নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বন্দর প্রতিনিধি ) : ব্রহ্মপুত্র নদ দখলের সংবাদ প্রকাশের পর সমালোচনার ঝড় বইছে। বন্দরের লাঙ্গলবন্দ ব্রহ্মপুত্র নদের কোল ঘেষে অবস্থিত সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের মহাতীর্থ স্নানস্থল। লাঙ্গলবন্দ এলাকায় আদি ব্রহ্মপুত্র নদ ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাট করে দখলে নিয়ে যাচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল।
ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের লাঙ্গলবন্দ ব্রিজের উত্তর পাশে নদের পশ্চিম তীরে ইউনিয়ন পরিষদের গ্রামীন অবকাঠামো রাস্তা রাতের আধারে ভেকু দিয়ে কেটে নদীতে বাধ তৈরী করে বালু ভরাট করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ তাবলিগ জামায়াতের এক নেতার খরিদা সম্পত্তির সীমানা থেকে নদীতে ৫ বিঘা জমি ভরাটে ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার মিশনে নেমেছে এ প্রভাবশালী মহলটি।
ব্রহ্মপূত্র নদ ভরাট করে দখলে নিয়ে যাচ্ছে এ বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করেও কোনো ফল পাচ্ছে না বলে স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্রহ্মপূত্র নদের তীরে অবস্থিত শ্রীশ্রী ললিত সাধুর আশ্রম। আশ্রমটি বন্দর উপজেলার ধামগড় ইউপি কামতাল গ্রামের অবস্থিত। ওই আশ্রম থেকে গ্রামীন অবকাঠামো রাস্তাটি ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের লাঙ্গলবন্দ ব্রিজ পর্যন্ত সংযুক্ত।
গ্রামীন অবকাঠামো এ রাস্তা মহজমপুর তাওলাদের বাড়ি থেকে ব্রিজ পর্যন্ত রাতের আধার ভেকু দিয়ে কেটে ব্রহ্মপূত্র নদে বাধ তৈরী করে। এখন নদ দখলে নিয়ে ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাট করা হচ্ছে। ব্রহ্মপূত্র নদের উপরে লাঙ্গলবন্দ ব্রিজ। ব্রিজের ২নম্বর পিলার বরাবর নদীতে বাধ দিয়ে সীমানা প্রাচির তৈরী করে দখলে নেয় এবং বালু ভরাট করছেন। এসময় ড্রেজার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানাযায় গৌরাঙ্গ বাবু নামের এক স্থানীয় হিন্দু ব্যক্তি এখানে বালু ভরাট কাজ করাচ্ছেন।
গৌরাঙ্গ বাবুর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাকসুদ নদীতে বালু ভরাট কাজ করছেন। আমি জমির মালিক পক্ষে বালু বুঝে নেওয়ার দায়িত্বে আছি। এরপর তিনি উত্তেজিত হয়ে উঠেন এবং বলেন, এছাড়াও আর কিছুই বলার নাই। সহস থাকলে যা কিছু বলার চেয়ারম্যান মাকসুদের সঙ্গে বলেন।
মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন মাকসুদ মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি ব্রহ্মপূত্র নদ দখল বিষয়টি এড়িয়ে যান। বলেন নারায়ণগঞ্জের তাবলিগ জামায়াতের নেতা শাহ আলম ও ফজজলুল হক, তারা তাদের জমিতে বালু ভরাটের কাজ দেন। তারপর থেকে তিনি ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাট করছেন। এ বলেই মোবাইল ফোন কেটে দেন।
নারায়ণগঞ্জ তাবলিগ জামায়েত নেতা শাহ আলম ও ফজলুল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। এসময় শাহ আলম বলেন, নদী দখল ও ভরাটের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। ফজলুল হক জানান, বালু ভরাট করে রাস্তাটি ঘুরেয়ে দেয়ার জন্য মাকসুদ চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে নদী ভরাট করা হচ্ছে না। সেই দাগে আমার জমি রয়েছে। তাই দখলে নেয়া হচ্ছে।
বন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পিন্টু বেপারী জানান, নদী দখল হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নদী ভরাট করে দখলে নেওয়া হলে আইননুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। নারায়ণগঞ্জ বিআইডব্লএ অতিরিক্ত সহকারী পরিচালক সহিদুল্লাহ জানান, লাঙ্গলবন্দ হিন্দু সম্প্রদায়ের এক মহাতীর্থ স্নানের স্থান। এ এলাকাটি একটি গুরুত্ব পূর্ণ এলাকা। এখানে নদী দখল করে বালু ভরাট করা বে-আইনি। লাঙ্গলবন্দ এলাকাটি জেলা প্রশাসক নিয়ন্ত্রন করে থাকেন। তিনি হস্তক্ষেপ করলে বিআইডব্লএ ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, লাঙ্গলবন্দ ব্রিজের নিচের জমিগুলো অন্যত্রে বিক্রি করার জন্য মালিক পক্ষের সঙ্গে চুক্তি করে গৌরাঙ্গ বাবু ও চেয়ারম্যান মাকসুদ। এ চুক্তির পর নদী ভরাট শেষে ভরাট জমি বুঝিয়ে দিতে পারলেই ১০ কোটি টাকা বানিজ্য। প্রশানের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে হিন্দু ব্যক্তিদের নামে ভূয়া দলিল তৈরী করে নদী দখল করে ভরাটের মিশনে নেমেছেন মাকসুদ চেয়ারম্যান।