন করেন।

এ সময় তিনি সমবায় মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিসান আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন দোকান মালিকদের ইভটিজিং এর ব্যাপারে সজাগ থাকার পরামর্শ দেন। কোন রকম নারী হয়রাানির কথা ভবিষ্যতে শোনা গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান পরিদর্শক জয়নাল আবেদীন।

এ ব্যপারে সমবায় মার্কেট কমিটির সভাপতি খাজা এবায়দুল হক (টিপু) বলেন, আমাদের মাসিক মিটিংয়ে এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মার্কেটের সুনাম অক্ষুন্ন রেখে সকলকে ব্যবসা করার আহ্বান জানিয়েছি। তারপরেও এ ধরনের কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিবো।

জানা গেছে, বান্ধবীর সাথে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন স্বপনা। দোকানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সেলসম্যানের বাজে মন্তব্যের শিকার হতে হয় ওই ২০ বছর বয়সী তরুণীকে। হতে হয় লাঞ্ছিনার শিকারও। সোমবার দুপুরে নগরীর সমবায় মার্কেটের জাবির ফ্যাসনের চিত্র এটি।

স্বপনা জানান, দোকানে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ওই দোকানী। না যাওয়ায় বাজে মন্তব্য শুরু করে। এক পর্যায়ে গায়ে হাত দেওয়ারও চেষ্টা করে। শুধু স্বপনার সাথেই নয়, এ ধরণের ঘটনা শুক্রবার আরো এক নারীর সাথে ঘটেছে।

প্রতক্ষ্যদর্শী অপর এক নারী অভিযোগ করে বলেন, সমবায় মার্কেটের প্রথম গলিতে (বধূ সাজ) নামের শাড়ীর দোকানে প্রতিনিয়তই এমন কেরে যাচ্ছে। ঘটনার  দিন শাড়ীর দোকানের সামনে দিয়ে উপরে উঠতে যাবো, এমন সময় ঐ দোকানের সামনে দিয়ে এক আপু যাচ্ছিলো (যথেষ্ট পর্দা করা ছিল ওনার, শুধু ফেসটা খোলা ছিল)। ঐ আপুকে দেখে (বধূ সাজ) নামক শাড়ীর দোকানের একজন কালো কওে ছেলে ও বড়-ছোট ৩-৪ জন কর্মচারীরা তাকে অনেক বাজে কথা বলে টিজ করে। উনি হয়ত খেয়াল করেনি বা খেয়াল করেও ঐদিকে তাকায়নি কিন্তু আমি স্পষ্ট শুনেছি।

তিনি আরোও বলেন, আমি এখন পর্যন্ত প্রায় যতবারই ঐ মার্কেটে গিয়েছি ততবারই দেখেছি এ দোকান থেকে মেয়েদের এমনভাবে টিজ করতে। খোজ নিয়ে জানা গেছে যে ওই দোকান থেকে প্রায় অনেক নারী এমন ইভটিজিং এর শিকার হয়েছে। তারা প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো তাদের কে বিভিন্ন ধরনের গালিগালাজ ও হুমকি প্রদান করেছে।

আরো জানা গেছে, কোনো কোনো দোকানে ক্রেতারা পোশাকের দরদাম কম বলায় এবং দর বলতে না চাওয়ার কারণে বিক্রেতাদের আক্রশের শিকার হচ্ছেন। কখনো কখনো হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে। আর নিয়মিতই আশালীন আচরণ তো আছেই। তবে আশালীন আচরণের শিকার অধিকাংশ সময়েই বেশি হতে হচ্ছে নারী ক্রেতাদের। পণ্য না কিনে যদি কোনো নারী দোকান হতে বের হয়ে যান, ঠিক তখনই দোকানীদের অশালিন মন্তব্য তাদের দিকে ছুড়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এমন দৃশ্য অহরহই ঘটছে নগরীর ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত বিপণী দোকানগুলোতে।

সূত্র মতে, গত বছরও ১৪ই জুন এমনই একটি ঘটনা ঘটে সমবায় মার্কেটে। ওই সময় বিক্রেতার হাতে ক্রেতা নারী ও পুরুষ শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হয়। এ ঘটনা থানা পুলিশ পর্যন্তও গড়িয়েছিলো। তবে পুলিশ দোকানিকে (স্যরি) বলার মাধ্যমেই এ ঘটনার সমাধান করলেও লাঞ্ছনার শিকার শীলা আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, আমি ন্যায্য বিচার পাইনি।

ওই সময় মার্কেটের বিভিন্ন দোকানের মালিকরা জানিয়েছেন, যারা এধরনের ঘটনা ঘটায়। তার মার্কেটের স্থায়ী সেলসম্যান বা কর্মচারী না। বেশির ভাগই মৌসুমী দোকানী। ঈদ মৌসুমে বেচা-বিক্রীর বেড়ে যাওয়া তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে ইভটিজিং এর শিকার ওই নারী নারায়ণগঞ্জ প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন, এবং এমন ঘটনা যাতে আর ভবিষ্যতে না ঘটে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করার জন্য অনুরোধ করেছেন।

এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি জানার পর থেকেই আমার সদর থানার পুলিশ সদস্যদের পাঠিয়েছি তারা নজরধারীতে রেখেছে। মার্কেটের দোকান মালিক ও কর্মচারী সহ কমিটির লোকদেরকেও সতর্ক করা হয়েছে। তারপরেও কেউ যদি  হয়রানীর শিকার হয় তাহলে সরাসরি সদর থানায় অভিযোগ জানানোর অনুরোধ রইলো। এছাড়াও জননিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

add-content

আরও খবর

পঠিত