বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে আড়াইহাজার আওয়ামী লীগে !

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( আড়াইহাজার প্রতিনিধি ) : আড়াইহাজারে উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মুজাহিদুর রহমান হেলো সরকার এবার ভোল্ট পাল্টে নতুন রুপ ধারণ করেছেন বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নানা মুখরুচক আলোচনা হচ্ছে। অনেকের মতে সুবিধাবাদী এই নেতা নিজের আখেঁরগুচাতে বারবার ভোল্ট পাল্টে যাচ্ছেন। এতে অনেকেই তার উপর অস্থা হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছে। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী অ্যাডভোকেট ইকবাল পারভেজের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। তিনি (হেলো সরকার) বিভিন্ন সময়ে নানা তির্যকভাষায় স্থানীয় সংসদ নজরুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে।

তবে কম যায়নি এমপিও। তিনিও হেলোকে উদ্দেশ্য করে নানাভাষায় বক্তব্য দিয়ে ছিলেন। সে সময় উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের জন্য তিনব্যক্তির নাম সুপারিশ করে কেন্দ্রে পাঠালেও এমপি নজরুল ইসলাম বাবু হেলো সরকারের নাম সুপারিশের এ তালিকায় রাখেনি। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সুপারিশে তিনি দলীয় মনোনয়নের টিকেট পায়। এরই মধ্যে ইকবাল পারভেজের কাছ থেকে নানাভাবে সুবিধা আদায় করে নেন হেলো। এখন এমপি বাবুর কাছ থেকে সুবিধা আদায়ে তিনি বেশ তৎপর হয়ে উঠেছেন বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। ২৬ নভেম্বর স্থানীয় দুবাই প্লাজায় অনুষ্ঠেয় সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত একটি বক্তব্য পাঠ করে শোনান হেলো সরকার। তাতে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মিজানুর রহমান পাগলা বাচ্চু ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইকবাল পারভেজকে অনুপ্রবেশকারী ও দুস্কৃতিকারী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এমনকি তাদের বহিস্কারের দাবী তোলা হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে এক পর্যায়ে হেলো সরকার অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। এ সময় গোপালদী পৌরসভার মেয়র আব্দুল হালিম সিকদারের ওপর হঠ্যাৎ চটে যান হেলো। এনিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে তোলপাড়া শুরু হয়েছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, সাংবাদিক সম্মেলনে দেয়া হেলো সরকারের বক্তব্য সবাইকে রীতিমত অবাক করেছে। নীতিনৈতিকতা বির্সজন দিয়ে তিনি সুবিধা পেতে বারবার ভোল্ট পাল্টাচ্ছেন। এতে তার ওপর নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছে।

এদিকে গত কয়েক দিন ধরে এমপি নজরুল ইসলাম বাবুকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুর্নীতির সংবাদ প্রচার হয়ে আসছে। তবে তিনি (বাবু) কোনো দুর্নীতি করেনি বলে দাবী করে আসছেন। একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, দুর্নীতির সংবাদ প্রচারের পেছনে জেলা আওয়ামী লীগের এ দুই নেতাসহ থানা আওয়ামী লীগেরও কাউকে কাউকে সন্দেহ করা হচ্ছে। এতে অনেকের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না। তবে পেছন থেকে অনেকেই কলকাঠি নাড়ছেন।

জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান পাগলা বাচ্চু বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। মাসে মুক্তিযোদ্ধা ভাতাই আমার একমাত্র আয়। স্থানীয় এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর চাপে পড়েই আমার বিরুদ্ধে হেলো সরকারসহ চেয়ারম্যানরা সাংবাদিক সম্মেলন করতে বাধ্য হয়েছে। তিনি আরও বলেন, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই আড়াইহাজার থানা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। ত্যাগী ও পরিচ্ছন্ন নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করে তাদের হাতে নেতৃত্ব দেয়া হবে। রাজনীতিতে শেষ বলতে কিছু নেই। সময় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

মুজাহিদুর রহমান হেলো সরকার বলেন, ইকবাল পারভেজ সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান খানের মুহরি হিসেবে একসময় কাজ করতো। সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীর দাপটেই বয়স জালিয়াতি করে রাজউকের সহকারি পরিচালক হিসেবে চাকরিতে যোগ মূল্যবান সম্পত্তি বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা বানিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যায়। অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মিজানুর রহমান পাগলা বাচ্চুকে জাসদের গণবাহিনীর কমান্ডার ছিলেন বলে সাংবাদিক সম্মমেলনে দাবী করা হয়। ইকবাল পারভেজ ও মিজানুর রহমান গাপলা বাচ্চু খোলস পাল্টে বিশেষ সুবিধা দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে পদ বাগিয়ে নেয়। তারা এখন নামে-বেনামে মাননীয় সংসদের নামে দুদকে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। হেলো সরকার তার লিখিত বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে দুস্কৃতিকারী হিসেবে উল্লেখ করে তাদের বহিস্কার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেছেন।

প্রসঙ্গত. ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার বেলা ১১টায় জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মিজানুর রহমান পাগলা বাচ্চু ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইকবাল পারভেজের বহিস্কার দাবী করে সাংবাদিক সম্মলেন করা হয়েছে। আড়াইহাজার পৌরসভা বাজারে অবস্থিত দুবাই প্লাজার চতুর্থ তলায় আড়াইহাজার ক্লাব কক্ষে সাংবাদিক সম্মলেনের আয়োজন করা হয়। এ সময় একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান মুজাহিদুর রহমান হেলো সরকার। উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সদস্য সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া, খোরশীদ আলম সরকার, সদস্য মাহবুবুর রহমান রোমান, আড়াইহাজার উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, আড়াইহাজার পৌরসভার মেয়র সুন্দর আলী, গোপালদী পৌরসভার মেয়র আব্দুল হালিম সিকদার প্রমুখ।

add-content

আরও খবর

পঠিত