নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বিশেষ প্রতিবেদক ) : নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণা করার পর থেকেই সাংগঠনিক দক্ষতা ও দলীয় কর্মসূচি পালনের পারদর্শীতায় প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হলেও, বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বিভেদের রাজনীতি দমাতে হয়েছেন অনেকটাই ব্যর্থ।
প্রায় ৫ বছর ১ মাস বয়সের গন্ডি পার করা মহানগর বিএনপির কমিটির মধ্যে থাকা অনেক নেতারই রয়েছে ক্ষমতাশীনদের সাথে প্রকাশ্যে আতাতের অভিযোগ। আবার অনেক নেতাই নিজের অবস্থানকে তুলে ধরতে রাজপথে গড়ে তুলেছিলেন বিভেদের সূচনা।
এছাড়াও অঙ্গসংগঠন যেমন মহানগর যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, শ্রমিক দল, কৃষক দল সহ অন্যান্য সংগঠন গুলোর মধ্যে বিভেদের ধারাবাহিকতা ছিলো চলমান। তবে পদ পদবি রদবদলের পরে এই বিভেদ কিছুটা নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়েছে মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দ।
লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ২০১৭ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দরা মহানগর বিএনপির আংশিক কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেন সাবেক সাংসদ এ্যাড. আবুল কালামকে আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আসেন এটিএম কামাল।
এছাড়াও সিনিয়র সহ সভাপতি হিসেবে এ্যাড. সাখাওয়াত হোসেন খাঁন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সবুর খান সেন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু। পরবর্তীতে এ্যাড. আবুল কালাম ও সাধারণ সম্পাদক এটি এম কামাল আংশিক কমিটিকে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট পুর্নাঙ্গ কমিটিতে রুপ দিতে সফল হয়েছে।
তবে সেই সময় কমিটিতে থাকা সিনিয়র সহ সভাপতি এ্যাড. সাখাওয়াত হোসেন খাঁন কয়েকজন সহ সভাপতিকে নিয়ে আলাদা ব্যানারে রাজপথে নিজের অবস্থানকে শক্তিশালী করে তুলেন। সেই সাথে তৎকালিন সময় মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আসলেও নিজের দাম্ভিকতার উজর দিয়ে পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে।
মহানগর যুবদলের ব্যানারে আলাদা ভাবে রাজনীতি শুরু করেন। পাশাপাশি মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবুল কাউছার আশা মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও, সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত রানা দল ছুট হয়ে আলাদা ব্যানারে রাজনীতি করতে গিয়ে নিজের পদকে হারিয়ে ফেলেন। আর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জিয়াউর রহমান জিয়া সভাপতি আবুল কাউছার আশার মতই তার নেতৃত্বে মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
ঠিক একই কায়দায় বিভেদের রাজনীতিতে জরিয়ে পরেন মহানগর শ্রমিক দল, ছাত্রদল, কৃষক দল সহ অন্যান্য সংগঠন গুলো। যেখানে মহানগর শ্রমিক দলের আসলাম দলছুট নেতাদের কাতারে রাজনীতি করলেও সদস্য সচিব আলী আজগর, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মনির মল্লিক সহ অন্যান্য নেতারা মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে সাংগঠনিক কার্যক্রম এখন চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে, মহানগর ছাত্র দলের সভাপতি সাহেদ আহমেদ আলাদা ব্যানারে রাজনীতি করলেও সাধারণ সম্পাদক মমিনুর রহমান বাবু সহ অধিকাংশ নেতাই মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যান।
তবে দিন বদলের সাথে রদবদলের ধারাবাহিকতায় নিজের দাম্ভিকতার কারনে শেষ বেলায় পদ হারিয়ে কোণ্ঠাশা খোরশেদ এখন নিরবতার সীমানায় আবদ্ধ। আর সেখানে নতুন করে স্থান নিয়েছেন মহানগর যুবদলের আহবায়ক হিসেবে মমতাজ উদ্দিন মন্তু, আর সদস্য সচিব পদে আছেন মনিরুল ইসলাম সেন্টু। তারা আহবায়ক কমিটি আসার পর থেকেই মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
এছাড়াও কৃষক দল সহ অন্যান্য সংগঠন গুলোর কমিটি থাকলেও সেটা কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দদের কাছ থেকে পদ পদবি আনতে সক্ষম হলেও সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই চোখে পরার মত।
অন্যদিকে, রদবদলের তালিকায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটি এম কামাল বহিষ্কার হওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আব্দুস সবুর খান সেন্টু। আর সিনিয়র সহ সভাপতি এ্যাড. সাখাওয়াত হোসেন খাঁন বিভেদের রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছেন প্রায় বছর খানেক ধরে। সদ্য অনুষ্ঠিত হওয়া কেন্দ্রীয় কর্মসূচি গুলোতে তাকে মহানগর বিএনপির মূল ব্যানারে দেখা যাচ্ছে।
মহানগর বিএনপির কমিটির ৫ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও বিভেদের রাজনীতিকে ঐক্যবদ্ধতার কাতারে আনতে কিছুটা সফল হলেও, সেটা আরও ভাল ফলা ফল হতে পারতো। এর জন্য দলের হাই কমান্ডের নিদের্শ কতটা পালন করেছেন সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বা শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে কতটুকু ব্যবস্থা নিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সেটাও দেখার বিষয়। তবে সাংগঠনিক দক্ষতা ও দলীয় কর্মসূচি পালনের পারদর্শীতায় অনেকটাই এগিয়ে মহানগর বিএনপি।