নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( প্রেস বিজ্ঞপ্তি ) : নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক শহরের খ্যাতিনামা বিদ্যাপীঠ মর্গ্যান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে একটি ভবন ভেঙ্গে ফেলা এবং স্কুলের নির্মানাধীন ভবন ঘেষে দেয়াল নির্মানের প্রতিবাদ এবং স্কুলের জমি ফিরে পেতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করার ঘোষনা দিয়েছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। তবে এ সিদ্ধান্তের প্রতি দ্বিমত পোষন করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, রাস্তায় নেমে আন্দোলন করা তোমাদের কাজ নয়। তোমরা তোমাদের লেখাপড়া সঠিক ভাবে চালিয়ে যাও। সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা আছি। আন্দোলনই সব সমস্যার সমাধান নয়। যে কোন সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। এ বিষয়ে পরবর্তী করনীয় সম্পর্কে আমরা সবাই বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবো। প্রয়োজনে আনোয়ার ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা তোমাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবো। তবে আমি তোমাদের কথা দিচ্ছি সাইন্সল্যাব, কম্পিউটার ল্যাব, পাঠাগার, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম সহ আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার সকল সুযোগ সুবিধা রেখে মর্গ্যান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে নারায়ণগঞ্জে শ্রেষ্ঠ স্কুলে রূপান্তরিত করা হবে।
আমি ঘোষনা দিচ্ছি এই স্কুলে ১০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করা হবে। সরকারী অনুদান, স্কুলের নিজস্ব তহবিল, বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের সহযোগীতা এবং প্রয়োজনে নিজস্ব তহবিল থেকে যৌথভাবে এ অর্থ জোগাড় করা হবে। এক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন থেকেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নে আর্থিক সহযোগীতা করতে পারেন। স্কুলটিকে জেলার শ্রেষ্ঠ স্কুলে রূপান্তরিত করতে আমি বৃহত্তর দেওভোগ এলাকার আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি সহ দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের সহযোগীতা কামনা করছি।
শুক্রবার ৮জুন বিকেলে মর্গ্যান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক প্রাচীন দ্বিতল ভবন ভেঙ্গে ফেলায় করনীয় সম্পর্কে মতবিনিময় এবং ইফতার ও দোয়া মাহফিলের পূর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি সেলিম ওসমান এসব কথা বলেন।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে উক্ত মত বিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, সাবেক ফুটবলার দেলোয়ার হোসেন চুন্নু, মহানগর আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি চন্দন শীল, ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাইফুল্লাহ বাদল, নাগরকি কমিটির অ্যাডভোকেট এবি সিদ্দিক, জেলা কৃষক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রোকনউদ্দিন আহম্মেদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিএম আরাফাত, স্কুলটির প্রধান শিক্ষক সহ পরিচালনা কমিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এবং স্কুলে কয়েকশত শিক্ষার্থীদের অভিভাবক সহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিরা।
সেলিম ওসমান আরো বলেন, আমি আগেও বলছি আবারো বলছি এই মাসে কোন রাজনীতি নয়। কোন উত্তেজনা নয়। আমি আনোয়ার ভাইয়ের প্রতি অনুরোধ রাখবো আপনি উত্তেজিত হবেন না। যদি স্কুলের কাছে কাগজপত্র থাকে তাহলে আপনারা আইনগত ব্যবস্থা নিবেন। আইনগত ভাবেই সমাধান করা যেতে পারে।
সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষন করে তিনি বলেন, স্কুলটির ভবনটি যদি সিটি কর্পোরেশনের জমিতে হয়েও থাকে তবুও আমি বলবো এভাবে রাতের আধারে ভবনটি ভেঙ্গে ফেলা উচিত হয়নি। ভবনটি ভাঙ্গার আগে আলোচনা করা যেত। তাছাড়া জমিটি যদি সিটি কর্পোরেশনের হয়ে থাকে তবে সেটার মালিক কোন ব্যক্তি নন, ওই জমির মালিক জনগন। আর সিটি কর্পোরেশনের মালিকও জনগন। তাই জনগনের জায়গায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসা হতেই পারে।
এতে কোন বাধা নাই। তাছাড়া সরকার যদি কোন জমি অধিগ্রহন করেন তাহলে ওই জমির স্থাপনার ক্ষতিপূরন দিয়ে থাকেন। শত বছর সময় ধরে এই স্থানে স্কুলের ভবনটি ছিলো। জমি যদি সিটি কর্পোরেশনের হয়ে থাকে তাহলে স্কুলের ভবনের ক্ষতিপূরন অবশ্যই স্কুল প্রাপ্য। আমি সকলের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ করবো কোন ঝগড়া বিভেদ নয়। আসেন সবাই একত্রে বসে ঐতিহ্যবাহী এই মর্গ্যান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে নারায়ণগঞ্জের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে গড়ে তুলি। আর এরজন্য সবথেকে বেশি প্রয়োজন সকলের সার্বিক সহযোগীতা। তাই আমি আবারো সকলের সহযোগীতা কামনা করছি।
এর আগে স্কুল কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন তার বক্তব্যে ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অতীতের গৌরবময় ইতিহাসের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মর্গ্যান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ একটি ঐতিহ্যবাহী নারীশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১০৮ বছর আগে ১৯১০ সালে তৎকালীন পৌর প্রশাসক মাইকেল মর্গ্যান লেডি মর্গ্যানের অনুপ্রেরণায় আর্থÑসামাজিকভাবে অনগ্রসর অত্র এলাকায় নারীশিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে তাঁর নামানুসারে এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে কলেজ শাখা যুক্ত হওয়ায় বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি অত্র এলাকায় নারীশিক্ষা প্রসারের অন্যতম প্রধান বিদ্যাপীঠ হিসেবে বিবেচিত।
অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান কৃষি মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, বর্তমান সংসদ সদস্য বেগম ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা, সাবেক সংসদ সদস্য বেগম সামছুন্নেহার খাজা আহসান উল্লাহ, আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষিবিদ ড. মাহফুজা খানম, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভিসহ অনেকেই দেশÑবিদেশে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে একুশে পদকপ্রাপ্ত (মরণোত্তর) ভাষাসৈনিক মমতাজ বেগমসহ অনেক কৃতবিদ্য শিক্ষাবিদ অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রতিষ্ঠাকালে মাইকেল মর্গ্যান অত্র প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯১ শতাংশ জায়গা বরাদ্দ দিলেও বর্তমানে দখলকৃত জায়গার পরিমান মাত্র ১২৩ শতাংশ। বরাদ্দকৃত উক্ত জায়গার পূর্ব দিকে অবস্থিত দ্বিতল ভবনটি প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর নিচতলা ছাত্রীদের টিফিন তৈরীর স্থান ও স্টোর রুম এবং দোতলা শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
গত ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর নাসিক কর্তৃক উক্ত ভবনটি অপসারনের জন্য প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের বরাবরে একটি প্রত্র প্রেরণ করা হয়। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ০৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নাসিকের মেয়রের সাথে সাক্ষাৎ করে। তারা আনুপূর্বিক ঘটনার বিবরণ দিয়ে বিষয়টির একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য মেয়রকে আন্তরিক অনুরোধ জানান।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালীন বিগত ২০১৮ সালের ১৮ মে রাতের আঁধারে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক শতাব্দী প্রাচীন ভবনটি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়।
ঘটনার আকস্মিকতায় বিহ্বল শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকবৃন্দ বিষয়টির আশু প্রতিকারের প্রত্যাশায় গত ২০ মে নাসিকের মেয়র (যিনি এক সময় অত্র প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী ছিলেন) সমীপে স্মারকলিপি প্রদান করেন। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, তিনি এ ব্যাপারে আদৌ কোনো গুরুত্ব না দিয়ে তার কাছে সাক্ষাৎপ্রার্থী শিক্ষার্থীদের সাথে অত্যন্ত রূঢ় আচরণ করেন। অনন্যোপায় হয়ে বিগত ২৮ মে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সম্মানিত জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে এতদসংক্রান্ত একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের পূর্বপাশে একটি ০৮তলা ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে। বিস্ময়কর হলেও সত্য ইতোমধ্যে উক্ত ভবন ঘেষে নাসিক কর্তৃক সীমানা দেয়াল তুলে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে পবিত্র মাহে- রমজান উপলক্ষে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর এর পরে শ্রেণি কার্যক্রম চালু হলে প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩৫০০ ছাত্রীর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা ও টিফিনের আয়োজন করা নিতান্তই অসম্ভব হয়ে পড়বে ।
এমতাবস্থায়, অত্র প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মতবিনিময়ের প্রয়োজনে দলমত নির্বিশেষে সকল সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবি, সেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ এলাকার শিক্ষানুরাগী সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিবর্গকে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গনে সাদর আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আশা করছি, আপনার সুচিন্তিত পরামর্শ বিদ্যমান সংকট উত্তরণে আমাদের সঠিক পথনির্দেশনা দেবে।